বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২
খানাপিনা

বাহারি খিচুড়ি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর -০০০১, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৯:২২ এএম
বাহারি খিচুড়ি

আষাঢ় ও শ্রাবণ—এ দুই মাস বর্ষাকাল। প্রায় দিনই বৃষ্টি লেগে থাকে। রিমঝিম বৃষ্টি উদযাপনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে খিচুড়ির নাম। ভুনা থেকে শুরু করে ল্যাটকা, আচারিসহ বিভিন্ন পদের খিচুড়ির স্বাদ নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কমবেশি সবাই। আর যদি হয় গরুর মাংস দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পদের খিচুড়ি, তাহলে তো জমে ক্ষীর! আপনাদের জন্য রইল গরুর মাংস দিয়ে তৈরি

কয়েকটি খিচুড়ির রেসিপি—

হরিয়ালি বিফ খিচুড়ি

উপকরণ

খিচুড়ির জন্য: কালিজিরা/চিনিগুঁড়া/ বাসমতী চাল ৪ কাপ, মসুর/মুগডাল ২ কাপ, পেঁয়াজ আধা কাপ, আদা বাটা ১ চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, জিরা বাটা আধা চা চামচ, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, কাঁচামরিচ ৭-৮টি, এলাচ ৪টি, লবঙ্গ ৫-৬টি, তেজপাতা ২টি, দারুচিনি ২ টুকরো, লবণ স্বাদমতো, তেল আধা কাপ।

গরুর মাংসের জন্য: গরুর মাংস ১ কেজি, পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ, আদা বাটা ২ চা চামচ, রসুন বাটা দেড় চা চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, ধনিয়া গুঁড়া আধা চা চামচ, লাল মরিচ গুঁড়া ১ চামচ, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, গরম মসলা গুঁড়া ১ চা চামচ, লবণ স্বাদমতো, তেল ১/৪ কাপ।

হরিয়ালি পেস্টের জন্য: টক দই ৩ টেবিল চামচ, ধনেপাতা কুচি ১/৪ কাপ, পুদিনা পাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, কাঁচামরিচ ২-৩টি।

অন্যান্য উপকরণ: পেঁয়াজ বেরেস্তা আধা কাপ ও টমেটো কুচি এক কাপ।

প্রস্তুত প্রণালি: চাল-ডাল ভালোভাবে ধুয়ে একপাশে রেখে দিন। শুরুতেই টক দই, ধনে ও পুদিনা পাতা দিয়ে তৈরি করে নিন হরিয়ালি পেস্ট। এবার গরুর মাংস ধুয়ে পানি ঝরতে রেখে দিন।

গরুর মাংস: প্রেশার কুকার বা প্যানে তেল দিয়ে ভালোভাবে গরম করে তাতে পেঁয়াজ দিয়ে সোনালি রং হওয়া পর্যন্ত ভেজে নিন। এবার এতে এক এক করে সব মসলা দিয়ে কষিয়ে নিন। মসলা থেকে তেল ছেড়ে না আসা পর্যন্ত কষিয়ে নিন। কষানো মসলা মাংস দিয়ে কিছু সময় আরও কষিয়ে নিন। এবার পানি দিয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত রান্না করুন, যতক্ষণ না মাংস নরম হয়ে যায়। মাংস রান্না হয়ে গেলে ঝোলের পানি শুকিয়ে হরিয়ালি পেস্ট ও গরম মসলা দিয়ে আরও কিছু সময় রান্না করুন।

খিচুড়ি: একটি পাত্রে তেল গরম করে তাতে গোটা গরম মসলা ও পেঁয়াজ দিয়ে সুগন্ধ ছড়ানো পর্যন্ত ভাজতে থাকুন। এবার তাতে চাল-ডালের মিশ্রণ দিয়ে ২ থেকে ৩ মিনিট ভেজে নিন। ভাজা শেষে আদা-রসুন-জিরা বাটা দিয়ে দিন। আরও কিছুক্ষণ ভেজে নিন। এবার ১০ কাপ গরম পানি, লবণ দিয়ে মিডিয়াম আঁচে রান্না করুন। মাঝেমধ্যে নাড়া দিতে হবে। পানি চাল-ডালের বরাবর হয়ে গেলে তাতে রান্না করা গরুর মাংস ও টমেটো কুচি এবং পেঁয়াজ বেরেস্তা ছড়িয়ে দিন। ধীরে ধীরে গরুর মাংস ও অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে দেবেন। এবার ২০ মিনিটের জন্য একদম অল্প আঁচে ২০ মিনিট রান্না করুন। এ সময় কোনো নাড়াচাড়া করবেন না। ব্যস, তৈরি হয়ে গেল হরিয়ালি বিফ খিচুড়ি। এবার একটি পাত্রে বেড়ে নিয়ে তার ওপর পেঁয়াজ বেরেস্তা ছড়িয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

গরুর মাংসের ভুনা খিচুড়ি

উপকরণ: গরুর মাংস এক কেজি, পোলাওয়ের চাল এক কেজি, মসুর ডাল ২/৩ কাপ, মুগ ডাল এক কাপ, লবণ

এক টেবিল চামচ, মরিচ গুঁড়া এক টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া দেড় টেবিল চামচ, ধনিয়া গুঁড়া এক চা চামচ, জিরা গুঁড়া এক চা চামচ, রসুন বাটা দুই চা চামচ, আদা বাটা দুই চা চামচ, দারুচিনি দুই টুকরা, সবুজ এলাচ পাঁচটি, লবঙ্গ পাঁচটি, তেজপাতা দুটি, পেঁয়াজ কুচি দেড় কাপ, তেল এক কাপ, ঘি দুই টেবিল চামচ, কেওড়া জল তিন টেবিল চামচ।

প্রস্তুত প্রণালি: প্রথমে একটি পাত্রে মাংস ধুয়ে লবণ, হলুদ, ধনিয়া, জিরা ও মরিচ গুঁড়া, রসুন ও আদা বাটা, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, তেজপাতা, পেঁয়াজ কুচি ও তেল দিয়ে ভালো করে মেখে নিন।

এবার একটি চুলায় প্যান বসিয়ে তাতে মাখানো মাংস মাঝারি আঁচে ১০-১২ মিনিট ঢেকে রান্না করতে হবে। এরপর ঢাকনা তুলে কষিয়ে নিন মাংস। পানি শুকিয়ে গেলে এক কাপ পানি দিয়ে আরও আধা ঘণ্টার জন্য ঢেকে দিন প্যান। তাতে মুগ ও মসুর ডাল একসঙ্গে ঢেলে দিয়ে প্যানে নেড়েচেড়ে নিন। পোলাওয়ের চালের সঙ্গে ভাজা ডাল মিশিয়ে ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।

মাংস প্রায় সিদ্ধ হয়ে গেলে ঘি ও ধুয়ে রাখা চাল ডাল দিয়ে দিন। মাঝারি আঁচে কিছুক্ষণ নাড়তে হবে। এরপর আট কাপ পানি দিয়ে দিন। ভালো করে নেড়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে উচ্চতাপে ৮ থেকে ১০ মিনিটের মতো রান্না করুন। এবার ঢাকনা তুলে একটু নেড়ে কেওড়া জল দিয়ে ঢেকে একদম অল্প আঁচে ২০-২৫ মিনিট রান্না করতে হবে। সবশেষ ঢাকনা তুলে খিচুড়ি হালকা নেড়ে আরও ৫ মিনিট দমে রেখে পরিবেশন করুন গরুর মাংসের ভুনা খিচুড়ি।

আচারি বিফ খিচুড়ি

উপকরণ: গরুর মাংস ২ কেজি, পোলাওয়ের চাল ৪ কাপ, মসুরের ডাল ২ কাপ, পেঁয়াজ ১ কাপ, তেল ১/২ কাপ, আদা বাটা ২ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ, জিরা গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, ধনিয়া গুঁড়া ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, যে কোনো আচার ১/২ কাপ, রসুনের কোয়া খোসাসহ ১০/১২টি, এলাচ ৬টি, দারুচিনি ২ টুকরো, তেজপাতা ২টি, কাঁচামরিচ ৭/৮টি, পেঁয়াজ বেরেস্তা ১/২ কাপ ও পানি ৮ কাপ।

প্রস্তুতি প্রণালি: প্রথমে মাংসে পেঁয়াজ, তেল, আদা, রসুন, জিরা, ধনিয়া, হলুদ, মরিচ, গরম মসলা সব দিয়ে হাতে মেখে প্রয়োজনমতো পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। ১০ মিনিট মাঝারি আঁচে রান্না করুন। তারপর ৩০ মিনিট কম আঁচে রান্না করুন। মাংস ৮০ শতাংশ সিদ্ধ হলে আচার দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিয়ে আরও ১০ মিনিট রান্না করুন। ঝোল মাখা মাখা হলে নামিয়ে একটি মোটা ছাঁকনি দিয়ে ঝোল থেকে ছেঁকে ছেঁকে মাংস একটা বাটিতে তুলে রাখুন। মাংসের ঝোলসহ হাঁড়ি চুলায় দিন আবার।

এবার ধুয়ে পানি ঝরানো চাল, ডাল ঝোলে দিন। নেড়েচেড়ে ভাজুন এক মিনিট (এই চাল বেশি ভাজার প্রয়োজন নেই)। তারপর ৭ কাপ গরম পানি দিয়ে হাই ফ্লেমে পানি ফুটে ওঠা পর্যন্ত রান্না করুন। পানি ফুটে উঠলে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে কম আঁচে রান্না করুন কিছুক্ষণ। যখন দেখবেন চালে পানি মাখা মাখা হয়ে গেছে আর চাল প্রায় সিদ্ধ হয়ে এসেছে, এবার খিচুড়িতে মাংস যোগ করে দিন। হালকা হাতে মাংস ভালো করে মিশিয়ে ওপরে কাঁচামরিচ আর রসুনের কোয়া দিয়ে একটা তাওয়ায় হাঁড়ি রেখে ১০ মিনিট দমে রাখুন। এরপর খিচুড়ির ওপর বেরেস্তা ছিটিয়ে চুলা থেকে নামান। রেস্টে রাখুন ৫/১০ মিনিট। খোসাসহ রসুনের ভেতরটা সিদ্ধ ও নরম হয়ে যাবে। খিচুড়ি খাওয়ার সময় এ রসুন আলতো চাপ দিলে গলে ক্রিমি একটা টেক্সচার বের হয়, যা খেতে খুবই সুস্বাদু।

গরুর মাংসের ল্যাটকা খিচুড়ি

উপকরণ: গরুর মাংস ১ কেজি (ছোট টুকরো করা), পোলাওয়ের চাল ১ কেজি, মুগ ডাল ২৫০ গ্রাম, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদা বাটা ২ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, জিরা বাটা ১ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ১-২ চা চামচ (স্বাদমতো), গরম মসলার গুঁড়া ১ চা চামচ, তেজপাতা ২টি, এলাচ ৪-৫টি, দারুচিনি ২ টুকরো, লবঙ্গ ৪-৫টি, তেল পরিমাণমতো, পেঁয়াজ বেরেস্তা সাজানোর জন্য, কাঁচামরিচ কয়েকটি (স্বাদমতো), লবণ স্বাদমতো, পানি পরিমাণমতো।

প্রস্তুত প্রণালি: প্রথমে গরুর মাংস ধুয়ে নিন এবং একটি পাত্রে নিয়ে তাতে আদা, রসুন ও জিরা বাটা; হলুদ, মরিচ ও গরম মসশলার গুঁড়া, লবণ এবং সামান্য তেল দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে মেরিনেট করুন (কমপক্ষে ৩০ মিনিটের জন্য)। অন্য একটি পাত্রে মুগডাল হালকা ভেজে নিন, তবে খেয়াল রাখবেন যেন ডাল বেশি ভাজা না হয়ে যায়। চাল ও ডাল ধুয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। একটি বড় পাত্রে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি হালকা বাদামি করে ভেজে নিন। পেঁয়াজ ভাজা হয়ে গেলে মেরিনেট করা মাংস দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে নিন। মাংস কষানো হয়ে গেলে চাল ও ডাল দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে নিন। এবার পরিমাণমতো গরম পানি, তেজপাতা, এলাচ, দারুচিনি ও লবঙ্গ দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে মিশিয়ে দিন। লবণ চেখে প্রয়োজন অনুযায়ী মেশান।

পানি ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন এবং মাংস ও চাল ভালোভাবে সিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন। মাঝেমধ্যে নেড়ে দিন যাতে তলায় না লেগে যায়। যখন চাল ও মাংস ভালোভাবে সিদ্ধ হয়ে যাবে এবং খিচুড়ি ঘন হয়ে আসবে, তখন ওপরে পেঁয়াজ বেরেস্তা ও কাঁচামরিচ দিয়ে কিছুক্ষণ দমে রাখুন। গরম গরম পরিবেশন করুন গরুর মাংসের ল্যাটকা খিচুড়ি।

মন্তব্য করুন

টিপস / বর্ষায় শিশুর যত্ন
গরম থেকে স্বস্তি দেয় বৃষ্টি। তবে পরিবারের ছোট সদস্যকে এ মৌসুমে নিরাপদ ও আরামে রাখতে বড়দেরই সচেষ্ট হতে হয়। বর্ষাকালে শিশুদের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন, কারণ এ সময়ে আবহাওয়া আর্দ্র এবং বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। শিশুর পরিচ্ছন্নতা, পোশাক, খাদ্যাভ্যাস এবং পরিবেশের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি। সঠিক পোশাক পরানো বর্ষার শিশুর পোশাক যথাযথ হওয়া আবশ্যক। বাতাস চলাচল করে, হালকা তন্তু যা সহজে শুকিয়ে যায় এমন পোশাক পরানো উচিত। মোটা, ডেনিম পোশাকে ঘাম আটকে থাকে; ফলে শিশুর অস্বস্তি লাগে। পানিরোধী বা পানি প্রতিবন্ধক জ্যাকেট, রেইনকোট শিশুকে বৃষ্টি থেকে বাঁচায়। এ ছাড়া বাইরে যাওয়ার সময় শিশুর জন্য একসেট বাড়তি কাপড় সঙ্গে রাখা উচিত, যেন যখন-তখন বৃষ্টিতে শিশুর পোশাক বদলে নেওয়া যায়। ভেজা ডায়াপার এড়িয়ে চলা বর্ষাকালে ভেজা ডায়াপার শিশুর র্যাশ ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে। তাই ডায়াপার ভিজে উঠেছে কি না, তা কিছুক্ষণ পরপর দেখে নেওয়া প্রয়োজন। শিশুকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখতে ভেজা ডায়াপার পাল্টে দিতে হবে। আর হালকা, আরামদায়ক উন্নতমানের এবং রাসায়নিক উপাদানমুক্ত ডায়াপার ব্যবহার করাতে হবে। শিশুকে শুষ্ক ও র্যাশমুক্ত রাখতে দীর্ঘ শোষণ ক্ষমতাসম্পন্ন ডায়াপার ব্যবহার করতে হবে। অস্বস্তি ও ভেজাভাব কমাতে ডায়াপার র্যাশ ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রতিদিন গোসল করাবেন না বর্ষাকালে আবহাওয়া একটু ঠান্ডা থাকে, তাই প্রতিদিন শিশুকে গোসল করাবেন না। সপ্তাহে দুই-তিনবার গোসল করালেই হবে। একই সঙ্গে শিশুকে বাইরে নিয়ে যেতে হলে তাকে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করান। খাবার ও পানীয় বর্ষাকালে শিশুদের বিশুদ্ধ পানি পান করানো উচিত। রাস্তার খাবার বা অপরিষ্কার খাবার এড়িয়ে যাওয়া উচিত। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা শিশুর নিজস্ব পরিচ্ছন্নতার দিকে মনোযোগী হতে হবে। সাবান দিয়ে হাত ধোয়া জরুরি। বিশেষ করে খাবারের আগে এবং বাইরে খেলাধুলা করার পর। ময়লা ও জীবাণু থেকে সুরক্ষিত রাখতে শিশুর নখ কেটে ছোট রাখতে হবে। এ মৌসুমে শিশুকে মাটিতে বা নিচে খেলতে দিলে ব্যাকটেরিয়া, অণুজীবের সংক্রমণ ও সংবেদনশীলতার ঝুঁকি বাড়ে। ফলে ঘন ঘন মৌসুমি অসুখ যেমন—ঠান্ডা, কাশি ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। তাই মেঝেতে বসা রোধ করতে হবে। এ ছাড়া মশা থেকে বাঁচতে খেলাধুলা ও ঘুমানোর সময় বা মশারি বা মলম বা অন্যান্য প্রতিরোধক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আবহাওয়া বার্তা সম্পর্কে সচেতন থাকা বাইরে যাওয়ার আগে অবশ্যই আবহাওয়া বার্তা শুনে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে বের হতে হবে। বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলে বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দেওয়া অথবা বাইরে গেলেও শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে নিতে হবে। সম্ভব হলে শিশুকে ব্যস্ত রাখে এমন ঘরোয়া খেলা, বোর্ডগেম ইত্যাদির ব্যবস্থা করা যায়। শিশুর ত্বক আর্দ্র রাখা শুষ্ক বা চুলকানিযুক্ত ত্বকে অস্বস্তি হয়, ফলে শিশু খিটখিটে হয়ে যায়। এ সমস্যা কমাতে শিশুর ত্বক আর্দ্র রাখতে হবে। এজন্য রাসায়নিক উপাদানমুক্ত, প্রাকৃতিকভাবে আর্দ্রতা রক্ষাকারী উপাদানে তৈরি প্রসাধনী ব্যবহার করতে হবে। মশা থেকে সুরক্ষা বর্ষাকালে বাড়ে মশার উৎপাত, যা ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার মতো রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই মশার আক্রমণ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে জানালায় মশারি বা জাল লাগান। আর অবশ্যই ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন। এ ছাড়া কোনো কারণে শিশুর জ্বর, শারীরিক ব্যথা ও হাঁচির মতো উপসর্গ দেখলে অবহেলা করবেন না। দ্রুত শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ঘরের পরিবেশ শুষ্ক ও পরিচ্ছন্ন রাখা পরিষ্কার ও শুষ্ক ঘরের পরিবেশ শিশুর নিরাপত্তা ও সুস্থতার জন্য জরুরি। জীবাণুর বিস্তার এড়াতে শিশুর খেলনা পরিষ্কার ও জীবাণুরোধী করে নেওয়া প্রয়োজন। ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচল আর্দ্রতা ও জীবাণুর বিস্তার কমায়। সরাসরি ভেজা বা আর্দ্র স্থানে বসে থাকা সংবেদনশীলতা ও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। শিশুর থাকার স্থান পরিচ্ছন্ন ও শুষ্ক হলে শ্বাসনালির সমস্যাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস পায়।
বর্ষায় শিশুর যত্ন
ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায়
বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব। এটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু ও পোকামাকড় থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে। বর্তমানে চলছে বর্ষা মৌসুম। এ সময় মশার উপদ্রব বাড়ে, যা থেকে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়ে ডেঙ্গু। বাড়ির আশপাশে বা যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন। ঘরবাড়ির আনাচে-কানাচে পড়ে থাকা অপ্রয়োজনীয় পাত্রগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দিন। বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড় এবং আঙিনা পরিষ্কার রাখুন। ব্যবহারযোগ্য পাত্রগুলো যেমন—বালতি, ড্রাম, ফুলের ও গাছের টব, ফ্রিজ এবং এয়ার কন্ডিশনারের নিচে পানিভর্তি পাত্রে কোনোভাবেই যেন একনাগাড়ে পাঁচ দিনের বেশি পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখুন এবং প্রয়োজনে অপসারণ করুন। এ ছাড়া অব্যবহৃত গাড়ির টায়ার, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত চৌবাচ্চা, পরিত্যক্ত টিনের কৌটা, প্লাস্টিকের বোতল/ক্যান, গাছের কোটর, পরিত্যক্ত হাঁড়ি, ডাবের খোসায় যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। শরীরের উন্মুক্ত স্থানে মশা ও অন্যান্য পোকামাকড় প্রতিরোধক ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করুন। তবে এগুলো ব্যবহারের সময় শিশুর বয়স ও শিশুর ত্বকের জন্য ক্ষতিকর কি না, সে বিষয়ে লক্ষ রাখুন। প্রতিরোধক কেনার সময় প্যাকেটের গায়ে থাকা নির্দেশনা ভালোভাবে পড়ুন। শিশু ঘরের বাইরে যাওয়ার সময় তাদের যথাসম্ভব গা-ঢাকা পোশাক পরান। এ ক্ষেত্রে ফুলহাতা শার্ট ও টি-শার্ট, ফুল প্যান্ট, লম্বা ঝুলের ফ্রক, মোজা ও জুতা পরান। ঘুমের আগে আলসেমি লাগলেও মশারি টানিয়ে নিন। শিশু ও বৃদ্ধদের বিছানায় মশারি টানাতে ভুলবেন না। কিছু সুগন্ধ মশার একেবারেই অপছন্দ। বাজারে নানারকম সুগন্ধি তেল পাওয়া যায়। এসবের মধ্যে ল্যাভেন্ডার, ইউক্যালিপটাস, লেমনগ্রাস ও পিপারমিন্টের গন্ধ মশা সহ্য করতে পারে না। ঘরে এসব সুগন্ধ ব্যবহার করলে মশা দূরে থাকবে। এ ক্ষেত্রে নিমের তেল বেশ কার্যকর। মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে ঘুমানোর সময় ঘরের জানালা একেবারে বন্ধ করলে ঘরে বাতাস চলাচল ব্যাহত হয়। তাই সমাধান হিসেবে জানালায় লাগানোর জন্য নানা মাপের মশার জাল কিনে নেওয়া যেতে পারে। মশা আমাদের ঘামের গন্ধ অনুসরণ করে কামড় বসায়। তাই রাতে ঘুমানোর আগে গোসল করে নিলে ঘামের গন্ধ দূর হয় এবং মশার কামড় খাওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। এ ছাড়া বিছানার চাদর, বালিশ ইত্যাদিও গন্ধমুক্ত রাখতে হবে। ভেষজ কিছু গাছ আছে, যেগুলো ঘরে টবের মধ্যে সাজিয়ে রাখলে মশার আনাগোনা কমে। যেমন রোজমেরি, পুদিনা, ভুঁইতুলসী, ক্যাটনিপ, রসুনগাছ ইত্যাদি। ডেঙ্গুর লক্ষণ ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ—জ্বর। ৯৯ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠতে পারে। জ্বর টানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে দেওয়ার পর আবারও আসতে পারে। এর সঙ্গে শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ বা ফুসকুড়ি দেখা যায়। যা করবেন না ডেঙ্গু জ্বরের ক্ষেত্রে প্লাটিলেট এখন আর মূল বিষয় নয়। প্লাটিলেট হিসাব নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। প্লাটিলেট কাউন্ট ১০ হাজারের নিচে নামলে বা শরীরের কোনো জায়গা থেকে রক্তপাত হলে প্রয়োজন বোধে প্লাটিলেট বা ফ্রেশ রক্ত দেওয়া যেতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি খুবই কম দেখা যায়। অনেকে বলেন, পেঁপে পাতার জুস ইত্যাদি খেলে প্লাটিলেট বাড়ে। আসলে এসবের কোনো ভূমিকা নেই। জ্বর কমে যাওয়ার পর সংকটকাল পেরিয়ে গেলে আপনা থেকেই প্লাটিলেট বাড়তে শুরু করে। জ্বরের শেষের দিকে রক্তচাপ কমে যেতে পারে অথবা মাড়ি, নাক, মলদ্বার দিয়ে রক্তপাত হতে পারে। এরকম হলে প্রয়োজনে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়া লাগতে পারে। এসব ক্ষেত্রে তাই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। কখন যাবেন হাসপাতালে ডেঙ্গু হলে কী ধরনের চিকিৎসা নেবেন, বাসায় না হাসপাতালে থাকবেন—নির্ভর করে এর ধরন বা ক্যাটাগরির ওপর। ডেঙ্গু জ্বরের তিনটি ধরন বা ক্যাটাগরি আছে—‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’। প্রথম ক্যাটাগরির রোগীরা স্বাভাবিক থাকে। তাদের শুধু জ্বর থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়াই যথেষ্ট। ‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে। কিছু লক্ষণ, যেমন পেটে ব্যথা, বমি, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, অন্তঃসত্ত্বা, জন্মগত সমস্যা, কিডনি বা লিভারের সমস্যা থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ভালো। ‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বরে লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে। বাড়িতে কী করবেন পরিপূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। প্রচুর তরলজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস এবং খাবার স্যালাইন পান করুন একটু পরপর। ডেঙ্গু জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ আটটি প্যারাসিটামল খেতে পারবে। কিন্তু কোনো ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট ও কিডনিসংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন, ক্লোফেনাক, আইবুপ্রোফেনজাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় এ জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায়