বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২

বিএনপির সামনে ৫ কঠিন পরীক্ষা

চলমান রাজনীতি
শফিকুল ইসলাম
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর -০০০১, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৩:০৪ পিএম
বিএনপির সামনে ৫ কঠিন পরীক্ষা

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাজনীতির মাঠে বিএনপিকে এখন সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে সময় যত গড়াচ্ছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দলটির সামনে নিত্যনতুন ইস্যু তৈরি হচ্ছে। সবকিছু বিবেচনায় বিএনপির সামনে এখন পাঁচটি চ্যালেঞ্জ বা কঠিন পরীক্ষা এসে হাজির হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে- জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি; দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানো; পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি; সংস্কার নিয়ে চূড়ান্ত ঐকমত্যে না পৌঁছানো এবং ইসলামী দলগুলোর সম্ভাব্য জোট।

এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের পাশে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে যুগপতের শরিক দল ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা। প্রয়োজনে নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির মাধ্যমে হলেও মিত্রদের আস্থায় রাখবে বিএনপি। পরিস্থিতি বুঝে অন্য দলগুলোকেও পাশে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হবে। পাশাপাশি মূলধারার ইসলামী দলগুলোর সম্ভাব্য জোট নিয়েও পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপির হাইকমান্ড। বিএনপি ও যুগপতের শরিক সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে।

জাতীয়, না স্থানীয় নির্বাচন বিতর্ক:

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। এরপর বিভিন্ন মহল থেকে রাষ্ট্রের অতিপ্রয়োজনীয় খাতে সংস্কারের দাবি ওঠে। তা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শুরু থেকেই বলছিলেন সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই তারা জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবেন। প্রথমে তিনি বলেছিলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যেই নির্বাচন হবে। তবে অনেক দল সরকারের সেই ঘোষণায় আস্থা রাখতে পারেনি। একপর্যায়ে কোরবানির ঈদের আগের দিন ৬ জুন প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই মাসেই একটি ‘জুলাই সনদ’ প্রস্তুত করে জাতির সামনে উপস্থাপনের আশাবাদ প্রকাশ করেন। নির্বাচনের মাস নির্ধারণ নিয়ে দলগুলোর মাঝে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

সমালোচনার মধ্যেই গত ৯ জুন চার দিনের সফরে যুক্তরাজ্য যান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে ১৩ জুন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন তিনি। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এ নিয়েও দলগুলোতে অস্বস্তি রয়েছে। কারণ নির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের দিনক্ষণ উল্লেখ করা হয়নি। তা ছাড়া বিএনপি ও যুগপত আন্দোলনের মিত্র দলগুলো বাদে অন্যান্য দল জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি তুলেছে। সূত্রমতে, ঢাকাসহ বিভিন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন ও সরকার। অর্থাৎ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে নাকি স্থানীয় নির্বাচন আগে, সেই ইস্যুর সমাধান এখনো হয়নি, যা বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ মনে করা হচ্ছে।

দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল: সময় যতই যাচ্ছে, কমিটি গঠন নিয়ে মতবিরোধ, আধিপত্য বিস্তার, দখলসহ নানা কারণে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল আরও প্রকাশ্য হচ্ছে। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এরই মধ্যে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এবং হামলা-সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী খুন হয়েছেন। আহত হয়েছেন অসংখ্য। একই সঙ্গে দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর বিএনপির হাইকমান্ড। ১১ মাসে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজারের মতো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। অর্থাৎ দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব সামলানোটাও বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কালবেলাকে বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, দলের নামে যে কেউ যে কোনো ধরনের অনৈতিক, অবৈধ, সন্ত্রাসী, সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ড করবে, সে রেহাই পাবে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব ব্যাপারে একেবারে জিরো টলারেন্স। তাৎক্ষণিক তদন্ত করে এবং ভিডিও-অডিও সবকিছু পরীক্ষা করে যদি দেখা যায় কেউ দায়ী, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিন্দুমাত্র বিলম্ব করছি না। রিজভী বলেন, সারা বাংলাদেশে কোথায় কারা কী করছে খবর নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এরই মধ্যে ৪-৫ হাজার বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই ক্ষেত্রে বিএনপি এবং এর নেতারা আপসহীন।

আলোচনার নতুন ইস্যু পিআর পদ্ধতির নির্বাচন:

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন, নির্বাচনের পদ্ধতি, সংস্কারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে চরম অস্পষ্টতা, অনাস্থা ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। এরই মধ্যে নতুন ইস্যু হিসেবে আলোচনায় রয়েছে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন। তবে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি পিআর পদ্ধতির ঘোর বিরোধী। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল এই পদ্ধতির পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। ফলে পিআর পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর পক্ষে-বিপক্ষের বক্তব্য রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। এরই মধ্যে সংস্কার, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে গত ২৮ জুন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। ওই সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ বিভিন্ন ইসলামী দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। ওই সমাবেশে অংশ নেওয়া দলগুলো নির্বাচন ও সংস্কার—দুই বিষয়ে বিএনপির অবস্থানের বিপরীতে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করছে। সেদিন পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের দাবিতে গণভোট দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর)।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫৫টি। এর মধ্যে বিভিন্ন কারণে চারটি দলের নিবন্ধন বাতিল এবং আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। ফলে ৫০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১৮টি দল পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের পক্ষে। বিপক্ষে অবস্থান ২৮টি দলের। চারটি দল তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। কিছু দল আংশিকভাবে এই পদ্ধতির পক্ষে। বিপক্ষে থাকা দলগুলো মূলত বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী। এর বাইরে জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) পিআর পদ্ধতির পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে।

সংস্কার নিয়ে চূড়ান্ত ঐকমত্যে না পৌঁছানো: দায়িত্ব গ্রহণের পর অন্তর্বর্তী সরকার সম্ভাব্য সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে প্রথমে ছয়টি এবং পরে আরও পাঁচটিসহ মোট ১১টি বিষয়ে কমিশন গঠন করে। কমিশনগুলোর সুপারিশমালা এরই মধ্যে পৃথকভাবে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের ছয়টি কমিশনের সুপারিশমালা নিয়ে তখনই জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাদের সুপারিশের কোনোগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো সবাই একমত কিংবা ভিন্নমত থাকলে তা কোথায় এবং আলোচনার মাধ্যমে মতভেদ দূর করার চেষ্টা এখনো চলছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় পর্যায়ে নবম দিনের আলোচনায় ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৈঠকে ঢাকার পাশাপাশি বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। এ ছাড়া সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদর্শনের বিদ্যমান বিধান সংশোধনের বিষয়ে দলগুলো সম্মতি জানিয়েছে। এ পর্যন্ত সংবিধানের ৭০নং অনুচ্ছেদ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা-সম্পর্কিত বিধান এবং বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ বিষয়ে আলোচনা নিষ্পত্তি হয়েছে। আরও কিছু বিষয়ে অনৈক্য থাকায় আগামী ৭ জুলাই ফের আলোচনার দিন ধার্য করা হয়েছে।

ইসলামী দলগুলোর সম্ভাব্য জোট: ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ইসলামী দলগুলো চায় একক প্রার্থী ঘোষণা করতে। সেই লক্ষ্যে নির্বাচনী জোট কিংবা বৃহত্তর সমঝোতার দিকে এগোচ্ছে দলগুলো। এ নিয়ে পর্দার আড়ালে চলছে নানামুখী তৎপরতা। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন ইসলামী দলকে একই প্ল্যাটফর্মে আনতে কাজ করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সর্বশেষ গত ২৮ জুন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সমাবেশে কয়েকটি ইসলামী দলের নেতাদের বক্তব্যে নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে অংশ নেওয়ার কথা প্রকাশ পায়। এটাকে নির্বাচন সামনে রেখে ইসলামপন্থি দলগুলোর একই প্ল্যাটফর্মে আসার প্রস্তুতিপর্ব হিসেবেও দেখা হচ্ছে। মূলত যেসব দলের নিবন্ধন এবং ভোটব্যাংক রয়েছে, সেসব দলই এই সমঝোতা প্রক্রিয়ায় থাকছে। অর্থাৎ আটটি ইসলামী দলের মধ্যে সমঝোতা হবে। মধ্যপন্থি দল যেমন এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপিকেও জোটে আনার ক্ষেত্রে আলোচনা চলছে। গত মঙ্গলবার জামায়াত ও গণঅধিকার পরিষদের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে নির্বাচনী জোট, পিআর পদ্ধতির নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তা ছাড়া আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ছোট দলগুলোর গুরুত্ব কমে যাবে- এমন আশঙ্কা এবং সংস্কার বিষয়ে তাদের অবস্থান ইসলামপন্থি দলগুলোকে জোটবদ্ধ হওয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

যুগপতের মিত্রদের নিয়ে বৈঠক অব্যাহত: আগামী নির্বাচন ঘিরে যে কোনো সংকট মোকাবিলায় অতীতের মতো যুগপৎ আন্দোলনে থাকা মিত্র দলগুলোকে পাশে চায় বিএনপি। সেজন্য আগামী নির্বাচনে তাদের ‘যৌক্তিক’ সংখ্যক আসন ছেড়ে দেবে। এ ক্ষেত্রে ‘যোগ্যতা’ ও ‘গ্রহণযোগ্যতা’ অনুযায়ী কোনো কোনো নেতাকে সংসদের উচ্চকক্ষেও স্থান দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে দলটির নীতিনির্ধারকদের। বিএনপি ও সংশ্লিষ্ট সূত্র এমনটি জানিয়েছে। বিএনপি ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে মিত্রদের ৫৯টি আসন ছেড়েছিল। এবারও যুগপৎ আন্দোলনের মিত্রদের সর্বোচ্চ অর্ধশত আসনে ছাড় দিতে পারে দলটি।

বিএনপি যা বলছে: ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়া না হওয়া, পিআর পদ্ধতি অনুসরণ করাসহ নিত্যনতুন বিষয় সামনে আসছে। বিএনপি এসব বিষয়ে কী ভাবছে বা কী করবে, সে প্রসঙ্গে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ‘দেশের জন্য টক্সিক (বিষাক্ত) পরিবেশ তৈরি করা ভালো না। আমাদের মাঝে পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধ না থাকলে হাজার সংস্কার (রিফর্ম) করলেও কোনো লাভ হবে না।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি রাজনৈতিক দলের কথা বলার অধিকার রয়েছে, কিন্তু সিদ্ধান্ত নেবে দেশের জনগণ। আমরা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করলে আগামী নির্বাচনে এটা (পিআর) জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে। জনগণ যদি ম্যান্ডেট দেয়, তারা সেটি করুক আমাদের কোনো সমস্যা নেই। গণতন্ত্র হলো জনগণের মতের প্রতিফলন। সেটি যদি কেউ ফেস না করে নিজের সুবিধামতো কিছু করতে চায়, তাহলে তো সেটি গণতন্ত্র হলো না। কোনো সংস্কার বা পরিবর্তন করতে হলে সংসদের মাধ্যমে এবং গণতন্ত্রের দ্বারা করতে হবে।’

সংস্কার প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, ‘বিএনপি অনেক বিষয়ে একমত হয়েছে। আমরা একটা কথা বারবার বলছি, সব বিষয়ে ঐকমত্য হবে না, আমরা বাকশাল করতে যাচ্ছি না। যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেসব বিষয়ে সংস্কার হবে। এর বাইরে যেগুলো থাকবে, প্রতিটি দল জনগণের কাছে গিয়ে মতামতের মাধ্যমে সেটা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘যারা আমাদের সঙ্গে রাজপথে ছিল, তাদের সঙ্গে আমরা আবার কথাবার্তা বলছি। আমাদের ঐক্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু নির্বাচন বলে কথা নয়, ৩১ দফা ও সংস্কারের বিষয়ে যে ঐকমত্য, এটা আমরা কীভাবে আগামী দিনে বাস্তবায়ন করব। নির্বাচন-পরবর্তী জনগণ যদি আমাদের রায় দেয়, সবাই মিলে এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমার মতের সঙ্গে যে কেউ দ্বিমত পোষণ করতে পারে। সেটাকেও সম্মান জানাতে হবে।’

মন্তব্য করুন

তারেক রহমান / আওয়ামী লীগের দমনপীড়ন ছিল ইয়াজিদের মতো
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া নিষ্ঠুর আওয়ামী নেতাদের পৈশাচিক দমনপীড়ন ছিল ইয়াজিদ বাহিনীর সমতুল্য। গত ১৬ বছরে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার সব ভাঁওতাবাজির নির্বাচন, মানুষের ভোটাধিকার হরণ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, সন্ত্রাস, হানাহানি ও দেশের টাকা বিদেশে পাচারসহ এক অবর্ণনীয় শোষণ ও জুলুমের রাজত্ব কায়েম করেছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায়ে সাজা দিয়ে কারারুদ্ধ রাখা এবং তাকে সুচিকিৎসা বঞ্চিত করে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছিল। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে গতকাল শনিবার এক বাণীতে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। বিএনপির শীর্ষ এই নেতা আরও বলেন, আজও ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার ঘনিষ্ঠজনের আত্মদানের চেতনায় দেশে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। আর কোনোভাবেই যাতে নির্দয় অত্যাচারীর অভ্যুদয় না ঘটে সেজন্য ইমাম বাহিনীর যুদ্ধ আমাদের সবসময় প্রতিরোধের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করবে। আমি শহীদ হজরত ইমাম হোসেন (রা.), তার শহীদ পরিবার ও সঙ্গীদের শাহাদাতের স্মরণে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং রুহের মাগফিরাত কামনা করি। বিবৃতিতে আশুরার তাৎপর্য তুলে ধরে তারেক বলেন, ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্য অত্যন্ত ঘটনাবহুল ও স্মরণীয় একটি দিন ১০ মহররম। বিশ্বের ইতিহাসে এ দিনটিতে অসংখ্য ঘটনা সংঘটিত হয়। তাই এ দিনটির মহিমা অসীম। এক বিয়োগান্তক বিষাদময় ঘটনার স্মৃতিবিজড়িত এইদিন, যা পবিত্র আশুরা হিসেবে পালন করা হয়। অন্যায় অবিচার জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এ দিনে কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতবরণ করেছিলেন। এই দিন শোক, শ্রদ্ধা ও আত্মত্যাগের দিন। জাগতিক অন্যায় ও দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং ইমাম হোসাইন (রা.)-এর আত্মত্যাগ বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ার মুসলমান ও বিশ্ববাসীর জন্য এক মহিমান্বিত অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। ইমাম হোসাইনের কষ্ট ও শাহাদাত এবং ইসলাম বাঁচিয়ে রাখার জন্য তিনি যে আত্মত্যাগ করেছিলেন, তা দুনিয়ায় এক বিশাল প্রেরণার উৎসস্থল হিসেবে বিবেচিত হয়। অন্যদিকে সৃষ্টিকর্তা কেন্দ্রিক ন্যায়বিচার, তাকওয়া, ত্যাগ ও মানবিক মর্যাদার মর্মবাণী প্রকাশিত হয়। তারেক রহমান আরও বলেন, হজরত হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত অন্যায়, অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক নজিরবিহীন আদর্শিক সংগ্রামের উদাহরণ। ক্ষমতার প্রতি নিবিড় নিবিষ্ট মোহে আচ্ছন্ন থেকে যারা ইনসাফ ও মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করেছিল তাদের বিরুদ্ধেই ইমাম বাহিনী যুদ্ধে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিল। কারবালায় ইমাম বাহিনীর শাহাদাতবরণ সর্বকালে দেশে দেশে অত্যাচারীর কবল থেকে মুক্ত হতে নিপীড়িত মজলুম মানুষকে উদ্দীপ্ত করে আসছে।
আওয়ামী লীগের দমনপীড়ন ছিল ইয়াজিদের মতো
গাজায় কি আবারও ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এর আগে বেশ কয়েকবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও ইসরায়েল ও হামাস দুই পক্ষই নিজেদের দাবির প্রতি অনড় অবস্থানে ছিল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধ শুরুর প্রথম থেকেই হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েল সংঘাত শেষে যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক চাপের মুখে সে লক্ষ্য থেকে তাকে কিছুটা সরে আসতে হচ্ছে। অন্যদিকে, গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য হামাস আলোচনা করার সদিচ্ছা সব সময় দেখালেও ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উত্থাপনের পর ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে ইসরায়েল। শুরুতে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে স্পষ্ট মন্তব্য না করলেও এবার অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে হামাসও। চির অস্থিতিশীল ভূখণ্ডটিতে চলতি মাসেই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং ইসরায়েলের যুদ্ধবিষয়ক লক্ষ্য পরিবর্তিত হওয়ায় এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের ইতিহাস বিবেচনা করলে প্রশ্ন জাগে, এবারও কি একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হবে কি না। দুই দেশের মধ্যে সংকটের শুরু ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের পার্টিশন পরিকল্পনার মাধ্যমে। এরপর ১৯৪৮ সালে নিজেদের স্বাধীন দেশ বলে ইসরায়েল ঘোষণা দিলে মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম আরব যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এক বছর পর ১৯৪৯ সালে একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তির মাধ্যমে এ যুদ্ধের অবসান ঘটে। কিন্তু ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের সহিংসতা থামেনি। ১৯৬৭ সালে গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীর দখলে নেয় ইসরায়েল। এ ঘটনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ জরুরিভিত্তিতে একটি শান্তি প্রস্তাব পাস করলে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হয়। এরপর ১৯৭৯ সালে ইয়োম কিপুর যুদ্ধ ও ১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদা সংগঠিত হলে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আরব দেশগুলো আর ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা হয়। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি মেলেনি। বিশেষত ১৯৯১ সালের অক্টোবরে স্পেনের মাদ্রিদে শুরু হওয়া শান্তি আলোচনা দুই বছরেও কোনো সমাধান তৈরি করতে পারেনি। অবশেষে ১৯৯৩ সালে অসলো শান্তিচুক্তির মাধ্যমে গাজা উপত্যকার কিছু অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় ইসরায়েল। অসলো শান্তিচুক্তির পর ১৯৯৪ সালের মে মাসে গাজা-জেরিকো সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয় এবং এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনে পুলিশ বাহিনী ও আইনি কাঠামো গঠনে ইসরায়েল সহযোগিতা করার আশ্বাস দেয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন আলোচনা হয়েছে। ২০২৩ সালে শুরু হওয়া হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৯ বার যুদ্ধবিরতি আলোচনা হয়েছে। গাজায় দুবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও তা ক্ষণস্থায়ী ছিল। এবারের যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত এ যুদ্ধবিরতির বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি। এর আগের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের মতো এবারও যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে আট ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। অন্যদিকে, ইসরায়েলে কারাবন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেবে ইসরায়েল। তবে কতজনকে মুক্তি দেওয়া হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। হামাস দাবি জানিয়েছে, এবার বন্দিবিনিময়ের সময় কোনো প্রোপাগান্ডা যেন না ছড়াতে পারে, সেজন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। এ ছাড়া গাজায় জাতিসংঘ পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে শুরু করার শর্তও দিয়েছে হামাস। গতকাল শনিবার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী ও দলের সঙ্গে পরামর্শ শেষে গতকাল শনিবার হামাস গাজায় যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার কথা জানিয়েছে। টেলিগ্রামে পোস্ট করা একটি বিবৃতিতে হামাস বলেছে, তারা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে একটি ইতিবাচক জবাব জমা দিয়েছে এবং যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার নতুন পর্বে তাৎক্ষণিকভাবে অংশ নিতে পুরোপুরি প্রস্তুত আছে। সংস্থাটি চুক্তির সামগ্রিক কাঠামো মেনে নিলেও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের অনুরোধ জানিয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি বিষয়ক আলোচনা ভেস্তে গেলে আবার হামলা শুরু করা যাবে না—এমন নিশ্চয়তা যুক্তরাষ্ট্রকে দিতে হবে। অর্থাৎ এখনো পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারেনি হামাস। এদিকে সংস্থাটির সাড়া পাওয়ায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। গত ২৪ জুন কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকেই গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জোরদার হতে শুরু করে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সিএনএনকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতির মাধ্যমেই হামাস-ইসরায়েল আলোচনার পথ সুগম হয়েছে। এ ছাড়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সহিংসতার জন্য নেতানিয়াহুর ওপরও আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে শুরু করেছে। চলতি বছর মার্চে গাজায় অবরোধ দেওয়ার পর বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ত্রাণ সরবরাহ শুরু করে ইসরায়েল। কিন্তু ত্রাণ সংস্থাটি যেন ফিলিস্তিনিদের জন্য মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে ১৩০টিরও বেশি দাতব্য সংস্থা এই সংস্থার কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। গতকাল শনিবারও ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৪৭ জন ত্রাণপ্রত্যাশী নিহত হন। অন্যদিকে, ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও চাপের মুখে নেতানিয়াহু। নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থি সরকার গাজায় সহিংসতার পক্ষে। কিন্তু দেশটির বিরোধী দলের নেতা ইয়াইর লাপিদ জানিয়েছেন, জিম্মি মুক্তি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য তিনি জোট সরকার গড়তেও আগ্রহী। এমনকি ইসরায়েলের অসংখ্য জরিপেও যুদ্ধ বন্ধ করে হলেও জিম্মি মুক্তির বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। এসব চাপের মুখেই গত সপ্তাহে অনেককে চমকে দিয়ে নেতানিয়াহু জিম্মি মুক্তির বিষয়টিকে তার প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তার এই ঘোষণা জিম্মিদের পরিবারের কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছে। চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীও কূটনৈতিক পন্থায় সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, হামাসের যোদ্ধা নিয়মিত অভিযানে অনেক কমে গেছে। তাই গাজায় কৌশলগত পদ্ধতি প্রয়োগ করে কোনো লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না। অর্থাৎ আলোচনার উপযুক্ত মঞ্চ তৈরি হয়েছে। যদি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দাবিতে আলোচনা ভেস্তে না যায়, তাহলে আগামী সপ্তাহেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হতে পারে।
গাজায় কি আবারও ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি
আজ পবিত্র আশুরা শোক ও ত্যাগের মহিমাময় দিন
আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। মুসলিম বিশ্বে এক শোকাবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। আরবিতে ‘আশারা’ অর্থ দশ। সেখান থেকেই মহররমের ১০ তারিখকে ‘আশুরা’ বলা হয়। সৃষ্টির শুরু থেকে নানা ঐতিহাসিক ঘটনার কারণে হিজরি মহররম মাসের দশম দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনে আল্লাহ তায়ালা হজরত মুসা (আ.) ও তার অনুসারীদের ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন এবং ফেরাউনকে নীল নদে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এই দিনেই আল্লাহ আরশ, কুরসি, লওহ, কলম, আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। হজরত আদম (আ.)-কে এই দিনেই সৃষ্টি করা হয় এবং শয়তানের প্ররোচনায় ভুল করার পর তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয় এবং পরে আল্লাহর প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়। এ ছাড়া হজরত নূহ (আ.)-এর মহাপ্লাবনের পর নৌকা এই দিনেই নোঙর করে। হজরত ইব্রাহিম (আ.) শত বিধিনিষেধের মধ্যে এই দিনেই জন্মগ্রহণ করেন। এই দিনেই কারবালার প্রান্তরে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার সঙ্গীরা শাহাদাত বরণ করেন, যা বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের কাছে শোক ও ত্যাগের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরাও আজ নামাজ, রোজা, ইবাদত বন্দেগি, দান-খয়রাত ও জিকির-আসকারের মাধ্যমে দিনটি অতিবাহিত করবেন। শিয়া সম্প্রদায় রাজধানীতে তাজিয়া মিছিল বের করবে। দিনটি উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ সারা দেশে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল হবে। আজ সরকারি ছুটির দিন। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা তার বাণীতে বলেন, পবিত্র আশুরা জুলুম ও অবিচারের বিপরীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মানবজাতিকে শক্তি ও সাহস জোগায়। তিনি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন। তারেক রহমান তার বাণীতে বলেন, ‘ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার ঘনিষ্ঠজনদের আত্মদানের চেতনায় দেশে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে, কোনোভাবেই যাতে নির্দয় অত্যাচারীর অভ্যুদয় না ঘটে, সেজন্য ইমাম বাহিনীর যুদ্ধ আমাদের সব সময় প্রতিরোধের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করবে। আমি শহীদ হজরত ইমাম হোসাইন (রা.), তার শহীদ পরিবার ও সঙ্গীদের শাহাদাতের স্মরণে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং রুহের মাগফিরাত কামনা করি।’ বায়তুল মোকাররমে বিশেষ দোয়া মাহফিল: পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আজ বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ‘পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। মদিনাতুল উলুম মডেল ইনস্টিটিউট মহিলা কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা মো. মুজির উদ্দিন আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এবং দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ এতে সভাপতিত্ব করবেন। এ ছাড়া সারা দেশে মসজিদগুলোতে আশুরার তাৎপর্য ও মহিমা নিয়ে বিশেষ দোয়া করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাজিয়া মিছিল ও নিরাপত্তা পুলিশের নির্দেশনা: প্রতি বছরের মতো এবারও শিয়া সম্প্রদায় রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসেনী দালান থেকে তাজিয়া মিছিল বের করবে। এ নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) থেকে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি বহন এবং আতশবাজি ও পটকা ফোটানো সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানানো হয় গণবিজ্ঞপ্তিতে। ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মো. সরওয়ার জানান, পুরান ঢাকার হোসেনী দালান, ইমামবাড়া, বড় কাটরা, মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্প, শিয়া মসজিদ, বিবিকা রওজা, মিরপুর পল্লবী বিহারী ক্যাম্পসহ পবিত্র আশুরা পালিত হয়—এমন সব স্থানে পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ইমামবাড়াগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে এবং যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটগুলো প্রস্তুত থাকবে। তাজিয়া মিছিল চলাকালে যানজট এড়াতে বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
আজ পবিত্র আশুরা শোক ও ত্যাগের মহিমাময় দিন
মুরাদনগরের ৩ খুনে নেতৃত্বে ছিলেন চেয়ারম্যান-মেম্বার
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ ও বাচ্চু মেম্বারের নেতৃত্বে লোকজন বাড়ি ঘেরাও করে। এরপর নির্মমভাবে পেটানো হয় মা রোকসনা আক্তার রুবিকে। মাকে বাঁচাতে এসেছিলেন মেয়ে তাসফিয়া আক্তার জোনাকি, রুমা আক্তার ও ছেলে রাসেল মিয়া। তাদেরও নির্মমভাবে পেটানো হয়। তারা লুটিয়ে পড়লেও মন গলেনি হামলাকারীদের। একপর্যায়ে লোকজন তাদের এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এতে মৃত্যু হয় মা ও দুই সন্তানের। আরেক সন্তান রুমা হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লার মুরাদনগরের আকুবপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামে মব সৃষ্টি করে তিনজনকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় উঠে এসেছে নৃশংসতার তথ্য। গত শুক্রবার রাতে নিহত রুবির আরেক মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে বাঙ্গরা বাজার থানায় এ মামলা করেন। এতে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৬ জনকে আসামি করা হয়। চাঞ্চল্যকর ওই ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে। এর মধ্যে গতকাল ভোরে এজাহারভুক্ত বাবুল মিয়া (৫০) ও ছবির মিয়াকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। তাদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরা ঢাকায় আত্মগোপনে থাকা আরও ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেন। বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’ এদিকে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে কড়ইবাড়ি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, মুরাদনগর-নবীনগর সড়কের কড়ইবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রুবির বাড়ির পাশে একটি ওষুধের দোকান থেকে স্থানীয় এক শিক্ষকের মোবাইল ফোন চুরি হয়। অভিযোগ ওঠে, বোরহান উদ্দিন ওরফে মারুফ নামের এক তরুণ ওই ফোনটি চুরি করেছে। ওই তরুণ রুবির মেয়ে জোনাকির স্বামী মনির হোসেনের সঙ্গে মাদকের কারবার করে। মোবাইল ফোন চুরির ঘটনায় মঙ্গলবার স্থানীয় আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার বাচ্চু মিয়া ও স্থানীয় বাছির উদ্দিনের নেতৃত্ব মারুফকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিতে যান রুবি। সেখানে বাচ্চু-বাছিরসহ অন্যদের সঙ্গে রুবি ও তার পক্ষের লোকজনের বাগবিতণ্ডা এবং একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। ওই ঘটনাকে ঘিরে পরদিন বুধবারও দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এসব নিয়ে দুপক্ষে উত্তেজনা চলছিল। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার সকালে কড়ইবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রুবির বাড়িতে লোকজন নিয়ে যান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া। তখনো তাদের সঙ্গে রুবি ও তার মেয়েদের বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের লোকজন মিলে হামলা শুরু করে। ঘটনাস্থলেই রুবি তার ছেলে রাসেল ও মেয়ে জোনাকির মৃত্যু হয়। শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে তিনজনের মরদেহ বুঝে নেন নিহত জোনাকি আক্তারের স্বামী মনির হোসেন। ওইদিন সন্ধ্যায় গ্রাম পুলিশের সহায়তায় তিনটি কবর খোঁড়া হয়। গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়ায় জানাজায়ও ইমামসহ ৮ থেকে ৯ জন উপস্থিত ছিলেন। পরে রাতেই দাফন শেষ হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আবু তাহের ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, ‘সুরতহাল প্রতিবেদনে রোকসানা আক্তার রুবি ও ছেলে রাসেলের মাথা বেশি থেঁতলানো ছিল। মেয়ে রুমা আক্তারসহ তিনজনের মাথা ও শরীরেই কোপ ও লাঠির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’ গ্রেপ্তার অন্য ছয়জন হলো ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বাচ্চু মিয়া, রবিউল আওয়াল, আতিকুর রহমান (৪২), মো. বায়েজ মাস্টার (৪৩), দুলাল (৪৫) ও আকাশ (২৪)। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল ও একটি টর্চ লাইট উদ্ধার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘মূলত একটি মোবাইল ফোন চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।’
মুরাদনগরের ৩ খুনে নেতৃত্বে ছিলেন চেয়ারম্যান-মেম্বার
শ্রীলঙ্কার ‘মিরপুর’ জয় মিরাজদের
শ্রীলঙ্কার ‘মিরপুর’ জয় মিরাজদের
খরচে ষোলোআনা ফল শূন্য
খরচে ষোলোআনা ফল শূন্য
বিশেষ সহকারী
দুদককে থামিয়ে দিতে বিশেষ সহকারীর চিঠি
গাজা ধ্বংসে ইসরায়েলের নতুন কূটকৌশল
গাজা ধ্বংসে ইসরায়েলের নতুন কূটকৌশল