কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত বছরের ২৯ জুলাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ নিহতদের স্মরণে রাষ্ট্রীয় শোক পালনের সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন সরকার।
তবে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার আন্দোলনকারীদের প্রতি সহমর্মিতা ও সরকারের প্রতি প্রতিবাদস্বরূপ চোখে-মুখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা ও ফেসবুকে নিজেদের প্রোফাইল লাল করার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ সামনে আনার পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আব্দুল কাদের এ নিয়ে ভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেছেন।
রোববার (৬ জুলাই) রাতে ফেসবুক নিজের অ্যাকাউন্টে এক পোস্টের মাধ্যমে তিনি এ বিষয়ে জানান। পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো—
পোস্টে কাদের বলেন, জুলাইয়ে আন্দোলনের শেষের দিকের কর্মসূচিগুলা অনেকের সাথে আলাপ আলোচনা কর ঠিক করা হইতো। এক্ষেত্রে শিবিরের সাদেক কায়েম এবং ছাত্রদলের রাকিব-নাসির ভাইয়ের সাথে আলোচনা করতাম। আগের দিন দুপুরের পর থেকে দফায় দফায় আলোচনা করে পরবর্তী দিনের কর্মসূচি ঠিক করা হইতো। তারই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে পরবর্তী দিন রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালন এবং কালো ব্যাজ ধারণের ঘোষণা দেয়।’
‘আমাদের কর্মসূচি ঠিক করতে গিয়ে শেষ বিকেলের দিকে নাসির ভাইয়ের সাথে আমার কথা হয়, সরকারের ঘোষিত শোক দিবস এবং কালো ব্যাজ ধারণের বিপরীতে আমাদের লাল ব্যাজ ধারণের প্রস্তাবনা দেন তিনি। রাকিব-নাসির ভাইয়ের সাথে এই বিষয়ে আমাদের একাধিকবার কথা হয়। পরে আমি সাদিক কায়েম ভাইকে ফোন দিয়ে বিষয়টা জানাই। তিনি বললেন, আলোচনা করে আমাকে জানাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি ফোন দিয়ে সম্মতি দেন। প্রতিদিন কর্মসূচি ফাইনাল করার আগে আমরা চারজন- আমি, মাসউদ, রিফাত, মাহিন আলোচনা করতাম। শিবির এবং ছাত্রদলের সাথে অনেক সময় গ্রুপ কলে মিটিং করে কর্মসূচি ফাইনাল করতাম।’
‘তারই ধারাবাহিকতায় ঐদিনও আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলাম। রিফাত বললো যে, “শোক দিবসের প্রতিবাদে আমরা কালো কাপড় চোখে মুখে বাঁধতে পারি”। আমি রিফাতকে নাসির ভাইয়ের আইডিয়ার কথা বললাম, লীগ যেহেতু কালো কাপড় দিছে, আমরা এইক্ষেত্রে লাল কাপড় বাঁধতে পারি। মাহিনও একই প্রস্তাব দিল।’
আব্দুল কাদের আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে গতানুগতিক ধারায় বারবার করে সাদিক ভাই এবং নাসির ভাইয়ের সাথে আলোচনা করে চোখেমুখে লাল কাপড় বাঁধার কর্মসূচি ফাইনাল করা হলো এবং ছবি তুলে প্রোফাইল পিকচার দেওয়ার আহবান জানানো হলো। যাদের কাছে লাল কাপড় নেই, তারা যেনো প্রোফাইল "লাল" করে, ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে সেই সময়ে রিফাত রশিদ দেশবাসীর প্রতি এমন আহবান জানিয়েছিলেন। প্রোফাইল পিকচারের সাথে বিভিন্ন হ্যাশট্যাগ জুড়ে দেওয়ার বিষয়ে সাদিক ভাই পরামর্শ দেন, পরামর্শের আলোকে তিনি কিছু হ্যাশট্যাগও দিয়ে দেন।’
এর আগে এই কর্মসূচির পেছনের পরিকল্পনা নিয়ে বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ। তিনি বলেন, রাষ্ট্র যখন গণহত্যার পরিবর্তে নাটকীয়ভাবে রাষ্ট্রীয় শোক ও কালো পতাকা উত্তোলনের ঘোষণা দেয়, তখন আবু সাদিক কায়েম আমার কাছে পরামর্শ চান। আমি তাকে বললাম, আমরা পাল্টা কর্মসূচি দেব। তারা যেহেতু কালো বেছে নিয়েছে, আমরা লাল বেছে নিই।
ফরহাদ আরও বলেন, আইডিয়াটি শেয়ার করার পর সাদিক কায়েম বললেন, এটা কার্যকর হতে পারে। এটাই চূড়ান্ত করা হলো। আমরা একটি প্রেস রিলিজ তৈরি করে সমন্বয়কদের কাছে পাঠাই, এবং তারা এটি ঘোষণা করেন। পরের দিন দেখলাম, সমাজের সব শ্রেণির মানুষ তাদের ফেসবুক প্রোফাইল লাল করে আপডেট করছেন। এমনকি ড. ইউনূস এবং খালেদা জিয়ার ফেসবুক পেজেও লাল প্রোফাইল শেয়ার করা হয়।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, রাষ্ট্র কালো পতাকার প্রতীক বেছে নিয়েছে, তাই আমরা লাল বেছে নিলাম। লাল রক্তের প্রতীক, যা দিয়ে আমরা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে পারি। এজন্য আমরা মুখে ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ এবং ফেসবুক প্রোফাইল লাল করার কর্মসূচি ঘোষণা করি।
ফরহাদ জানান, এই কর্মসূচির পেছনে বড় কারণ ছিল তখনকার পরিস্থিতি। আমরা তখন অনলাইন ও সফট কর্মসূচির ওপর নির্ভর করছিলাম। হার্ড কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে দেখা গেল, প্রচুর গ্রেপ্তার ও মামলা হচ্ছে। তাই আমরা সফট কর্মসূচির দিকে মনোযোগ দিই। লাল প্রোফাইল কর্মসূচি যখন ব্যাপক সাড়া পেল, তখন আমরা অনুপ্রাণিত হলাম এবং পরে মাঠের কর্মসূচিতে যাই। প্রায় এক সপ্তাহের সফট কর্মসূচির শেষ ধাপ ছিল এই লাল প্রোফাইল কর্মসূচি।
মন্তব্য করুন