বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২

মহাসড়কে বাড়ছে মৃত্যু, ৬ মাসে ১৪শ দুর্ঘটনা

দুর্ঘটনা বাড়ছে তিন চাকার যানে
সজিব ঘোষ
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর -০০০১, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৭:৩৩ এএম
মহাসড়কে বাড়ছে মৃত্যু, ৬ মাসে ১৪শ দুর্ঘটনা

মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দেওয়ার সময় দ্রুতগতির একটি বাসের ছাদ উড়ে যাওয়ার ঘটনা ঈদের আগে বেশ আলোচিত হয়েছিল। বেপরোয়া গতি কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, তার দৃষ্টান্ত চোখের সামনে তুলে ধরে ওই ঘটনা। এ ঘটনার আগে-পরেও একের পর এক দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়েছে এই এক্সপ্রেসওয়ে। সর্বশেষ গত শনিবার এক্সপ্রেসওয়েতে যাত্রীবাহী একটি বাস ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দিলে বাসের তিন যাত্রী ও ট্রাকচালকের সহকারীর মৃত্যু হয়। এর আগে গত এপ্রিলের শেষদিকে একই পথে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের এক আরোহীর মৃত্যু হয়। আবার ৮ মে অ্যাম্বুলেন্স ও বাসের সংঘর্ষে নিহত হয় পাঁচজন। শুধু যে রাজধানী থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলমুখী জাতীয় মহাসড়কের অবস্থা এমন তা নয়, দেশের অন্য জাতীয় মহাসড়কগুলোতে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু বাড়ছে।

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে সারা দেশে জাতীয় মহাসড়কে ২০৯টি দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়, যে সংখ্যাটি জুনে বেড়ে দাঁড়ায় ২৯৬-এ। অর্থাৎ চার মাসের ব্যবধানে দেশের জাতীয় মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ৪১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

ফাউন্ডেশনের পাওয়া তথ্য বলছে, গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে দেশের জাতীয় মহাসড়কে মোট এক হাজার ৩৯৭টি দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ২১৪টি, মার্চে ২২৮টি, এপ্রিলে ২১৩টি এবং মে মাসে ২৩৭টি দুর্ঘটনা ঘটে।

বিশেষজ্ঞরা বলছে, জাতীয় মহাসড়কগুলোর মান যে হারে উন্নত হয়েছে, সেই হারে এসব সড়কে চলা গণপরিবহনগুলোর মান বাড়েনি। ফলে দুর্ঘটনার মাত্রা বেড়েছে। আবার জাতীয় মহাসড়কে চলার মতো উপযুক্ত ফিটনেস নেই বেশিরভাগ গাড়ির। সেইসঙ্গে চালকদের উন্নত প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। এতে অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআইআর) পরিচালক অধ্যাপক শামছুল হক কালবেলাকে বলেন, দুর্ঘটনার মাত্রা বাড়ার এমন চিত্র ভয়ংকর। দুর্ঘটনার পেছনে মূল কারণ বিশৃঙ্খলা। অবৈধ গাড়ি মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা আরও বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে তিন চাকার যানে দুর্ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

দুর্ঘটনা বাড়ছে তিন চাকার যানে: গবেষণা-সচেতনতা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য রোডের তথ্য বলছে, ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত গত ছয় মাসে সড়কে ১৭ হাজার ৯৫৭টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় অন্তত দুই হাজার ৭৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ১৭ হাজার ৮২৬ জন।

গত ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক, অটোরিকশার মতো তিন চাকার যানে। এসব যান-সংশ্লিষ্ট ৮ হাজার ৮১২টি দুর্ঘটনায় ৭৯৫ জন নিহত ও ৮ হাজার ৮১৫ জন আহত হয়েছেন। একই সময়ে তিন হাজার ৪০৪টি বাস দুর্ঘটনায় ৮২৫ জন নিহত ও ৩ হাজার ৩১৮ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া একই সময়ে তিন হাজার ৭১৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৬৭৩ জন নিহত ও তিন হাজার ৬২৩ জন আহত হয়েছেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিচালক (রোড সেফটি) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস কালবেলাকে বলেন, জাতীয় মহাসড়কে শৃঙ্খলা রাখতে স্থানীয় পর্যায়ের সহযোগিতা প্রয়োজন। কেন্দ্রীয়ভাবে সারা দেশের জাতীয় মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সংযোগ সড়কে মনিটরিং বাড়াতে পারলে মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।

আঞ্চলিক সড়কও ঝুঁকিতে: গত ছয় মাসের হিসাব বিবেচনা করলে আঞ্চলিক সড়কে দুর্ঘটনার মাত্রা কিছুটা কমের দিকে, যদিও তা একেবারে আশঙ্কামুক্ত পর্যায়ে নয়। গত ছয় মাসের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে সর্ব্বোচ ২৬৮টি দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে আঞ্চলিক সড়কগুলোতে, সবচেয়ে কম ২১৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে মে মাসে। তবে মোট দুর্ঘটনা জাতীয় মহাসড়কের চেয়ে আঞ্চলিক সড়কে বেশি। গত ছয় মাসে আঞ্চলিক সড়কগুলোতে ১ হাজার ৪৮৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আনফিট যানবাহন চলাচলের আধিক্য, অধিক হারে ছোট ও মাঝারি যান চলাচল, অনুমোদনহীন তিন চাকার যান চলাচল, সড়কে পরিবহন ও ব্যবস্থাপনার শৃঙ্খলার অভাব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি কম থাকা, রাস্তার পাশে ঘন ঘন বাজার বসার মতো বিষয়গুলো দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করেছে।

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে তিন চাকা ও ছোট যানবাহনের কারণে ১১ দশমিক ২২ শতাংশ দুর্ঘটনা বেড়েছে। ২০২৩ সালে মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে এবং ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে সংঘটিত হয়েছে। যদিও আগের বছরের তুলনায় গত বছর আঞ্চলিক মহাসড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমেছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, গ্রামীণ সড়ক ও জাতীয় মহাসড়কের মধ্যে আঞ্চলিক সড়ক সেতুর কাজ করে। তাই এ জাতীয় সড়ককে বেশি নজরদারির আওতায় আনা জরুরি। হুট করে ছোট গাড়ি বড় সড়কে চলে আসে। তিন চাকার যানের পাশাপাশি মোটরসাইকেল একটা আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মৃত্যু বাড়াচ্ছে মোটরসাইকেল: গত পাঁচ বছরের হিসাব করলে দেখা যায়, সারা দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ বেড়েছে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মোট ১১ হাজার ৮৬৪ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ২০২০ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৪৬৩ জনের মৃত্যু হয়, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৬০৯ জনে।

এই সময়ে সড়কে বেড়েছে মোটরসাইকেলের সংখ্যাও। পাঁচ বছরের ব্যবধানে সড়কে মোটরসাইকেল বেড়েছে ১৭ লাখ ৬৬ হাজার ৩১৩টি। বিআরটিএর মোটরযান নিবন্ধনসংক্রান্ত নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২০ সালে সারা দেশে ২৮ লাখ ১৪ হাজার ৬৩৭টি নিবন্ধিত মোটরসাইকেল ছিল। ২০২৪ সালের শেষে নিবন্ধিত মোটরসাইকেল সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৫ লাখ ৮০ হাজার ৯৫০টিতে। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে নিবন্ধিত মোটরসাইকেল বেড়েছে প্রায় ৬৩ শতাংশ।

গতির প্রতিযোগিতা কাড়ছে প্রাণ: সঠিক গতিতে যান চলাচল না করাকে সড়ক দুর্ঘটনার প্রাণহানির অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বিভিন্ন প্রতিবেদনে। যান চলাচলে অতিরিক্ত গতি কিংবা কম গতি দুটিই ক্ষতিকর। দুটিই দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির জন্য দায়ী। নগর, আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়কে যান চলাচলে নির্দিষ্ট গতি নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না বা মানা যাচ্ছে না।

জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়কে দুর্ঘটনার জন্য গতির প্রতিযোগিতাকে দায়ী করছেন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানও। তিনি কালবেলাকে বলেন, ‘আমাদের বড় সড়কগুলোতে শুধু গতির প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এটা দেখার মতো প্রযুক্তিগত সক্ষমতাও আমাদের নেই। এমনকি পর্যাপ্ত হাইওয়ে পুলিশও নেই। তিন হাজার কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক হাইওয়ে পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করে, বাকি ছয় হাজার কিলোমিটার পথ খালি পড়ে থাকে। আর আঞ্চলিক সড়কে তো কোনো নজরদারিই নেই।’

মন্তব্য করুন

খানাখন্দে ভরা সড়কে প্রতিদিনই যুদ্ধ
রাজধানীর দয়াগঞ্জ মোড় থেকে জুরাইন রেলগেট পর্যন্ত গেন্ডারিয়া নতুন সড়কটি প্রথম দেখায় মনে হতে পারে যেন খালে অথৈ পানি। সড়কের জায়গায় জায়গায় গর্তের আকার এত বড় যে—সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় কয়েক ফুট পানির নিচে। ভাঙা সড়কের মাঝেই জলাবদ্ধতা থাকে কয়েকদিন। অবস্থা এমন যে, হেঁটে চলারও সুযোগ নেই। বিকল্প না থাকায় অবর্ণনীয় ভোগান্তি নিয়ে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করছে লাখো মানুষ। এ ছাড়া একই পথ ব্যবহার করে প্রতিদিন চকবাজার ও বাদামতলীর পাইকারি বাজারে চলাচল করে পণ্যবাহী শত শত ট্রাক। তবে রাস্তার দুপাশের গর্তের কারণে দ্রুতগতিতে চলতে পারে না কোনো যানবাহনই। পথচারীদের ভাষ্য, এ সড়ক যেন নরকে পরিণত হয়েছে। সড়কটি দিয়ে নিত্য চলাচলকারী অফিসগামী পারভেজ হুসাইন দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরে কালবেলাকে বলেন, ‘এক ঘণ্টায় এক কদমও নড়ছে না গাড়ি। জ্যামের কারণে দুর্ভোগ তো হচ্ছেই, জলাবদ্ধতার কারণে হেঁটে যাওয়ারও উপায় নেই।’ স্থানীয় বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘দয়াগঞ্জ থেকে যাত্রাবাড়ী ও দয়াগঞ্জ থেকে জুরাইন—এই দুটি সড়ক তিন-চার বছর ধরে এমন বেহাল অবস্থায় রয়েছে যে, চলতে গিয়ে যানবাহন উল্টে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু নগর কর্তৃপক্ষ নীরব।’ শুধু দয়াগঞ্জের এ সড়কটিই নয়, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন মূল সড়ক থেকে শুরু করে অনেক আবাসিক এলাকাজুড়ে বিভিন্ন সড়কের করুণ দশা। সর্বত্র এবড়োখেবড়ো আর খানাখন্দে ভরা। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় অনেক সড়কের বেশিরভাগ জায়গায় পিচ উঠে গেছে, কোথাও তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। রাস্তা উন্নয়নের নামে খনন করে ফেলে রাখা হয়েছে মাসের পর মাস। কোনো কোনো রাস্তার সংস্কারকাজ বন্ধ রয়েছে তারও বেশি সময় ধরে। সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করায় নাগরিক দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ। অনেক সড়কে যান চলাচলও বন্ধ। কিছু সড়কে হেঁটে চলারও সুযোগ নেই। মাঝেমধ্যে ইট-সুরকি বিছিয়ে অস্থায়ীভাবে মেরামতের চেষ্টা হলেও দুর্ভোগ কমছে না। বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় উঠে গেছে সড়কের বিটুমিন, ইট-সুরকিও। ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে কোনোমতে চলছে যানবাহন। নগরবাসী বলছেন, কোথাও উঁচু, কোথাও বেশ নিচু সড়ক। আবার বছরের অর্ধেক সময় রাস্তায় চলে খোঁড়াখুঁড়ি। আর বাকি অর্ধেক সময় রাস্তা থাকে বৃষ্টির পানির নিচে, তাহলে রাস্তা সংস্কার করে কী লাভ। যদি মানুষ রাস্তা ব্যবহার করতেই না পারে, তাহলে এগুলো সংস্কারের কী প্রয়োজন। দুর্ঘটনার ভয়ে অনেকে রিকশা ছেড়ে হেঁটে পার হচ্ছেন দীর্ঘ পথ। মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো চলাচলের সময় গর্তে আটকে যায়। ফলে সীমাহীন ভোগান্তি মেনে নিয়েই চলতে হচ্ছে তাদের। ঢাকার মুগদা বিশ্বরোড এলাকার অতীশ দীপঙ্কর সড়ক থেকে মান্ডা ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার, সম্প্রসারণ ও ড্রেন নির্মাণের কাজ দেড় বছর আগে শুরু হলেও এখনো শেষ হয়নি। গত বছরের শুরুর দিকে কাজ শুরু হলেও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কার্যত কাজ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান স্থানীয়রা। ইট, বালু, খোয়া আর কংক্রিটের পাইপ পড়ে আছে দিনের পর দিন। সড়কটি খুঁড়ে রাখায় সে পথে চলতে ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ বেড়ে যায় আরও। এ সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন লাখো মানুষ চলাচল করে। সরেজমিন দেখা গেছে, সড়কজুড়ে খোঁড়া গর্ত, ভাঙা ইট-পাথর, নির্মাণসামগ্রী আর ধুলার আস্তরণে পথচারীদের হাঁটা দায় হয়ে উঠেছে। বর্ষায় কাদায় পিচ্ছিল হয়ে যায় সড়ক, আবার রোদের সময় ধুলায় চোখেমুখে যন্ত্রণা। রিকশা, অটোরিকশা, ঠেলাগাড়ি চলতে পারলেও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স পড়ে বিপাকে। এলাকার শিক্ষার্থী, অফিসগামী মানুষ, বৃদ্ধ ও রোগীরা পড়ছেন চরম দুর্ভোগে। স্থানীয় বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছরের শুরুতে অনেক আনুষ্ঠানিকতা করে ড্রেনের সংস্কারকাজ শুরু হয়েছিল। কংক্রিটের পাইপ এনে ফেলা হয়েছিল; কিন্তু কয়েক মাস পর কাজ ধীর হয়ে আসে, এখন একেবারে থেমে গেছে। এতে শুধু ধুলা নয়, বৃষ্টির সময় কাদা আর দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে।’ স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষক শিউলি আক্তার বলেন, ‘সকাল-বিকেল এখানে রিকশা উল্টে পড়ছে, লোকজন মাটিতে পড়ে যাচ্ছে, কারও পা মচকাচ্ছে, কারও কোমর ভাঙছে। এতদিন ধরে খোঁড়াখুঁড়ির পরও কাজ শেষ হচ্ছে না। এটা কি উন্নয়ন না ভোগান্তি, বোঝা যাচ্ছে না!’ একই ধরনের অভিযোগ করেন দোকানি আবু সালেহ। তিনি বলেন, ‘আমার দোকানে ধুলা ঢুকে সব পণ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিক্রিও কমে গেছে। কেউ রাস্তা দিয়ে হাঁটতেই চায় না, কেনাকাটা করবে কীভাবে?’ গুলশানের লেক রোডের অবস্থাও বেহাল। নির্মাণের পর একবারও সংস্কার করা হয়নি সড়কটি। শাহজাদপুরের বাসিন্দা ইমরুল কায়েস বলেন, ‘লেকপাড়ের এ সড়কটি দিয়ে খুব সহজেই গুলশান, বনানী, বারিধারায় যাতায়াত করা যায়; কিন্তু সড়কটি দিন দিন নালায় পরিণত হচ্ছে। ঠিকমতো যানবাহন চলতে পারছে না। অথচ এ সড়কটি সংস্কার করলে প্রগতি সরণিতে গাড়ির চাপ কিছুটা কমত।’ এলাকাবাসী জানান, ১০ থেকে ১২ বছর ধরে রাস্তার তেমন কোনো সংস্কারকাজই হয়নি। এতে অনেক সড়কেরই বেহাল দশা। সিটি করপোরেশনের আওতায় আসা নতুন ওয়ার্ডগুলোর মধ্যেও রয়েছে অনেক অবহেলিত সড়ক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ১ হাজার ৬৫৬ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে গত বর্ষায় ২১৪ কিলোমিটার সড়ক এবং ২৭ কিলোমিটার ফুটপাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় রয়েছে ১ হাজার ৫৭৭ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার সড়ক। এর মধ্যে ১৫০ কিলোমিটার সড়ক গত বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে মেরামত করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সংস্থা দুটির প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু জামানত নিয়ে ঠিকাদারদের ছাড় দিলে হবে না; বাধ্য করতে হবে সময়মতো কাজ শেষ করার। নিয়মিত তদারকির পাশাপাশি ঠিকাদার নিয়োগেও হতে হবে আরও কঠোর। তারা বলছেন, এসব সংস্কারকাজের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে আনতে হবে সমন্বয় ও পূর্ব প্রস্তুতি। একই সঙ্গে প্রয়োজন আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও দক্ষ কর্মী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নীলক্ষেত সংলগ্ন মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণ থেকে টিএসসি এলাকার রাজু ভাস্কর্যের আগ পর্যন্ত রাস্তা খুঁড়ে নিচ দিয়ে ওয়াসার লাইন বসানোর কাজ চলছে। নীলক্ষেত থেকে শুরু হয়ে ঢাবি ক্যাম্পাসের ওপর দিয়ে এ লাইন যাবে সচিবালয়ের দিকে। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের। উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকায় জনভোগান্তির সমার্থক খোঁড়াখুঁড়ি আর জলাবদ্ধতা। দক্ষিণখানের হাজি ক্যাম্পের পাশের মার্কেটের ব্যবসায়ী জামান হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির জন্য আমরা চরম ভোগান্তিতে আছি। রাস্তা উঁচু করা হচ্ছে; কিন্তু এতে জলাবদ্ধতা কমবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ তখন সড়কের তুলনায় আশপাশের ঘরবাড়ি অনেক নিচু হয়ে যাবে। যদি ড্রেন গভীর না হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবে পানি সরবে না। উলটো আমাদের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাবে।’ ইসিবি চত্বর থেকে মানিকদি, বাইগারটেক ও বাউনিয়া বাজার হয়ে জসীমউদ্দীন পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমটিার রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। খানাখন্দ ও জলাবদ্ধ সড়কে যনবাহন উল্টে হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে থাকলেও এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই নগর কর্তৃপক্ষের। মিরপুরে ভাঙাচোরা সড়ক উন্নয়নকাজে ধীরগতির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসিন্দারা। বিশেষ করে সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নকাজের জন্য বড় বড় গর্ত ও মাটি খুঁড়ে রাখায় যানজটসহ নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ পাইকপাড়া ও পুরাতন কাজি অফিসের গলির সড়কটিতে দীর্ঘদিন ধরে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নকাজ চলাসহ স্লাব দিয়ে রাখা হয়েছে। রাস্তা থেকে ড্রেনের মাটি উঁচু হওয়ায় যানবাহন চলাচল করতে পারে না। কুড়িল থেকে প্রগতি সরণি হয়ে মালিবাগ-যাত্রাবাড়ী সড়ক পিচ উঠে খানাখন্দে ভরে গেছে। খিলগাঁও ফ্লাইওভার থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত সড়কটির বেহাল দশা। প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের সামনে থেকে মুগদা বিশ্বরোড পর্যন্ত সড়কের অবস্থা আরও নাজুক। রাজধানী ঢাকার সড়কের এমন বেহাল দশা শুধু এ কয়েকটি জায়গাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বড় সড়কগুলোর পাশাপাশি নগরীর বেশিরভাগ অলিগলিও খানাখন্দে ভরে গেছে। বিশেষ করে সিটি করপোরেশন এলাকায় নতুন সংযুক্ত এলাকাগুলোর অবস্থা বেশি নাজুক। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নামমাত্র যে সংস্কার করা হচ্ছে, তা জনদুর্ভোগ লাঘবে কার্যকর হচ্ছে না। কাকরাইল, নয়াপল্টন, মতিঝিল, মৌচাক, মানিকনগর, টিটিপাড়া, গোপীবাগ, মালিবাগ, রাজারবাগ, সায়েদাবাদ, ওয়ারী, গেন্ডারিয়া, টিকাটুলী, নারিন্দা, দয়াগঞ্জ, কমলাপুর, খিলগাঁও এবং পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সড়কে খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ভাটারা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, নাছিরাবাদ, মোহাম্মদপুর, রাজাবাজার, মিরপুর, নতুন বাজার ও উত্তরার কয়েকটি সড়কসহ নগরীর অধিকাংশ অলিগলির সড়কের বেহাল অবস্থা। কোনোটা বছরখানেক সময় ধরে, আবার কোনোটা হয়তো কয়েক মাস ধরে পড়ে আছে একই রকম বেহাল অবস্থায়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, ‘যেসব সড়ক সংস্কার প্রয়োজন সেগুলোয় কাজ চলছে। সড়ক মেরামত দুভাবে করা হয়। কোথাও ছোট গর্ত থাকলে সেটা তাৎক্ষণিক সংস্কার করা হয়, যা তিন দিনের বেশি সময় লাগে না। আবার বড় সংস্কারের প্রয়োজন হলে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগে।’ মুগদা এলাকার সড়কের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এলাকাবাসী সড়কের জায়গা না ছাড়ায় কাজ আটকে রয়েছে। রাজউকের প্ল্যান অনুযায়ী ৫০ ফুট জায়গা ছাড়ার কথা ছিল। কাজ শুরুর সময় স্থানীয়রা ৫০ ফুট জায়গা ছাড়তেই রাজি ছিলেন। কিন্তু গত বছর সরকার পরিবর্তনের পর অনেকে ৫০ ফুট থেকে একেবারে ২৫ ফুটে নেমে এসেছেন। সম্প্রতি তাদের ডেকে বৈঠক করেছি। তাদের কেউ ২৫ ফুট, কেউ ৩০ ফুট পর্যন্ত জায়গা ছাড়তে চান। তাদের পুরো সড়কে ৩০ ফুট করে জায়গা ছাড়তে বলা হয়েছে। সড়কের জায়গা ছাড়লেই দ্রুত কাজ সম্পন্ন করা হবে।’
খানাখন্দ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ছাত্রদল নেতা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষে সোহরাব হোসাইন আবির (২৭) নামে এক ছাত্রদল নেতা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। গতকাল শনিবার দুপুরে উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের চাতলপাড় বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সোহরাব চাতলপাড় ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি কাঁঠালকান্দি গ্রামের চান মিয়ার ছেলে। স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, চাতলপাড় ইউনিয়নের কাঁঠালকান্দি গ্রামের উল্টা গোষ্ঠী ও মোল্লা গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। শনিবার সকালে এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এর জেরে দুপুর ১টার দিকে উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে মোল্লা গোষ্ঠীর সমর্থক ছাত্রদল নেতা সোহরাব মিয়া ঘটনাস্থলেই মারা যান। সংঘর্ষে আহতদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নাসিরনগর থানার ওসি আজহারুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ চলছিল। এর জেরেই সংঘর্ষে একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ছাত্রদল নেতা
দাবি-দাওয়া, খাওয়া-দাওয়া ক্যাম্পাসে নির্বাচনী জোয়ার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে জমে উঠেছে সরব পরিবেশ। নির্বাচনপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের তৎপরতায় বাড়ছে আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া এবং দাবি-দাওয়াকে কেন্দ্র করে স্মারকলিপি প্রদানের প্রবণতা। একদিকে যেমন ভোটারদের মন জয়ের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, অন্যদিকে প্রশাসনের টেবিলে জমা পড়ছে প্রতিদিন একাধিক স্মারকলিপি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের খাবারের দোকান, ক্যাম্পাস সংলগ্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতে চোখে পড়ার মতো বেড়েছে শিক্ষার্থীদের ভিড়। গাউসুল আজম মার্কেটের ‘মামা হোটেল’, বকশী বাজারের ‘পানসী রেস্টুরেন্ট’, ‘ভর্তা বাড়ি’, চানখাঁরপুলের ‘মিতালী হোটেল’ এবং ‘মামুন রেস্টুরেন্ট’ ছাড়াও বুয়েটের আহ্সান উল্লাহ হল ক্যান্টিন ও নাজিরা বাজারের বেশ কিছু রেস্টুরেন্টে বিক্রিবাটায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাওয়ানোর উদ্যোগ বাড়িয়েছেন। কেউ কেউ আবার হলের ফেসবুক গ্রুপে সক্রিয় হয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। আবার অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরছেন—বিশেষ করে জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থান ও বিভিন্ন আন্দোলনে ভূমিকার গল্প। যদিও কেউ কেউ এসব প্রচেষ্টাকে ‘লোক দেখানো’ বলেও মন্তব্য করছেন। স্মারকলিপির স্রোত: নির্বাচনের পূর্বমুহূর্তে স্মারকলিপি প্রদানের হিড়িকও চোখে পড়ার মতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক পর্যায়ে প্রতিদিন জমা পড়ছে একাধিক স্মারকলিপি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ছাত্র সংগঠন, সাধারণ শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া নানা দাবি। কেউ দিচ্ছেন ব্যক্তি উদ্যোগে, কেউবা দলীয়ভাবে। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর থেকে এ প্রবণতা আরও দৃশ্যমান হয়েছে। নির্বাচন কমিশন গঠনের পর থেকে প্রতিদিন গড়ে তিন-চারটি স্মারকলিপি জমা পড়ছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে। গত ২৯ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সংস্কার, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের সুবিধা বৃদ্ধিসহ সাত দফা দাবিতে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হক বিদিশার কাছে স্মারকলিপি দেন একদল শিক্ষার্থী। অন্যদিকে, শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন ও বহিরাগতদের প্রবেশ রোধে ব্যবস্থা নিতে শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের পরিচালকের কাছেও স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। নারী শিক্ষার্থীদের নতুন সংগঠন ‘অ্যাক্ট’ তিনটি দাবিতে উপাচার্য ও প্রক্টরের কাছে স্মারকলিপি দেয়, যার মধ্যে ছিল হলে জরুরি প্রয়োজনে অভিভাবক রাখার অনুমতির বিষয়টি। নবাগত শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসন সংকট নিরসনে জরুরি ব্যবস্থা নিতে ‘ঢাবি ছাত্রশিবির’ উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেয়। একই দাবিতে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল থেকেও আলাদা স্মারকলিপি জমা পড়ে। এটা ছাত্র রাজনীতি নয়—বলছেন বিশেষজ্ঞরা: এমন কর্মকাণ্ডকে অনেকেই নির্বাচনী কৌশল হিসেবে দেখলেও, একে ছাত্র রাজনীতির গঠনমূলক অংশ হিসেবে মানতে নারাজ বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন: ‘এটা ছাত্র রাজনীতি নয়। শিক্ষার্থীদের কমিউনিটি পলিটিক্স এখনো কেন এভাবে ম্যানিপুলেট হবে? জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আমরা উৎকোচ, শক্তি প্রদর্শন ইত্যাদি থেকে বিরত থাকার কথা বলি। তখন যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই এসব কৌশল নেয়, তাহলে জাতীয় পর্যায়ে সংস্কার কীভাবে হবে?’ তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের সচেতন হয়ে নিজেদের কোনোভাবে ম্যানিপুলেট হতে না দেওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ নেতারা শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের স্বার্থেই কাজ করেন। কিন্তু বাংলাদেশে খাওয়া-দাওয়া ও লোক দেখানো কাজ দিয়ে রাজনীতিকে চালনা করার একধরনের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, যা পরিবর্তন করা জরুরি।
দাবি-দাওয়া, খাওয়া-দাওয়া ক্যাম্পাসে নির্বাচনী জোয়ার
৫ দফা দাবিতে প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মসূচি
বেতন বৈষম্য নিরসনসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আগামী ১৩ জুলাই জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। পরে ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দাবির যৌক্তিকতা উপস্থাপনের জন্য সাক্ষাৎ করবেন তারা। এদিকে দাবি আদায় না হলে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পাঁচ দফা দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তারা। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাব জহুর হোসেন চৌধুরী হলরুমে আয়োজিত ‘প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিতকরণে অন্তরায় ও সমসাময়িক সংকট নিরসন’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ ঘোষণা দেন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন শাহীন। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক সিকদার। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সহসভাপতি ভিপি ইব্রাহিম। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি পাঁচটি দাবি উপস্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো—বেতন বৈষম্য নিরসনে সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১১তম গ্রেড এবং ৬৫ হাজার ৫২৪ জন প্রধান শিক্ষকের জন্য অবিলম্বে দশম গ্রেডের জিও জারি করা; সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি নিশ্চিত করা; চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের যোগদানের তারিখ থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি এবং প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি চালু করা; ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে শর্তহীনভাবে উচ্চতর গ্রেড বাস্তবায়ন; শিক্ষক সমিতির কার্যালয়কে ষড়যন্ত্রমূলক সরকারি ভূমি অধিগ্রহণ থেকে মুক্ত করা এবং অবিলম্বে নবম পে-স্কেল ঘোষণা করা।
৫ দফা দাবিতে প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মসূচি
ক্লাবে আ.লীগ নেতার ছেলের বিয়ে গ্রেপ্তারের দাবিতে ফটকে অবস্থান
ক্লাবে আ.লীগ নেতার ছেলের বিয়ে গ্রেপ্তারের দাবিতে ফটকে অবস্থান
আপনাকে বসিয়েছি আমরা, আপনি নিজের যোগ্যতায় বসেননি
আপনাকে বসিয়েছি আমরা, আপনি নিজের যোগ্যতায় বসেননি
যেনতেন নির্বাচন আর হতে দেওয়া হবে না
জামায়াত আমির  / যেনতেন নির্বাচন আর হতে দেওয়া হবে না
এটি এখনো বিশ্বের সবচেয়ে ভালো সংবিধানের একটি
এটি এখনো বিশ্বের সবচেয়ে ভালো সংবিধানের একটি