বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২

পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে রহস্যময় বস্তু

কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৫, ১২:১৭ পিএম
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৩:৩২ পিএম
সম্ভাব্য ইন্টারস্টেলার ধূমকেতু ৩আই/ অ্যাটলাস। ছবি : সংগৃহীত
সম্ভাব্য ইন্টারস্টেলার ধূমকেতু ৩আই/ অ্যাটলাস। ছবি : সংগৃহীত

সৌরজগতে রয়েছে হাজার হাজার গ্রহ-নক্ষত্র। তারা নিজেদের আপন গতিতে চলাফেরা করছে। এর মধ্যে কোনো কোনো গ্রহের সন্ধান পাওয়া যায় আবার কোনোটা অজানাই থেকে যায়। তবে এবার আমাদের সৌরজগতের বাইরে মিলেছে অজানা এক বস্তু। এটি ক্রমেই ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, রহস্যজনক এ বস্তুটি পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে না। এটি পৃথিবী থেকে ন্যূনতম ১.৬ জ্যোতির্বিজ্ঞান ইউনিট (প্রায় ১৫০ মিলিয়ন মাইল) দূরত্বে থাকবে।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটি হতে পারে আমাদের সৌরজগতের বাইরের তৃতীয় আগন্তুক বস্তু। যার নাম ‘৩আই/অ্যাটলাস’। এটি একটি সম্ভাব্য ইন্টারস্টেলার ধূমকেতু। চিলির রিও হার্টাডো শহরে স্থাপিত অ্যাটলাস টেলিস্কোপের মাধ্যমে এটিকে প্রথম শনাক্ত করা হয় ।

নাসা জানিয়েছে, বস্তুটি প্রথম পর্যবেক্ষণে আসে ১৪ জুন, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ২ জুলাই তা প্রকাশ পায়। এরপর থেকেই জ্যোতির্বিদরা এর কক্ষপথ, গতি ও উৎস নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত। বস্তুটি বর্তমানে সূর্য থেকে প্রায় ৪১৬ মিলিয়ন মাইল দূরে এবং ধনু নক্ষত্রপুঞ্জের দিক থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৬০ কিমি গতিতে ছুটে আসছে।

এর কক্ষপথ অত্যন্ত বাঁকা ও খোলা প্রকৃতির (হাইপারবোলিক), যা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে এটি সম্ভবত আমাদের সৌরজগতের বাইরের এক আগন্তুক। এর আগে মাত্র দুটি ইন্টারস্টেলার বস্তুকে শনাক্ত করা গিয়েছিল—২০১৭ সালের ‘উমুয়ামুয়া’ এবং ২০১৯ সালের ‘২আই/বরিসভ’।

ব্রিটেনের সেন্ট্রাল ল্যাঙ্কাশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিদ ড. মার্ক নরিস বলেন, ‘যদি নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়, এটি হবে আমাদের শনাক্ত করা তৃতীয় ইন্টারস্টেলার বস্তু। এর মানে, গ্যালাক্সিতে এমন ‘ভ্রমণকারী’ বস্তুর সংখ্যা হয়তো আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি।’

প্রথমে বস্তুটির নাম ছিল আ১১পিএল৩জি, পরে সেটির মধ্যে ধূমকেতুর মতো বৈশিষ্ট্য দেখা গেলে এটি সি/২০২৫ এন১ (অ্যাটলাস) নামেও পরিচিত হয়। এর একটি ধোঁয়াটে আবরণ এবং একটি ছোট লেজ রয়েছে, যা সাধারণত ধূমকেতুর বৈশিষ্ট্য।

বস্তুটির আকার হতে পারে ২০ কিমি পর্যন্ত, যা সেই মহাকাশীয় শিলাটির চেয়েও বড়, যেটি পৃথিবীতে ডাইনোসরদের বিলুপ্তির কারণ হয়েছিল। তবে নাসা আশ্বস্ত করেছে, এটি পৃথিবীর জন্য কোনো হুমকি নয়। বস্তুটি পৃথিবী থেকে কমপক্ষে ১.৬ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট (প্রায় ১৫০ মিলিয়ন মাইল) দূরত্ব বজায় রেখেই চলবে।

এডিনবরার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কলিন স্নডগ্রাস বলেন, বস্তুটিকে বড় মনে হলেও, সেটির চারপাশে থাকা ধূলিকণা ও গ্যাসের কারণে আলোর প্রতিফলন বেশি হতে পারে। আসল বস্তুটি হয়তো আরও ছোট।

৩০ অক্টোবর নাগাদ এটি সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি যাবে। তখন সেটি মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথের ভেতর দিয়ে চলবে এবং তারপর আবার মহাশূন্যে হারিয়ে যাবে।

রয়্যাল অবজারভেটরি গ্রিনউইচের জ্যোতির্বিদ জেক ফস্টার বলেন, `বর্তমানে এটি খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়, তবে ২০২৫ সালের শেষ বা ২০২৬ সালের শুরুতে মাঝারি মানের টেলিস্কোপ দিয়েই এটি দেখা যাবে।'

যারা অপেক্ষা করতে চান না, তাদের জন্য ভার্চুয়াল টেলেস্কপ প্রোজেক্ট এই ধূমকেতুটিকে লাইভ সম্প্রচারের মাধ্যমে ইউটিউবে দেখানো হয়েছে বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) রাত ১১টায় (যুক্তরাজ্য সময়) ।

বিশ্বের বিজ্ঞানীদের কাছে এই বস্তুটি এখন গবেষণার এক অনন্য সুযোগ। এবং জ্যোতির্বিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে এটি শুধু একটি ধূমকেতু নয় বরং বহির্জগতের রহস্য উন্মোচনের এক সম্ভাব্য চাবিকাঠি।

তথ্যসূত্র : নাসা, বিবিসি, রয়াল ওবসারভেটরি গ্রিনউয়িচ

মন্তব্য করুন

কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের দুঃসংবাদ দিল ইউটিউব
বর্তমানে অনেকেরই ইউটিউবে নিজস্ব চ্যানেল রয়েছে। সেখানে তারা নানা ধরনের কনটেন্ট তৈরি করে প্রকাশ করে থাকেন। এই ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম এখন শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়; বরং অনেকের জন্য তা পরিণত হয়েছে স্থায়ী আয়ের উৎসে। কেউ কেউ ইউটিউব থেকে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। শুধু আয়ই নয়, অনেকে আবার হয়ে উঠেছেন পরিচিত মুখ বা তারকা।  ইউটিউব এবার কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য চালু করছে নতুন একটি নিয়ম, যা কনটেন্ট ত্রিয়েটরদের জন্য দুঃসংবাদ। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ইউটিউবার তাদের পুরোনো ভিডিও পুনরায় আপলোড করে সেই ভিডিও থেকে আর আয় করতে পারবেন না। আগামী ১৫ জুলাই থেকে ইউটিউব তাদের নিয়মে এই পরিবর্তন কার্যকর করতে যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ কেন এই সিদ্ধান্ত? এর পেছনে রয়েছে একটি বিশেষ কারণ। মূলত যারা মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি করছেন, তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার রোধ করতেই ইউটিউব এই নীতিমালা চালু করছে। অনেক ইউটিউবারই তাদের আগের প্রকাশিত ভিডিও নতুন করে আপলোড করে চ্যানেল থেকে অনৈতিকভাবে আয় করে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি এমন ঘটনাও সামনে এসেছে, যেখানে কিছু ইউটিউবার অন্যের তৈরি কনটেন্ট বা এআই-নির্ভর ভিডিও নিজের চ্যানেলে আপলোড করে আয় করছেন। এতে প্ল্যাটফর্মে নকল ও অনুপযুক্ত কনটেন্টের পরিমাণ বাড়ছে, যা ইউটিউবের মান ও বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত করছে। মূলত এ ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউটিউব। একই সঙ্গে, প্ল্যাটফর্মের মান, গুরুত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে এবং আরও উন্নত করতে এই পরিবর্তন আনা হচ্ছে।
কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের দুঃসংবাদ দিল ইউটিউব
চিকিৎসাক্ষেত্রে চীনা বিজ্ঞানীদের যুগান্তকারী সফলতা
ভাবুন তো, শরীরের কোনো অঙ্গ কেটে গেলে তা আবার আগের মতো গজিয়ে উঠছে। ধরুন আপনার হাত বা পা কেটে গেছে। কিন্তু আপনার শরীর নিজে নিজেই সেই ক্ষতস্থান সারিয়ে তুলছে। গল্পের মতো শোনালেও এবার বিজ্ঞান সেই পথে আগাচ্ছে। তবে এখনো এটি গবেষণাগারেই ইঁদুরের ওপর সফলতা পেয়েছে। মানবদেহে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ এখনো সময়সাপেক্ষ বিষয়। চীনা বিজ্ঞানীরা এবার এক যুগান্তকারী গবেষণায় দেখিয়েছেন, ইঁদুরের কানের ক্ষত পুনর্গঠনের পেছনে রয়েছে এক রহস্যময় ‘জেনেটিক সুইচ’। এবং তারা সেই সুইচ অন করে দেখিয়েছেন, অঙ্গ পুনর্জন্ম শুধু কল্পনা নয়, এটি বাস্তবেও সম্ভাব।  এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স-এ। এতে জানানো হয়, ইঁদুরের কানে ফুটো অংশ আবার নতুন করে গজিয়েছে, একেবারে ভেতরের কার্টিলেজসহ! এমন প্রমাণ আগে কখনও মেলেনি। গবেষণার অন্যতম বিজ্ঞানী ওয়াং ওয়ে, বর্তমানে বেইজিংয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিকাল সায়েন্সের সহকারী গবেষক। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে চাচ্ছি কীভাবে ইঁদুররা তাদের বিবর্তনের পথে এই পুনর্জন্মের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো জৈবিক কারণ আছে।’ গবেষণা বলছে, অঙ্গ পুনর্জন্মে মূল চাবিকাঠি এক রাসায়নিক ‘রেটিনয়িক অ্যাসিড’, যা তৈরি হয় ভিটামিন-এ থেকে। এটি শরীরের কোষকে নির্দেশ দেয়, কোথায় কীভাবে গঠন হতে হবে। আর এই উপাদানটি উৎপাদনের জন্য একটি নির্দিষ্ট জিন কাজ করে।  তিন বছর ধরে কাজ করেছেন ওয়াং ও তার দল। প্রতিবার নতুন জিনের পরীক্ষা করেও ফল না পেয়ে হতাশ হয়েছেন। অনেক সময় কিছু জিন ক্ষত সারানোর বদলে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু তারা হাল ছাড়েননি। অবশেষে একদিন মিলল সেই কাঙ্ক্ষিত জিন। এটি রেটিনয়িক অ্যাসিড তৈরির কৌশল জানে।  ওয়াং বলেন, ‘একটা মাত্র জিন এত বড় পরিবর্তন আনতে পারে তা দেখে আমরা রীতিমতো অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম।’ এই গবেষণায় ব্যবহার হয়েছে স্টেরিও-সিক নামের এক অভিনব প্রযুক্তি, যাকে গবেষকেরা বলেন ‘জীবনের ক্যামেরা’। এটি শুধু কোষের ছবি তোলে না, বরং দেখে কোন জিন কখন ও কিভাবে কাজ করছে। সহ-গবেষক ডেং জিচিং, বিজিআই রিসার্চের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী, বলেন, ‘এই প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা খুঁটিনাটি বুঝতে পেরেছি- আসলে কোন ধাপে কী ঘটছে। এটা যেন অঙ্গ পুনর্জন্মের পুরো মানচিত্র খুলে দিল।’ তবে এখনো পথ অনেক বাকি। মানুষের অঙ্গ ইঁদুরের মতো ছোট নয়। হৃৎপিণ্ড, মেরুদণ্ড বা লিভার- সবই জটিল এবং বিশাল। এবং একেক অঙ্গে একেক রকম সংকেতপ্রক্রিয়া কাজ করে। ওয়াং বলেন, ‘এই গবেষণা প্রমাণ দিয়েছে, জিনগত একটি সুইচ সত্যিই আছে, যা অঙ্গ পুনর্জন্ম চালু করতে পারে। এবার আমাদের কাজ, অন্যান্য অঙ্গের সেই সুইচগুলো খুঁজে বের করা।’ মানবদেহে এ প্রয়োগ এখনো সময়সাপেক্ষ হলেও বিজ্ঞানীরা আশাবাদী, একদিন হয়তো পঙ্গু মানুষকেও নতুন আশার আলো দেখাতে পারবে তাদের এ গবেষণা।
চিকিৎসাক্ষেত্রে চীনা বিজ্ঞানীদের যুগান্তকারী সফলতা
হোয়াটসঅ্যাপে নতুন দুই সুবিধা চালু
বর্তমানে বিভিন্ন অ্যাপে বার্তার মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ করেন অনেকেই। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে অপরিচিত ব্যক্তিদের পাঠানো সব বার্তার উত্তর দেওয়া সব সময় সম্ভব হয় না। এ সমস্যা সমাধানে মেটা এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) চ্যাটবটের মাধ্যমে অন্যদের পাঠানো সব বার্তার সারসংক্ষেপ জানার সুযোগ চালু করেছে হোয়াটসঅ্যাপ। এতে বার্তাগুলো না পড়েই উল্লেখযোগ্য তথ্য জানার সুযোগ পাবেন ব্যবহারকারীরা। হোয়াটসঅ্যাপের তথ্যমতে, মেটার প্রাইভেট প্রসেসিং প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অন্যদের পাঠানো সব বার্তার সারসংক্ষেপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে লিখে দেবে ‘মেটা এআই’ চ্যাটবট। এআই প্রযুক্তির ‘এআই মেসেজ সামারি’ সুবিধাটি ঐচ্ছিক হওয়ায় ব্যবহারকারীরা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী চালু বা বন্ধ করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারীদের জন্য সুবিধাটি চালু করা হয়েছে। বছরের শেষ নাগাদ অন্যান্য দেশে সুবিধাটি চালু করা হবে। হোয়াটসঅ্যাপ বিজনেস ব্যবহারকারীদের জন্যও ভয়েস কলের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। এত দিন এ সুবিধা শুধু ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করা গেলেও, এবার বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ভয়েস কল করতে পারবে। এর ফলে গ্রাহকরা সরাসরি ফোন করে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোও গ্রাহকের নম্বরে কল করে বিভিন্ন সেবা দিতে পারবে। হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে, ভয়েস কলের পাশাপাশি ভয়েস বার্তা আদান-প্রদানের সুযোগও শিগগিরই চালু করা হবে। মেটা আরও জানিয়েছে, ভয়েস কল ও বার্তার সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ভয়েস এজেন্ট যুক্ত করা যাবে। প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তৈরি এআই ভয়েস এজেন্ট যুক্ত করে হোয়াটসঅ্যাপেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রাহকসেবা পরিচালনা করতে পারবে। সূত্র : দ্য ভার্জ, টেক ক্র্যাঞ্চ
হোয়াটসঅ্যাপে নতুন দুই সুবিধা চালু
রাজনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ ‘এআই প্রোপাগান্ডা’
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বাড়ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার। তরুণ রাজনৈতিক কর্মীদের হাত ধরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রযুক্তির ব্যবহার বহুগুণে বেড়েছে। বিশেষ করে বহুপ্রতীক্ষিত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোয় এআই দিয়ে তৈরি নানা ধরনের ভিডিও ও ছবির জোয়ার দেখা যাচ্ছে। এসব ভিডিও বা ছবির মাধ্যমে যেমন রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে, তেমনি একপক্ষ আরেকপক্ষের বিরুদ্ধে ‘প্রোপাগান্ডা’ ছড়ানোর কৌশল হিসেবেও এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও বা ছবি ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রবণতা একদিকে যেমন ডিজিটাল অপতথ্যের প্রবাহ বাড়াচ্ছে, তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবমূর্তিকে করছে বিতর্কিত। তবে এই ডিজিটাল অপতথ্যের প্রবাহ মোকাবিলায় নিজস্ব কর্মীদের নিয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। গত বছর ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর থেকে দেশের অন্যতম প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে জড়িয়ে অনলাইনে চলছে নানা প্রচার-প্রচারণা। গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম শক্তি তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠনের পর দলটির নেতাকর্মীদের নিয়েও অনলাইনে নানা কার্যক্রম দেখা যায়, যার একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে নেতিবাচক প্রচারণা। আর এসব প্রচার-প্রচারণায় বা অপতথ্যের প্রচারে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে এআই দিয়ে তৈরি ভিডিও ও ছবি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অন্যতম প্রধান প্ল্যাটফর্ম ফেসবুককেন্দ্রিক এসব অপপ্রচারের জন্য বিএনপিকর্মীরা জামায়াত-শিবির ও এনসিপি নেতাকর্মীদের দায়ী করছেন। অন্যদিকে, জামায়াত-শিবির ও এনসিপি নেতাকর্মীরা এসব অপপ্রচারের জন্য বিএনপি ও পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দায়ী করছেন। এসব নিয়ে ফেসবুকের কমেন্ট বক্সে তুমুল বিবাদেও জড়াচ্ছেন বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরা। অপতথ্য নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান ডিসমিস ল্যাবের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, শুধু প্রতিপক্ষের বিরোধিতা বা অপপ্রচার নয়, আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করেন দলের প্রতি জনসমর্থন বাড়াতেও এআই ভিডিওর আশ্রয় নিচ্ছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি কালবেলাকে বলেন, ‘বিএনপি একটি গণমানুষের দল। সাধারণ মানুষকে নিয়ে আমরা সার্বক্ষণিকভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে আমাদের দলের কর্মসূচি ও কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছি। এ মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এআই দিয়ে অনেক ফলস ও ফেক নিউজ চলে আসছে। এ কারণে দেশ, দল ও রাজনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এআইয়ের মাধ্যমে যেসব ফলস নিউজ আসছে, সেগুলোর কাউন্টার ন্যারেটিভ তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের অ্যাকটিভিস্টদের দ্বারা যেখানে প্রতিবাদ করা দরকার, সেখানে প্রতিবাদ করছি। তবে এআইয়ের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করে সাধারণ মানুষের রাজনীতি করা যায় না।’ বিএনপির এই নেতা জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিএনপির যারা কাজ করছেন তারা এ সব ন্যারেটিভ মোকাবিলায় সক্রিয় আছেন। কেউ যদি এআই ব্যবহার করে বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো ন্যারেটিভ তৈরি করতে চায়, সেখানে বাস্তবতার আলোকে কাউন্টার ন্যারেটিভ তুলে ধরতে বিএনপিকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের কালবেলাকে বলেন, সাইবার স্পেসে রাজনৈতিক প্রচারণা ও প্রোপাগান্ডা নিয়ে কীভাবে কাজ করা যায়, তা নিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা চলছে। রাজনৈতিক বা নির্বাচনী প্রচারে এআই ব্যবহার করা কোনো সমস্যা নয়, তবে কেউ যদি এর মাধ্যমে হিংসাত্মক ও ভুল তথ্য উপস্থাপন করে, তা দল ও রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য হুমকি। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব কালবেলাকে বলেন, এআই দিয়ে তৈরি প্রোপাগান্ডা ও ভুয়া কনটেন্ট রাজনৈতিক সহনশীলতাকে ব্যাহত করবে। এনসিপিতে যেহেতু অধিকাংশ নেতৃত্বই তরুণ, তাই তারা এ ধরনের প্রোপাগান্ডা ডিবাঙ্ক (মিথ্যা প্রমাণ) করতে কাজ করে যাচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ফাহিম মাশরুর কালবেলাকে বলেন, প্রযুক্তির এ সময়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে এআই দিয়ে তৈরি প্রচারণা আটকে রাখা সম্ভব নয়। তবে এক্ষেত্রে ভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতি ইঙ্গিত করে নেতিবাচক ও হিংসাত্মক কনটেন্ট প্রচার থেকে বিরত থাকা উচিত। এগুলো আসলে নেতাকর্মীরা করে থাকেন, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত নেতাকর্মীদের এ ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন করা। কারণ তরুণরা এসব বিষয়ে সচেতন হলেও যাদের প্রযুক্তি জ্ঞান কম, তাদের অনেকেই এআই দ্বারা প্রচারিত তথ্যের কারণে বিভ্রান্ত হতে পারেন।
রাজনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ ‘এআই প্রোপাগান্ডা’
১৮ বছরেও সন্তান হয়নি, এক ঘণ্টায় ফলাফল দিল এআই
১৮ বছরেও সন্তান হয়নি, এক ঘণ্টায় ফলাফল দিল এআই