বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২

চালে চালবাজি: কারসাজি কোথায়

মোস্তফা কামাল
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর -০০০১, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৭:২২ এএম
চালে চালবাজি: কারসাজি কোথায়

এদের একজনও অদেখা-অচেনা-অজানা নয়। অদৃশ্যও নয়। একদম দৃশ্যমান। তবু বাজারে, বিশেষ করে চাল বাজারে চালবাজি করে চলছে অবাধে, ফ্রিস্টাইলে, ড্যাম কেয়ারে। এদের চালবাজিতে এই ভর মৌসুমেও অযৌক্তিকভাবে বাড়ছে চালের দাম। দেশের অস্থিতিশীলতা তাদের কাছে আশীর্বাদের মতো। এ সুযোগে ‘দাম আরও বাড়বে’, এমন গুজবও রটাচ্ছে। গুজবের জেরে বেড়েছে ধান-চালের মজুতপ্রবণতা। অল্প সরবরাহ রেখে, দাম বাড়িয়ে ফায়দা লুটছে এ চালবাজরা। এক বছরে মোটা চাল ব্রি-২৮ প্রতি কেজিতে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল চালও কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ঈদের পর থেকে এখন পর্যন্ত চিকন চালের দাম বস্তায় ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সামনে আরও বাড়বে বলে গুজব চাউর হয়েছে।

বাজারে এখন পুরোনো চাল নেই। পুরো চালই আমন মৌসুমের। প্রকৃতপক্ষে ধান-চালের কোনো সংকট নেই। সরবরাহে ঘাটতি-কমতি নেই। গুদামও চালে ভরা। তারপরও সরবরাহ কমিয়ে চালের দাম চড়ানো হচ্ছে। বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রতিদিনই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে চালের দাম। কৃষক, মিলার, ফড়িয়া ব্যবসায়ী, পাইকারি-খুচরা বিক্রেতা কেউই কথা খোলাসা করছে না। কথা বলছে ইনিয়েবিনিয়ে। আমনের নতুন চাল বাজারে আসার আগ থেকেই দাম চড়ানোর ক্ষেত্রটা তৈরি করেছে তারা। আমন মৌসুমে নতুন চাল বাজারে ওঠার পর রীতিমতো কোপ মারছে। এবার গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক প্রচার রয়েছে যে, ভারত ধান-চাল দেবে না, বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য কৃষক, ফড়িয়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে ধান কিনে মজুত করার প্রবণতা ভর করেছে।

মোকামেই ধান মেলে না অবস্থা করতে পেরেছে এরা। এর সুবাদে শুরু থেকে এবার ধানের দাম বেশি। গেল এক-দেড় সপ্তাহের ব্যবধানেই প্রতি মণে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ধানের দাম বাড়ার কারণে স্বাভাবিক কারণেই চালের দাম বাড়াতে হয়েছে। দেশে চালের বড় মোকাম কুষ্টিয়া, নওগাঁ, দিনাজপুরসহ বড় বড় মোকামেও একই অবস্থা। সংকটের আতঙ্ক তৈরি করে বাজার বাড়ানোর প্রবণতা নতুন নয়। চাল নিয়ে এ প্রবণতা এবার ব্যবসায়ীদের মধ্যে খুব বেশি। আবার দাম বাড়বে এমন গুজব কিছু ব্যবসায়ীও ছড়াচ্ছে, যাতে তারা ভবিষ্যতে ভালো দাম হাতাতে পারে।

মিলমিশ এবং বোঝাপড়ায় এরা এ কাজে ভীষণ অভিজ্ঞ। বিগত সরকারের আমলে হাত পাকানো বা মদদপুষ্ট এ চালবাজরা এখন অধরাভাবেই চালাচ্ছে তাদের ক্রিয়াকর্ম। বাজারে নতুন করে চালের চাহিদা বাড়েনি। পুরোটাই কারসাজি। এর অংশীজন বেড়ে গেছে। নতুন করে বহু মানুষ স্টক বিজনেসে ঢুকেছে। তাদের চোখ খাদ্যপণ্যে। ধান, চাল, গম, ভুট্টাসহ নানা খাদ্যশস্য মজুত করছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা সবসময়ই পণ্যের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারায় থাকে। সময়-সুযোগ পেলেই তারা দাম বাড়িয়ে দেয়। চালের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে চালকল মালিক ও ব্যবসায়ী একে অন্যকে দুষলেও আসলে উভয়ই দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। তারা সম্মিলিতভাবে সিন্ডিকেট সদস্য। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও তাদের মানসিকতা বদলায়নি। আর খাদ্যপণ্য নিয়ে চালবাজি-কারসাজি তুলনামূলক নিরাপদ। এ ছাড়া সবজি, মাংসসহ অন্যান্য পণ্যের বাজারে যেমন নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়, চালের বাজারে তেমনটা হয় না। এখানে ভোক্তা অধিকারসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থার মনিটরিং দুর্বল। সরকার তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে শুল্ক কমিয়েছে, আমদানির অনুমতি দিয়েছে। তবে অনুমতির চার ভাগের এক ভাগ চালও আমদানি হয়নি। কারণ সিন্ডিকেটে মূলহোতাদের বেশিরভাগই আমদানিকারক। কিছু চালকল মালিক, বড় ব্যবসায়ী ও করপোরেট হাউস মিলেছে তাদের সঙ্গে। পাইকার, সরবরাহকারীসহ খুচরা ব্যবসায়ীরা তো সঙ্গী হিসেবে আছেই। পরস্পরের প্রতি দোষারোপের সমান্তরালে তাদের সবারই কিছু অজুহাত আছে। যার পুরোটাই আসলে চাতুরী। পাইকারদের দাবি, বর্তমানে গাড়ি ভাড়া বেড়েছে, ধানের দামও বেড়েছে। এ ছাড়া চালকলে খরচ বেশি পড়ায় দামে প্রভাব পড়েছে।

রাইস মিল মালিকদেরও অজুহাত আছে। তারা বলছে, হঠাৎ চালের সরবরাহ কমার কারণে দাম বেড়েছে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো চাষিদের অগ্রিম টাকা দিয়ে চাল কিনে নিচ্ছে। এতে মিল মালিকরা ধান পাচ্ছে না। তাদের হাতে হাতে এমন অনেক অজুহাত। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ধানের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। এতে চালের দাম কমার পরিবর্তে উল্টো দাম চড়ানোর জন্য অজুহাতের অন্ত নেই। চালের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। তারা সংঘবদ্ধ নয়। তাদের কোনো সিন্ডিকেট নেই। বোবা কান্নাই তাদের নিয়তি। চালের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে পুঁজিবাদবিরোধী ‘প্রগতিশীলদের’ একটা বিশ্লেষণ আছে। তারা মনে করে, দেশের চালের বাজারে বড় বড় প্রতিষ্ঠান ঢুকেছে। বিপুল পরিমাণ ধান মজুত করে বাজার নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা তাদের রয়েছে। তারা চাইলেই ব্যাংকের ঋণ পায়। তাদের কারসাজিতেই চালের দাম ভরা মৌসুমেও ঊর্ধ্বমুখী। খুচরা ও পাইকারদের যুক্তি আরেক দিকে। তারা বলছে, অতিরিক্ত দামের জন্য দায়ী মিল মালিকরা। হয়তো কারও কারও কথায় যুক্তি আছে বা সবার কথায়ই যুক্তি আছে। যার যার জায়গায় তারা ভীষণ যুক্তিবাদী। বড় পুঁজি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে চাল কিনে রাখে গুদামে। সাময়িক মজুতদারিও করে কেউ কেউ।

এর বিপরীত বাস্তবতা হচ্ছে, পরিবারের খাওয়ার অংশটুকু বাদে বোরো মৌসুমের উৎপাদিত ধান আর কৃষকের কাছে নেই। ধান চলে গেছে ফড়িয়া, পাইকার, মজুতদার ও মিলারদের কাছে। আগেও যেভাবে ধানের সব স্তরের মজুতদার ও মিল মালিকরা মিলেমিশে চালের দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে, এবারও ঠিক তাই করছে। এবার আরেকটু ব্যতিক্রম। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখা বোরো মৌসুমকেই টার্গেট করা খুব বাজে বার্তা দিচ্ছে। অন্যান্যবার মৌসুমের ধান ওঠার কয়েক মাস পর ধীরে ধীরে চালের দামটা বাড়ে; এবার যেখানে নতুন ধানের ব্যাপক সরবরাহের মধ্যেই দামটা বাড়তে শুরু করেছে। নমুনা কিন্তু বাজে সিগন্যাল দিচ্ছে।

আমাদের সমাজে ‘মোটা ভাত, মোটা কাপড়’—এ প্রবাদটি বহুল প্রচলিত। কিন্তু মোটা ভাত কিংবা মোটা কাপড় এই দুই-ই মোট জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য অংশের পক্ষে জোগাড় করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত সরকারের বাণিজ্য, খাদ্য, কৃষি, পরিকল্পনামন্ত্রীসহ অনেক মন্ত্রীই বাজারের সিন্ডিকেটের কারসাজির কথা অকপটে স্বীকার করেছেন এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট নিয়ে তাদের বক্তব্য যেন ওই স্বেচ্ছাচারী-লুটেরাদের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণের মতো মনে হয়েছে। বারবার বিগত সরকারের মদদপুষ্টদের দোষারোপ আর মানুষ শুনতে চায় না। ক্ষমতায় এখন দলীয় সরকার নেই। সেই সূত্রে তাদের দলীয় কর্মী পালনের এজেন্ডা নেই। এ ছাড়া সিন্ডিকেটের হোতাদের হাত কোনোভাবেই আইনের হাতের চেয়ে শক্তিশালী হতে পারে না। সিন্ডিকেটের শিকড় বা গাঁথুনি যত গভীরেই হোক, তা ধরে টান দেওয়া এ সরকারের জন্য কঠিন হওয়ার কথা নয়। কী কারণে চালের বাজার আবার হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠল—এ প্রশ্নের জবাব কর্তৃপক্ষের যেমন খুঁজতে হবে, তেমনি অনতিবিলম্বে চালের দাম নিয়ন্ত্রণেও কঠোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অতি মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের প্রতি কোনোরকম অনুকম্পা দেখানো কাম্য নয়। সরকারি গুদামে চালের মজুত পর্যাপ্ত। বাজারেও কোনো সংকট নেই। তারপরও সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি থাকবে কেন সরকার?

চালের দাম আর বাড়বে না বলে কথা দিয়েছেন উপদেষ্টাদের কয়েকজন। তার ওপর বিশ্ববাজারে চালের দাম যখন কমতির দিকে, তখন দেশের বাজার কেন ঊর্ধ্বমুখী, এ প্রশ্নের জবাব নেই। চালের যে মূল্যবৃদ্ধি অযৌক্তিক, তাও বলছেন। তাহলে অ্যাকশনে যেতে সমস্যা কোথায়? উপদেষ্টারা যখন চালের দাম নিয়ে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছেন, তখন প্রকৃত বাজার পরিস্থিতি উঠে এসেছে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে। না, উপদেষ্টাদের বয়ান অনুযায়ী শুধু সরু চালের দাম বাড়েনি। বেড়েছে মোটা চালের দামও। উপদেষ্টা বা ধনাঢ্যদের কাছে তিন বা পাঁচ টাকা বৃদ্ধি হয়তো কিছু্ই নয়, কিন্তু গরিব মানুষের জন্য অনেক কিছু। কেন ধরা হচ্ছে না চালবাজ-কারসাজিওয়ালাদের? ২০২২ সালের পরের দুই বছরে ক্রমাগত উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের মানুষের ক্রয়সক্ষমতা কমেছে, এতে নতুন করে ৭৮ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমায় এসেছে আর প্রায় ১ কোটি মানুষ দারিদ্র্যের ঝুঁকির মধ্যে এসেছে। এর মধ্যে আগে দরিদ্র ছিল—এমন মানুষের মধ্যে ৩৮ লাখ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে এসেছে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ১ কোটি ৭৮ লাখ মানুষ নতুন করে হয় দরিদ্র হয়েছে বা দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে। ইউএনডিপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৪ কোটি ১৭ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে। তাদের মধ্যে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের অবস্থা গুরুতর। এ অবস্থায় চালের দাম নিয়ন্ত্রণে না আনলে উপরোক্ত অঙ্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ধারণা করা যায়?

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন

মন্তব্য করুন

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পাশে
প্রয়োজনীয় তহবিলের অভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলোর (এমই) বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের সরবরাহ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ক্রমবিকাশমান বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান পর্যায় এবং ক্ষুদ্র উদ্যোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে সমন্বিত সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে এ তহবিল ঘাটতি কমানোর এখনই উপযুক্ত সময়। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি শীর্ষ পর্যায়ের উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) তিন দশকের বেশি সময় ধরে নিজ কর্মসংস্থান এবং মজুরিভিত্তিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে টেকসই দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বিভিন্ন আর্থিক এবং অ-আর্থিক পরিষেবার সমন্বয়ে ক্ষুদ্র উদ্যোগ উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ সত্ত্বেও ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলোর গড় তহবিল ঘাটতি প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ‘ক্রেডিট এনহ্যান্সমেন্ট স্কিম (সিইএস)’ নামে পিকেএসএফ একটি নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য, ব্যাংক এবং অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলোর ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধি করা। ক্ষুদ্র উদ্যোগের গুরুত্ব ও সম্ভাবনা: বাংলাদেশে মোট ৭.৮ মিলিয়ন উদ্যোগের মধ্যে ৮৯ শতাংশই ক্ষুদ্র উদ্যোগ, যারা মোট কৃষিবহির্ভূত কর্মসংস্থানের প্রায় ৫৬ শতাংশ সৃষ্টি করে। সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো স্থানীয় কাঁচামালের মূল্য সংযোজন করে এবং দক্ষ ও অদক্ষ উভয় ধরনের জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। একটি টেকসই জাতীয় অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য স্থানীয় অর্থনীতিতে এসব উদ্যোগের অবদান অপরিহার্য। ক্ষুদ্র উদ্যোগে নিযুক্তদের বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। এসব জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে আয় বৈষম্য হ্রাস এবং বহুমাত্রিক দারিদ্র্য দূরীকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে পারে এই ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো। প্রায় ৭০ শতাংশ ক্ষুদ্র উদ্যোগ গ্রামীণ এলাকায় অবস্থিত। গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে এই উদ্যোগগুলো গ্রামীণ-শহর অভিবাসন হ্রাস করতে এবং গ্রামীণ-শহর অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে সহায়তা করে। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা নারী মালিকানাধীন বা তাদের দ্বারা পরিচালিত, যা জেন্ডার সমতা বৃদ্ধি করে এবং সম্পদের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আর্থিক ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি করে। বাংলাদেশে যুব বেকারত্বের হার প্রায় ১৫.৭৪ শতাংশ। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের ফল হিসেবে প্রতি বছর ২০ লাখের বেশি তরুণ কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। তাদের জন্য যথাযথ কর্মসংস্থানের বিষয়টি দেশের আর্থসামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে স্টার্টআপ, ইনকিউবেশন সার্ভিসের মতো নতুন নতুন কর্মসূচিসহ ক্ষুদ্র উদ্যোগ উন্নয়ন কার্যক্রম সম্প্রসারণ এ কর্মসংস্থানের চাহিদা মেটাতে এক কার্যকর মাধ্যম হতে পারে। তহবিল ঘাটতি: অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান সত্ত্বেও অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোগ এখনো প্রয়োজনীয় আর্থিক ও অ-আর্থিক পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। যারা সেবা পাচ্ছে, তাদের জন্যও তা পর্যাপ্ত নয়। আইএনএম, বিশ্বব্যাংক, আইএফসি এবং এসক্যাপের মতো প্রতিষ্ঠানের গবেষণা অনুযায়ী, মূলত মূলধনের অভাবই ক্ষুদ্র উদ্যোগ খাতের প্রবৃদ্ধি ও উৎপাদনশীলতার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। যদিও প্রতি বছর এ খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ছে। তবুও চাহিদার তুলনায় সরবরাহ অপ্রতুল। এসক্যাপের ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলোর গড় অর্থায়ন ঘাটতি প্রায় ৮৬ শতাংশ, যা নতুন ও উদ্ভাবনী অর্থায়ন পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি স্পষ্ট করে। বিদ্যমান আর্থিক অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা: বাংলাদেশে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান অবকাঠামো দেশব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলোর আর্থিক চাহিদা পূরণে পুরোপুরি উপযোগী নয়। বিদ্যমান কাঠামোতে বিপুলসংখ্যক ছোট ছোট ঋণ বিতরণ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আর্থিকভাবে লাভজনক নয়। এখন পর্যন্ত এমএফআইগুলো ক্ষুদ্র উদ্যোগ খাতে সবচেয়ে বড় অর্থায়নকারী। তাদের নিজস্ব উৎস হতে অর্থায়নের সক্ষমতা সীমিত, যা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। পিকেএসএফ তিন দশক ধরে সহযোগী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে দেশব্যাপী ক্ষুদ্র উদ্যোগ উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে। পিকেএসএফ একটি কার্যকর মূল্যায়ন ও তদারকি পদ্ধতি এবং শক্তিশালী এমএফআই রেটিং ব্যবস্থা ব্যবহার করে, যার মাধ্যমে ঝুঁকি নিরূপণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দক্ষতার সঙ্গে এমএফআইগুলোকে অর্থায়ন করতে পারে। তবে তহবিলের যে বড় ঘাটতি রয়েছে, তা পিকেএসএফের পক্ষে একা দূর করা সম্ভব নয়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পিকেএসএফের অনেক সহযোগী সংস্থাকে ঋণ দিয়ে থাকে। কিন্তু ব্যাংকগুলো পিকেএসএফের মতো এমএফআই অর্থায়নে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান নয়। আর্থিক প্রতিবেদন ও মাধ্যমিক তথ্য-উপাত্তের ওপর নির্ভর করার কারণে তারা অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিমাণে অর্থায়ন করতে সক্ষম হয় না। পিকেএসএফ ও ব্যাংকের মধ্যে একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব এ ঘাটতি পূরণ করতে পারে, ব্যাংকের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে এবং সব অংশীজন বিশেষ করে মাইক্রোএন্টারপ্রাইজগুলোর তহবিল স্বল্পতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস করতে পারে। পিকেএসএফের নতুন উদ্যোগ: এই প্রেক্ষাপটে পিকেএসএফ পরীক্ষামূলকভাবে একটি ‘ক্রেডিট এনহ্যান্সমেন্ট স্কিম (সিইএস)’ চালু করেছে, যা মূলত একটি ঝুঁকি ভাগাভাগির পদ্ধতি এবং প্রচলিত ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের চেয়ে ভিন্ন। ব্যাংক কর্তৃক সহযোগী সংস্থাগুলোকে অর্থায়নের ক্ষেত্রে সিইএস বিভিন্ন স্তরে ব্যাংকের ঝুঁকি হ্রাস করবে— এক. ক্রেডিট গ্যারান্টি: ব্যাংক কর্তৃক সহযোগী সংস্থাগুলোকে তাদের ক্ষুদ্র উদ্যোগ অর্থায়ন কার্যক্রমে প্রদানকৃত ঋণ বকেয়া পড়ার যে ঝুঁকি, তার একটি অংশ পিকেএসএফ বহন করবে। দুই. ঋণ মূল্যায়ন ও সার্টিফিকেশন: পিকেএসএফ তার মানসম্পন্ন রেটিং ব্যবস্থার মাধ্যমে সহযোগী সংস্থাগুলোর সার্বিক পাফরম্যান্স ও ঋণ প্রাপ্যতা মূল্যায়ন এবং ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য তাদের সার্টিফাই করবে। তিন. মাঠপর্যায়ে তদারকি: সিইএসের আওতায় ব্যাংকের অর্থায়নকৃত ঋণের ব্যবহার পিকেএসএফ মাঠপর্যায়ে নিবিড়ভাবে তদারকি করবে। পিকেএসএফের অনেক সহযোগী সংস্থা ব্যাংকের জামানতের শর্ত (যেমন—স্থায়ী আমানতের ওপর লিয়েন বা স্থাবর সম্পত্তির জামানত) পূরণে অক্ষম। ফলে তারা ক্ষুদ্র উদ্যোগ অর্থায়ন কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে পারে না। সিইএস এ ধরনের সীমাবদ্ধতা দূর করে ব্যাংক অর্থায়নে তাদের প্রবেশাধিকারের সুযোগ বৃদ্ধি করবে। বিশেষ করে ছোট এবং দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার সংস্থাগুলোর জন্য এটি বিশেষভাবে সহায়ক হবে। সাধারণত ব্যাংকগুলো বড় সংস্থাকে ঋণ দিতে পছন্দ করে। কারণ, এতে ঝুঁকি কম বলে বিবেচিত হয়। সিইএস ব্যাংক ঋণের সুবিধা আকার ও ভৌগোলিক অবস্থান নির্বিশেষে সব সংস্থার মধ্যে ন্যায্য বণ্টনে সহায়তা করবে। প্রত্যাশিত ফলাফল ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: সিইএস এমন একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম হবে, যেখানে ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো ঋণের প্রবাহ বাড়াতে পিকেএসএফ, ব্যাংক ও এমএফআই একসঙ্গে কাজ করবে। প্রতিষ্ঠানিক প্রতিবন্ধকতা ও আর্থিক ঝুঁকি কমিয়ে সিইএস ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষুদ্র উদ্যোগ খাতে বড় পরিসরে অর্থায়নের সুযোগ দেবে। এই স্কিমটি প্রত্যাশিতভাবে: আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি করবে; প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলোকে সহায়তা করবে; আয় বৈষম্য হ্রাস করবে; অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো বিকাশের মাধ্যমে সিইএস উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে, কর্মসংস্থান তৈরি করে এবং দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রেক্ষাপট পাল্টে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। লেখক: সমন্বয়কারী, এমএফসিই প্রকল্প, পিকেএসএফ
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পাশে
বিএনপির যত চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন হলো—আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য অগ্রগতি কতটুকু? বিশেষ করে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া গণআন্দোলনের পর দেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের আশা উঁকি দিচ্ছে, যার প্রেক্ষাপটে এ প্রশ্নটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিএনপির অনেক নেতা যেখানে প্রকাশ্যে ৯০ শতাংশ আসনে বিজয়ের আত্মবিশ্বাসের দাবি করছেন, সেখানে নবাগত ছাত্র-রাজনৈতিক দল এনসিপির নেতারা পাল্টা বিশ্লেষণে বলছেন, বিএনপি বড়জোর ৫০ থেকে ১০০টি আসন পেতে পারে। এ বিতর্কের মধ্যে রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা, সামাজিক বাস্তবতা এবং আঞ্চলিক রাজনৈতিক ডায়নামিকস—সবকিছুকে ছাপিয়ে ‘পরিস্থিতি’ শব্দটিই হয়ে উঠছে নির্ধারক ফ্যাক্টর। গত ২৮ জুন চরমোনাই পীরের নেতৃত্বে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আহ্বানে আয়োজিত মহাসমাবেশে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি ইসলামপন্থি দল ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক (PR)’ পদ্ধতির দাবি তোলে। যদিও বাংলাদেশের সাংবিধানিক কাঠামো ও নির্বাচন পরিচালনার প্রচলিত রীতির আলোকে এ পদ্ধতি এখনই বাস্তবায়নযোগ্য কি না আলোচনার বিষয়; তথাপি এ প্রস্তাব একটি নতুন রাজনৈতিক ন্যারেটিভ তৈরি করার চেষ্টা বলেই বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে, বিএনপির ‘সুইং ভোটার’ বা নিরপেক্ষ ভোটারদের মনোজগতে একটি প্রভাব ফেলতেই এ কৌশল ব্যবহার হচ্ছে—এটি অস্বীকার করা যাবে না। এ প্রেক্ষাপটে বিএনপি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে—তারা ‘ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট (FPTP)’ ব্যবস্থাকেই সমর্থন করছে এবং এটিকে তারা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, দ্রুত ফলপ্রসূ ও প্রত্যক্ষ গণমতের প্রতিফলনকারী একটি ভোটিং মেকানিজম হিসেবে তুলে ধরছে। তাদের মতে, এ ব্যবস্থার মাধ্যমেই একটি গ্রহণযোগ্য ও সময়োপযোগী নির্বাচন সম্ভব। কিন্তু বাস্তব রাজনীতিতে আরও বড় প্রশ্ন দাঁড়ায়—যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচন বর্জন করে কিংবা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ না করে, তাহলে বিএনপির বিজয় কতটা অর্থবহ হবে? এবং তারা আসলে কার সঙ্গে নির্বাচন করতে প্রস্তুত? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির সামনে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সিদ্ধান্ত হলো—এনসিপি বা জামায়াতের মতো রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে প্রকাশ্য জোট না গড়ে, বরং আদর্শিকভাবে ঘনিষ্ঠ ও মধ্যপন্থি দলগুলোর সঙ্গে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনভিত্তিক ঐক্য গড়ে তোলা। এতে যেমন দলটির ‘ন্যাশনাল একসেপ্টেবিলিটি’ অক্ষুণ্ণ থাকবে, তেমনি ‘আনুপাতিক ভোট ব্যবস্থার’ নামে নির্বাচনী বিলম্বের মতো যে কোনো কৌশল মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো—দলীয় শৃঙ্খলা ও মাঠপর্যায়ের নিয়ন্ত্রণ। লন্ডন থেকে পরিচালিত এই রাজনৈতিক কাঠামো বাস্তব পরিস্থিতিতে কতটা কার্যকর হচ্ছে—সে প্রশ্ন এখনো বহাল। দলের একাংশে কোন্দল, চাঁদাবাজি, এমনকি সহিংসতার অভিযোগও রয়েছে, যা বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে, বিশেষত তরুণ ভোটারদের মাঝে গঠিত হওয়া নতুন আশা-ভরসার প্রেক্ষাপটে। তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ৩২.৫% ভোট পেয়েও মাত্র ৩০টি আসনে জয়লাভ করেছিল। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ ৪৮.৪% ভোটে পেয়েছিল ২৩০টি আসন। এতে বোঝা যায়—ভোটের শতকরা হার ও আসনপ্রাপ্তির মধ্যে সরল সম্পর্ক নেই; বরং সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থাপনাই ফলাফল নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখে। অতএব, বিএনপির ৯০ শতাংশ আসনের প্রত্যাশা আপাতদৃষ্টিতে অতিরঞ্জিত মনে হলেও ১৫০ থেকে ১৭০টি আসন পাওয়া অসম্ভব নয়—যদি নির্বাচন সত্যিকার অর্থেই অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়। এ মুহূর্তে বিএনপির সবচেয়ে বড় শক্তি হতে পারে একটি সাহসী রাজনৈতিক ন্যারেটিভ, যা দমননীতি সত্ত্বেও টিকে থাকার প্রতিচ্ছবি। তবে তা কেবল প্রতিরোধ দিয়ে নয়, দায়িত্বশীলতা, পরিকল্পনা ও অংশগ্রহণমুখী কৌশলের মাধ্যমে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে যদি একটি স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হয়—তাহলে প্রথমবারের মতো বহু ভোটার তাদের প্রকৃত রাজনৈতিক মতপ্রকাশের সুযোগ পাবেন। তখনই বোঝা যাবে, বিএনপি কতটা জনপ্রিয়, আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন কতটা অর্থবহ, জামায়াত ও এনসিপির বাস্তব উপস্থিতি কতখানি এবং নতুন প্রগতিশীল দলগুলোর গ্রহণযোগ্যতা আদৌ তৈরি হয়েছে কি না। রাজনীতিতে গালভরা বক্তব্যের চেয়ে বেশি জরুরি হলো বাস্তব প্রস্তুতি, নীতিভিত্তিক অবস্থান এবং জনমুখী প্রতিশ্রুতি। কে কয়টি আসন পাবে বা কে জামানত হারাবে—এসব নিয়ে আলোচনা চলতেই থাকবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত দেবে জনগণ, ব্যালটের মাধ্যমে। আর সেই রায়কে গ্রহণযোগ্য করতে হলে চাই একটি অবাধ, প্রতিযোগিতামূলক এবং সব অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। তবে যদি আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগবিহীন হয়, তাহলে বিএনপির জন্য অতীতের শিক্ষা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কীভাবে জনপ্রিয়তার চূড়ায় থেকেও আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল, সেই অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে বিএনপিকে তার রাজনৈতিক নীতি ও সাংগঠনিক কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। তাহলেই দলটি আস্থার প্রতিদান দিতে পারবে এবং দেশ পেতে পারে একটি কার্যকর, টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। সবশেষে, যদি আমরা সত্যিই গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে চাই, তাহলে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার লোভ পরিহার করে ক্ষমতার ভারসাম্য ও রাজনৈতিক অংশীদারত্ব নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি। পরস্পরের বিরুদ্ধে কথার লড়াই নয়; বরং নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা জনতার কোর্টে তুলে দেওয়াই হতে পারে গণতন্ত্রের নতুন সূচনা। আর সেই কোর্টের নামই—ভোটার। লেখক: দুবাই প্রতিনিধি, দৈনিক কালবেলা
বিএনপির যত চ্যালেঞ্জ
সনদ-সংস্কার: হনুজ দূর অস্ত
জুলাই সনদ ও সংস্কার নিয়ে লিখতে গিয়ে সাংবাদিক সাহিত্যিক যাযাবরের বহুল পঠিত ‘দৃষ্টিপাত’ গ্রন্থের কথা মনে পড়ে গেল। হয়তো কিছুটা প্রাসঙ্গিক হবে বিবেচনায় এখানে সেই কিংবদন্তি কাহিনির প্রসঙ্গ টেনে আনা। কাহিনি মোটামুটি এরকম— পাঠান সম্রাট আলাউদ্দিন খিলজি সে সময়ের দিল্লির একপ্রান্তে মসজিদ তৈরি করেছিলেন। তার মৃত্যুর দীর্ঘকাল পর এক ফকির এলেন সেই মসজিদে। নাম নিজামউদ্দিন আউলিয়া। জায়গাটি তার পছন্দ হলো। সেখানেই রয়ে গেলেন এই মহাপুরুষ। ক্রমে ছড়িয়ে পড়ল তার পুণ্যখ্যাতি। দ্রুতবেগে বেড়ে গেল তার অনুরাগী ও ভক্তের সংখ্যা। স্থানীয় গ্রামে পানির অভাবের দিকে তার দৃষ্টি আকৃষ্ট হলো। তিনি মনস্থির করলেন একটি দীঘি খননের। যেখানে তৃষ্ণার্তরা পানি পাবে, গ্রামের বধূরা কলসি ভরবে এবং নামাজের আগে অজু করে পবিত্র হবেন মসজিদের প্রার্থনাকারীরা। কিন্তু তার সংকল্প বাধা পড়ল অপ্রত্যাশিতরূপে। প্রবল পরাক্রান্ত সুলতান গিয়াসউদ্দিন তোগলকের বিরক্তিভাজন হলেন (তার দৃষ্টিতে সামান্য ফকির) নিজামউদ্দিন আউলিয়া। আউলিয়ার দীঘি কাটাতে মজুর চাই প্রচুর। গিয়াসউদ্দিনের নগর তৈরি করতেও হাজার হাজার মানুষ দরকার। অথচ দিল্লিতে মজুর সংখ্যা অত্যন্ত কম। দুই জায়গায় প্রয়োজন মেটানো অসম্ভব। অত্যন্ত স্বাভাবিক, সুলতান চাইলেন মজুররা আগে শেষ করবে তার কাজ, ততক্ষণ অপেক্ষা করুক ফকিরের খয়রাতি খনন। কিন্তু রাজার জোর অর্থের আর আউলিয়ার জোর হৃদয়ের, যার কোনো সীমা নেই। মজুররা দলে দলে কাটতে লাগল নিজামউদ্দিনের দীঘি। সুলতান হুংকার ছাড়লেন... ‘তবে রে...’ কিন্তু তার ধ্বনি আকাশে মেলাবার আগেই এত্তেলা এলো আশু কর্তব্যের। বাংলাদেশে বিদ্রোহ দমনে ছুটতে হলো অনতিবিলম্বে। তোগলকের নগর প্রাচীর রইল অসমাপ্ত। অবশেষে সুলতানের ফেরার সময় হলো। প্রমাদ গুনলেন নিজামউদ্দিনের অনুরাগীরা। তারা নিজামউদ্দিন আউলিয়াকে অনতিবিলম্বে নগর ত্যাগ করে পালানোর পরামর্শ দিল। আউলিয়া মৃদু হেসে তাদের নিরস্ত করলেন—‘দিল্লি দূর অস্ত’, অর্থাৎ দিল্লি অনেক দূর। এদিকে সুলতান প্রতিদিন যোজন পথ অতিক্রম করে নিকট থেকে নিকটবর্তী হচ্ছেন রাজধানীর পথে। প্রতিদিন ভক্তরা অনুনয় করে আউলিয়াকে। তিনি প্রতিদিন একই উত্তর দেন ‘দিল্লি দূর অস্ত।’ সুলতানের নগর প্রবেশের মাত্র একদিনের পথ অতিক্রমের অপেক্ষা। ব্যাকুল হয়ে শিষ্যরা অনুনয় করলেন আউলিয়াকে, ‘এখনো সময় আছে, এইবেলা পালান।’ গিয়াসউদ্দিনের ক্রোধ ও নিষ্ঠুরতার কথা কারও অজানা ছিল না। আউলিয়াকে হাতে পেলে কী দশা হবে তার, সে কথা কল্পনা করে ভয়ে শিউরে উঠল বারবার। মৃদু হেসে সেদিনও উত্তর দিলেন ভয়হীন আউলিয়া— ‘দিল্লি হনুজ দূর অস্ত।’ দিল্লি এখনো অনেক দূর। নগরপ্রান্তে সুলতানের জন্য অভ্যর্থনার আয়োজন করা হলো। স্থাপন করা হলো বিরাট মণ্ডপ। একটি হাতির শির সঞ্চালনে স্থানচ্যুত হলো একটি স্তম্ভ। মুহূর্তের মধ্যে শব্দে পতিত হলো সমগ্র মণ্ডপ। পরদিন ভোরে মণ্ডপের ভগ্ন স্তূপ সরিয়ে আবিষ্কৃত হলো বৃদ্ধ সুলতান এবং তার পুত্রের মৃতদেহ। দিল্লি রইল চিরকালের জন্য সুলতানের জীবিত পদক্ষেপে অতীত। অর্থাৎ ‘দিল্লি হনুজ দূর অস্ত।’ বছর ঘুরে রক্তস্নাত জুলাই মাস ফিরে এসেছে। এক বছর হতে চললেও জুলাই সনদ ঘোষণা ও সংস্কার—কোনোটিই এখনো হয়নি। তাই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, জুলাই সনদ ও সংস্কার কি ‘হনুজ দূর অস্ত’ অর্থাৎ এখনো অনেক দূর? এদিকে শুরু হয়েছে ২৪-এর ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণের পালা। আগামী ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানের দিন পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে। শুরু হয়েছে অভ্যুত্থানের এক বছরের সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে নানা সমীকরণ। জুলাই সনদ প্রসঙ্গে বলতে হয়, মৌলিক বেশ কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলেও অনেক বিষয়ে এখনো মতভিন্নতা কাটেনি। মতভিন্নতা দূর করে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনীতির দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। এখন দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ চলছে। কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ সম্প্রতি জুলাই সনদ নিয়ে বলেছেন, ‘নানা বিষয়ে অগ্রগতি হলেও আশাব্যঞ্জক অগ্রগতির জায়গা থেকে আমরা এখনো খানিকটা পিছিয়ে আছি।’ অর্থাৎ জুলাই সনদ চূড়ান্ত হওয়া থেকে এখনো ‘দূর অস্ত’, এখনো দূরে অবস্থান করছে। কমিশনের সহসভাপতি এর আগে বলেছিলেন, ‘জুন মাসের মধ্যে কমিশন জাতীয় ঐকমত্যের একটি সনদে পৌঁছাতে চায়। প্রত্যাশা ছিল শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে সবাই মিলে এই সনদের স্বাক্ষর করতে পারব। সেটা হবে কি না, তা রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। আমরা হয়তো সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব না। তারপরও বিশ্বাস, জুলাই মাসের মধ্যেই সংলাপের একটি পরিণতি টানা সম্ভব হবে।’ প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস লন্ডন সফরের সময় গত ১২ জুন এক সংলাপে বলেছিলেন, ‘জুলাই মাসে দেশের সব রাজনৈতিক দলের উপস্থিতিতে জুলাই সনদ ঘোষণা করে তার ভিত্তিতে নির্বাচন হবে।’ অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে জুলাই সনদ ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত বলাই যায়, ‘সনদ... দূর অস্ত।’ জুলাই সনদ বিষয়টি গণঅভ্যুত্থানের শুরুতে বা চলাকালে অথবা পরেও ছিল না। তাহলে বিষয়টি প্রথমে জুলাই ঘোষণাপত্র ও পরে জুলাই সনদ কীভাবে সামনে এলো এবং এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন নেতা ও ছাত্র উপদেষ্টা অনেকটা আকস্মিকভাবে সামাজিকমাধ্যমে ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জমায়েত হওয়ার ঘোষণা দেন। এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে তারা জানান যে, ‘প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভল্যুশন’ ঘোষণা করা হবে। অভ্যুত্থানের নেতারা তখন গণঅভ্যুত্থানকে ‘বিপ্লব’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেন। ছাত্রনেতারা একপর্যায়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগও দাবি করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জুলাই ‘প্রোক্লেমেশনের’ মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা এবং ১৯৭২ সালের ‘মুজিববাদী সংবিধানের কবর’ রচনার ঘোষণা দেয়। প্রধান উপদেষ্টা সে সময় বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন। তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়, অন্তর্বর্তী সরকার গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ঘটনার পর থেকেই জুলাই ঘোষণার বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার জুলাই সনদ ঘোষণার সময়সীমার কথা জানানো হলেও ওই সময়ের মধ্যে সরকার তা ঘোষণা করতে পারেনি। আইন উপদেষ্টা গত মে মাসে বলেছিলেন, জুন মাসের মধ্যে জুলাই সনদ ঘোষণা করা সম্ভব হবে। ছাত্রনেতাদের পক্ষ থেকে বারবার জুলাই ঘোষণার দাবি জানানো হয়। সর্বশেষ জুলাই মাসের শুরু হওয়ার প্রাক্কালে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জুলাই সনদ দিতে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন। অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ২৯ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘সরকার যেহেতু বলেছিল, সবার সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ দেবে, তা হয়নি। সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এজন্য ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আগামী ৩ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে।’ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ বর্তমান পর্যায়ে কয়েকটি বিষয়ের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। যার দরুন দ্বিতীয় পর্বে সাত দিন আলোচনা শেষেও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে—সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, উচ্চকক্ষ নির্বাচন প্রক্রিয়া, দায়িত্ব ও ভূমিকা, উচ্চকক্ষ কীভাবে গঠিত হবে; এ নিয়েই বেশি মতবিরোধ চলছে। উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে অনেক দল সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির কথা বলেছে। তবে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এর স্পষ্ট বিরোধিতা করেছে। বিএনপি চায় সংসদে প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন হবে। জামায়াত, এনসিপিসহ বাকি দলগুলো চাইছে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টন। চার দিন ধরে এ বিষয়ে আলোচনা হলেও সমঝোতা হয়নি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও মতভিন্নতা রয়েছে। ২ জুলাই ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে একমত সংস্কারের সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো। তবে গঠন পদ্ধতি নিয়ে মতভিন্নতা দেখা দিয়েছে। গত ২০ মার্চ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেও এখন পর্যন্ত ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে পারেনি। জুলাই মাসে সবার দৃষ্টি জুলাই সনদের দিকে। বহুল প্রত্যাশিত এই সনদে কী থাকবে, ভবিষ্যতে স্বৈরাচারী, কর্তৃত্ববাদী অথবা ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরুত্থানরোধ করতে জুলাই সনদ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে কি না, তা জানার আগ্রহ সবার। নির্বাচন হবে জুলাই সনদের ভিত্তিতে। আগামী বছরের শুরুতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ গণতন্ত্রের পথে অভিযাত্রা শুরু করবে—এমনটাই জনগণের প্রত্যাশা। জুলাই সনদ নিয়ে সংলাপ চলমান থাকলেও অন্যান্য সংস্কার যেমন জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুদক, স্বাস্থ্য, শ্রম, নারীবিষয়ক ও গণমাধ্যম সংস্কার নিয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। এর মধ্যে কোনো কোনো সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনার জন্য উপদেষ্টাদের নিয়ে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। পর্যালোচনা কমিটি আবার কতদিন পর তার সুপারিশ তৈরি করবে, তা দেখার বিষয়। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক হবে যে, গণমাধ্যম কমিশন প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তিন মাসেরও বেশি সময় পর পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব বিষয়ের সংস্কার নিয়ে সেই একই কথা বলতে হয়—সংস্কার... ‘হনুজ দূর অস্ত।’ সংস্কার... এখনো অনেক দূর। লেখক: কলাম লেখক
সনদ-সংস্কার: হনুজ দূর অস্ত
সেই দিনটি / নগেন্দ্রনাথ বসু
নগেন্দ্রনাথ বসু বাংলা তথা ভারতীয় ভাষায় প্রথম বিশ্বকোষ রচয়িতা, প্রত্নতত্ত্ববিদ, ঐতিহাসিক, লেখক। তিনি ১৮৬৬ সালের ৬ জুলাই কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। নগেন্দ্রনাথ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর রাখলেও তার প্রধান পরিচয় বাংলা বিশ্বকোষ রচয়িতা হিসেবে। রঙ্গলাল মুখোপাধ্যায়ের সংকলন এবং তার ভ্রাতা ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় এর প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়। পরে ২৭ বছরের পরিশ্রমে নগেন্দ্রনাথ বিশ্বকোষের ২২টি খণ্ড প্রকাশ করেন। শেষ খণ্ডটি প্রকাশিত হয় ১৯১১ সালে। প্রথম জীবনে নগেন্দ্রনাথ কবিতা ও উপন্যাস রচনায় ব্রতী হন। কিন্তু অল্পদিন পরই তিনি সম্পাদনা কাজে মনোনিবেশ করেন। এ সময় তিনি তপস্বিনী ও ভারত নামে দুটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তিনি অনেক মূল্যবান প্রাচীন গ্রন্থও সম্পাদনা করেন। যেমন—পীতাম্বর দাসের রসমঞ্জরী, জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল, চণ্ডীদাসের অপ্রকাশিত রচনাবলি, জয়নারায়ণের কাশী-পরিক্রমা, ভাগবতাচার্যের কৃষ্ণপ্রেমতরঙ্গিণী প্রভৃতি। গবেষণার পাশাপাশি নগেন্দ্রনাথ নাটক রচনা ও অনুবাদের কাজও করেন। বিহারীলাল সরকারের আগ্রহে তিনি দর্জিপাড়া থিয়েট্রিক্যাল ক্লাবের জন্য শঙ্করাচার্য, পার্শ্বনাথ, হরিরাজ, লাউসেন প্রভৃতি গদ্যপদ্যময় কয়েকটি নাটক রচনা করেন। শেকসপিয়রের হ্যামলেট এবং কর্ণবীর নামে ম্যাকবেথ নাটকের বঙ্গানুবাদ করেন। ১৯৩৮ সালের ২ অক্টোবর তিনি মারা যান।
নগেন্দ্রনাথ বসু
হরিপদ কাপালী
সেই দিনটি / হরিপদ কাপালী
পথের বিপদ বাড়ছেই
সম্পাদকীয় / পথের বিপদ বাড়ছেই
ময়ূর কি ফিরবে
ময়ূর কি ফিরবে
জোহরানের জয় ও বৈশ্বিক প্রভাব
জোহরানের জয় ও বৈশ্বিক প্রভাব