বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২

দুদককে থামিয়ে দিতে বিশেষ সহকারীর চিঠি

দেড়শ কোটির প্রকল্পে ব্যয় ৩২৬ কোটি
জাফর ইকবাল
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর -০০০১, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৮:১৯ এএম
বিশেষ সহকারী
ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স

চাহিদা মাত্র ২৬ টেরাবাইট ব্যান্ডউইথের, অথচ কেনা হচ্ছে ১২৬ টেরাবাইট সক্ষমতার যন্ত্রপাতি, তাও প্রায় ৩২৬ কোটি টাকায়। যেখানে প্রকৃত প্রয়োজন মেটাতে সর্বোচ্চ ১৬৫ কোটি টাকা যথেষ্ট। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সুপারিশ, এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) স্পষ্ট আপত্তিও উপেক্ষা করে অপ্রয়োজনীয় এই যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ নিচ্ছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। তথ্য বলছে, এই প্রক্রিয়া সচল রাখতে দুদকের কার্যক্রমে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। যিনি নিজ প্যাডে চিঠি দিয়ে প্রকল্পটি এগিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। পরীক্ষায় যথাযথ ফল না পাওয়া এসব যন্ত্রপাতির কার্যকারিতা ৬-৮ বছর এবং শেষতক ভাঙাড়ি হিসেবে বিক্রির শঙ্কা থাকলেও টাকার স্রোত থামাতে নারাজ সংশ্লিষ্টরা। তদন্তের তথ্য-উপাত্ত বলছে, সরকারের শতকোটি টাকা গচ্চার শঙ্কা রয়েছে। প্রযুক্তির আড়ালে চলছে গোপন লুটপাটের আয়োজন। দুদক চেয়ারম্যানকে কোম্পানির সাফাই গেয়ে বিশেষ সহকারীর চিঠি দেওয়াকে দুদকের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, পতিত হাসিনা সরকারের আমলে লুটপাটের উদ্দেশ্যে নেওয়া একটি বিতর্কিত ও উচ্চাভিলাষী প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রভাবশালী মহলের এসব তদবির এবং চেষ্টা নিঃসন্দেহে পরিবর্তিত বাংলাদেশে খারাপ নজির হয়ে থাকবে।

তবে দুদক চেয়ারম্যানকে চিঠি দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব কালবেলাকে বলেছেন, তার এই পদক্ষেপে সরকারের ৬০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া দেশের দুটি প্রভাবশালী কোম্পানি চাচ্ছে না যে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) ট্রান্সমিশন ব্যবসায় থাকুক। তারা সরকারি কোম্পানিকে ভবিষ্যতের সক্ষমতা বিস্তৃতি থেকে সরিয়ে দিতে চায়।

সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, দেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের মোট চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ পূরণ করে দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বাকি ৩০ শতাংশ সরবরাহ করে বিটিসিএল। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে তিনটি কোম্পানি দেশের ইন্টারনেট চাহিদা পূরণ করে। কোম্পানিগুলো সারা দেশে ব্রডব্যান্ড লাইনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দেয়। প্রতিটি মোবাইল ফোন অপারেটর ব্যান্ডউইথের বড় ক্রেতা। এসব কোম্পানি পাইকারি কিনে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে খুচরা ইন্টারনেট বিক্রি করে। বর্তমানে বিটিসিএল চাহিদা পূরণে ব্যান্ডউইথ ধারণের জন্য মাত্র ৭ টেরাবাইট সক্ষমতার অবকাঠামো ব্যবহার করে। বিটিসিএলের সক্ষমতা বাড়াতে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার ‘ফাইভজি উপযোগীকরণে বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেয়। বুয়েটের মাধ্যমে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি পরীক্ষা করা হয়। এতে খরচ হয় প্রায় ২৮ লাখ টাকা। বুয়েটের ফিজিবিলিটি স্টাডি প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী দল দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলার বিদ্যমান ব্যান্ডউইথ ব্যবহার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা ব্যান্ডইউথ ইত্যাদি বিবেচনা করে একটি সূত্রের মাধ্যমে ২০৩০ সালে বিটিসিএলের ব্যান্ডউইথ চাহিদা ২৬ দশমিক ২ টেরাবাইট নির্ধারণ করে। এই ব্যান্ডউইথ সরবরাহের জন্য বুয়েট ১০০জি লাইন কার্ড স্থাপনের সুপারিশ করে। বুয়েট এ সমীক্ষাটি চালায় করোনাকালীন। সে সময়ে দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার সর্বোচ্চ ছিল।

তবে বুয়েটের প্রতিবেদন উপেক্ষা করে সুকৌশলে ২৬ টেরাবাইটের পরিবর্তে ১২৬ টেরাবাইটের যন্ত্রপাতি কেনার ফন্দি আঁটেন তৎকালীন হাসিনা সরকারের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। ২৬ টিবিপিএসে সর্বোচ্চ ১৫ মিলিয়ন ডলার (দরপত্র আহ্বানের সময় প্রতি ডলারের বিনিময় হার ১১০ টাকা হিসাবে ১৬৫ কোটি টাকা) খরচে যে কাজ করা সম্ভব ছিল, সেটা করতে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৩২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে যন্ত্রপাতি কেনার সব আয়োজন চূড়ান্ত করে। অবশ্য ডলারের বর্তমান বিনিময় হার ধরলে টাকার অঙ্ক আরও বেশি।

যা বলছে বুয়েটের সমীক্ষা: বুয়েটের সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে জেলার মধ্যে ব্যান্ডউইথ চাহিদার ঐতিহাসিক তথ্য না থাকায় বুয়েট টিম একটি নতুন সূত্র তৈরি করেছে ২০৩০ সালের জন্য। এই সূত্রে প্রতিটি উপজেলায় জনসংখ্যা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ইপিজেড, সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে ব্যান্ডউইথের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, ঢাকা জেলার বর্তমান ব্যবহৃত ব্যান্ডউইথের পরিমাণ ৪০০ জিবিপিএস। বুয়েটের পরামর্শে এখানে আরও ৩৮০০ জিবিপিএস বৃদ্ধির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তাহলে সর্বমোট জিবিপিএস বেড়ে দাঁড়াবে ৪২০০। একইভাবে বরগুনায় চলমান ১২ জিবিপিএসের সঙ্গে ২০০ জিবিপিএস অতিরিক্ত, বরিশালে ৬০-এর সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ৪০০, ভোলায় ১৩ জিবিপিএসের সঙ্গে আরও ৩০০ জিবিপিএস, চট্টগ্রামে ১৪০ জিবিপিএসের সঙ্গে আরও ১২০০ জিবিপিএস অতিরিক্তি, কক্সবাজারে ৪১ জিবিপিএসের সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ৫০০, গাজীপুরে ১১০ জিবিপিএসের সঙ্গে আরও ৫০০ জিবিপিএস অতিরিক্ত, মাদারীপুরে ১১ জিবিপিএসের সঙ্গে আরও অতিরিক্ত ৩০০ জিবিপিএস, খুলনায় ৭০ জিবিপিএসের সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ৫০০, ময়মনসিংহে ৪৫ জিবিপিএসের সঙ্গে আরও অতিরিক্ত ৮০০ জিবিপিএস এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১১ জিবিপিএসের সঙ্গে আরও অতিরিক্ত ৩০০ জিবিপিএস যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে বুয়েট।

জানা গেছে, ১০২৪ জিবিপিএসে ১ টেরাবাইট। আর বুয়েট ঢাকা বিভাগের জন্য সর্বোচ্চ সুপারিশ করেছে ৩৮০০ জিবিপিএস বা ৩ দশমিক ৭১ টিবিপিএস। সব মিলিয়ে ৬৪ জেলায় ২০৩০ সালে সর্বোচ্চ ব্যান্ডউইথ লাগতে পারে ২৬ দশমিক ২ টেরাবাইট।

জানা গেছে, যে কেবলের মাধ্যমে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা হবে, সেই কেবল সাধারণত ৩ ধরনের। এগুলো হলো ১০জি, ১০০জি ও ৪০০জি। বুয়েট এ ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে জেলা শহরের জন্য সুপারিশ করেছে ১০০জি লাইন। আর জেলা শহর থেকে উপজেলায় প্রস্তাব করা হয়েছে ১০জি লাইন। ১০০জি লাইন দিয়ে ১০০ টেরাবাইট ডাটা/ব্যান্ডউইথ স্থানান্তর হতে পারে। আর এসব লাইন অ্যাসন (Ason) বেজড করার কথা বলা হয়েছে। অ্যাসন লাইনের বিশেষত্ব হলো, কোনো একটি জেলা শহরে কেবল কাটা পড়লেও অন্য লাইন দিয়ে ব্যান্ডউইথ ওই জেলা শহরে পৌঁছে যাবে। ঢাকা জেলায় বর্তমানে ব্যবহারিত হচ্ছে ৪০০ জিবিপিএস। এর সঙ্গে প্রস্তাবিত ৩৮০০ জিবিপিএস যুক্ত হলে মোট ব্যান্ডউইথের পরিমাণ দাঁড়াবে ৪২০০ জিবিপিএস বা ৪ দশমিক ১০ টেরাবাইট। আর সারা দেশে এর পরিমাণ হতে পারে সর্বোচ্চ ২৬ দশমিক ২ টেরাবাইট। বুয়েটের সুপারিশ করা ১০০জি কেবল দিয়ে ১০০ টিবিপিএস বা তার চেয়েও বেশি ডাটা/ব্যান্ডউইথ চলাচল করতে পারবে। অর্থাৎ প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তাব করেছে বুয়েট। তবুও বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে ৪০০জি লাইন স্থাপনের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে মন্ত্রণালয়। এতে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণে অর্থ অপচয় হবে। যা বিদেশে চলে যাবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই প্রকল্প নিয়ে সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বাব এবং সাবেক সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। তারা দুজনেই তাদের পছন্দের আলাদা আলাদা ঠিকাদারকে কাজ দিতে চাইছিলেন। তবে অন্যায় আদেশ না মেনে দরপত্র বাতিল করেছিলেন বিটিসিএলের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান চৌধুরী। যার জেরে তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। প্রথমে স্ট্যান্ডরিলিজ ও পরে সাময়িক বরখাস্ত এবং একাধিক বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। যদিও আদালতের আদেশে সেই মামলা স্থগিত রয়েছে। এরপর সাবেক আরেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের সঙ্গে সচিবের সখ্যতায় সব নিয়মকানুন উপেক্ষা করে চীনা কোম্পানি হুয়াওয়ে টেকনোলজিস লিমিটেডকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। অন্যদিকে বিটিসিএল এমডি আসাদুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়ের করা সব বিভাগীয় মামলা আদালতের রায়ে স্থগিত হলে ওই অসাধু সিন্ডিকেট অভিযোগ দেয় দুর্নীতি দমন কমিশনে। দুদকে জমা দেওয়া অভিযোগে প্রকল্প পরিচালক আসাদুজ্জামান চৌধুরীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পিপিএ-২০০৬-এর ধারা ৮ এবং পিপিআর-২০০৮ এর বিধি (১১), (৮৪) এর (গ) (৫) অনুসরণ না করে বাতিলপূর্বক ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে অপরাধ করার অভিযোগ আনা হয়।

তবে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। দুর্নীতি দমন কমিশন দেখতে পায় ঘটনা ঠিক উল্টো। এরপর দুদক প্রকাশ্য অনুসন্ধান শুরু করলে বন্ধ হয়ে যায় সরঞ্জাম কেনার প্রক্রিয়া।

অনুসন্ধানে দুদক পদে পদে অনিয়মের প্রমাণ পায়। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি গোপনীয়তার শর্ত লঙ্ঘন, অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় করে সরকারি বিপুল অর্থের অপচয়, ক্ষমতার অপব্যবহার, পিপিআর লঙ্ঘন, বুয়েটের প্রস্তাবের চেয়ে চার গুণ বেশি যন্ত্রাংশ ক্রয় চেষ্টার সত্যতা পায়। অভিযোগটি এখনো দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধানাধীন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সরবরাহ যন্ত্রপাতি ৬ থেকে ৮ বছর কার্যকর থাকে। এরপর এসব যন্ত্রপাতি কোনো কাজে লাগে না। চিপসসেট পরিবর্তন হয়। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে আসে আরও উন্নত যন্ত্রাংশ। এসব বিষয় মাথায় রেখেই প্রযুক্তিগত অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা করতে হয়। বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি অপারেটর মিলিয়ে যে পরিমাণ ব্যান্ডউইথ বহন করছে, তাতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২৬ দশমিক ২ টেরাবাইট সামর্থ্যের যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হবে। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলও তাই প্রস্তাব করেছে। অথচ ২৬ টেরাবাইটের পরিবর্তে ১২৬ টেরাবাইটের যন্ত্রপাতি কেনা হলে বাড়তি যন্ত্রাংশ কোনো কাজেই আসবে না। ৬ থেকে ৮ বছর পর এসব যন্ত্রাংশ অকেজো হয়ে পড়ে থাকবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ক্ষমতার পটপরিবর্তনে পুরোনো সিন্ডিকেট আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রকল্পের সরঞ্জাম আমদানি করতে জোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ওই সিন্ডিকেটের প্রধান বাধা দুর্নীতি দমন কমিশন। তাই প্রথম গত ১৩ এপ্রিল ডাক, টেলি যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে দুদকে চিঠি দিয়ে প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। গত ১৮ জুন মন্ত্রণালয়ের চিঠির জবাব দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের তৎকালীন সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে স্পষ্ট করে বলা হয়, ‘এ প্রকল্পের ক্রয় প্রক্রিয়ার অবশিষ্ট কার্যক্রম এগিয়ে/চালিয়ে নিলে তা আইনের ব্যত্যয় হবে বলে প্রতীয়মান হয় এবং সংশ্লিষ্ট অর্থ ব্যয় আইনসিদ্ধ হবে না বলে অনুমেয়।’ দুদকের এই মতামত পাওয়ার পর ২২ জুন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব তার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্যাডে একটি আধা সরকারি পত্র দেন দুদক চেয়ারম্যানকে। তাতে এই প্রকল্পের সুফল ও গুরুত্ব তুলে ধরে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘দেশের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় ফাইভ-জির রেডিনেস পিছিয়ে পড়া রোধ, প্রযুক্তিগতভাবে বিটিসিএলের পিছিয়ে পড়া রোধ, এডিপি বাস্তবায়নের হার নিশ্চিত করাসহ নানা কারণে এই প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রাখা একান্ত প্রয়োজন।’ এ ক্ষেত্রে তিনি বুয়েটের ২৬ টেরাবাইট প্রয়োজনীয়তার প্রতিবেদন উপেক্ষা করে নিজের মতো যুক্তি উপস্থাপন করে বলেছেন, হুয়াইয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি এবং এসব ইকুইপমেন্টস বর্তমানে বাংলাদেশের বেসরকারি ট্রান্সমিশন কোম্পানিগুলো ব্যবহার করছে। বিশ্বের বহুল ব্যবহৃত এসব পণ্য বিটিসিএলের উচ্চ ক্ষমতার ট্রান্সমিশনে এলে একদিকে যেমন সরকারের বাড়তি সুফল, অন্যদিকে এ খাতে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য হ্রাস পাবে। প্রকল্পটির বিরুদ্ধে দরকারের তুলনায় পাঁ চগুণ বেশি ক্যাপাসিটির যে অভিযোগ এসেছে, বাস্তবে তা সত্য নয়। বরং দেশের বর্তমান ইন্টারনেট ফুটপ্রিন্ট প্রায় ৩৫ টেরাবাইটের কাছাকাছি এবং ইন্টারনেট ক্যাপাসিটির চাহিদা বৃদ্ধির বার্ষিক হার প্রায় ৫০ শতাংশ। এমতাবস্থায় আগামী এক যুগের চাহিদার আলোকে ১২৬ টেরাবাইটের ক্যাপাসিটি মোটেই বেশি নয়, বরং ২৬ টেরাবাইটের হিসাব ভুল এবং অপরিণামদর্শী। তদুপরি প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অধিক ক্যাপাসিটির নিশ্চয়তা জনস্বার্থে কল্যাণকর। এমতাবস্থায় দেশের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনা, ৫জির রেডিনেস পিছিয়ে পড়া রোধ, প্রযুক্তিগতভাবে বিটিসিএল পিছিয়ে পড়া রোধ, এডিপি বাস্তবায়নের হার নিশ্চিত করা এবং এ প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিটিসিএলের অপর একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এরই মধ্যে স্থাপিত যন্ত্রপাতি চালুর লক্ষ্যে বিটিসিএলের ‘৫জির উপযোগীকরণে বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রাখা একান্ত প্রয়োজন। এরপর প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত মনোযোগ ও আন্তরিক সহযোগিতা চান। গত এক সপ্তাহ ধরে মন্ত্রণালয় ও দুদকের একাধিক সূত্র থেকে এসব চিঠিপত্রের সত্যতা নিশ্চিত করেছে কালবেলা।

জানতে চাইলে হুয়াওয়ের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স এবং কমিউনিকেশন বিভাগের সাউথ এশিয়ার এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন প্রধান তানভীর আহমেদ কালবেলাকে বলেন, ‘এ প্রকল্পটি পাওয়ার পর থেকেই আমাদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। আমরা এ কাজটা করতে চাই। আমরা তো বৈধভাবেই সব নিয়ম-কানুন মেনেই কাজটা পেয়েছি।’

পিপিআরের গোপনীয়তার শর্ত লঙ্ঘনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি আরও অনেক আগের ঘটনা। পরবর্তী সময়ে সিপিপিটিইউর মাধ্যমে এ বিষয়ে সমাধান হয়েছে।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সম্প্রতি দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন হুট করে একটা চিঠি দিয়ে বলেছেন, যে প্রকল্পে দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে। এটা উনি কিসের ভিত্তিতে বললেন?’ দুদক সচিব হুট করে নয় বরং মন্ত্রণালয়ের চিঠির জবাব দিয়েছেন উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘তাহলে উনি ওএসডি হলেন কেন?’

খোরশেদা ইয়াসমীন অবসরে যাবেন তাই তাকে দুদক থেকে সরিয়ে জনপ্রশাসনে সংযুক্ত করা হয়েছে জানালে তানভীর আহমেদ বলেন, ‘যাই হোক, উনি তো এটা (চিঠি) দিতে পারেন না।’ এরপর তানভীর আহমেদ হুয়াওয়ে এবং এ প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত জানান।

জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এখন কিছুই বলতে পারব না। আর আমি এ বিষয়ে কিছু জানিও না।’

যা বলছে দুদক: দুদকের এক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, ‘এ প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ক্রিমিনাল অফেন্স। আর ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে কোনো সুপারিশের সুযোগ নেই। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দুর্নীতি দমন কমিশন মন্ত্রণালয়ের চিঠির জবাব দেওয়ার পরও বিশেষ সহকারী তার নিজ প্যাডে আধাসরকারি পত্র পাঠিয়ে মূলত দুদককেই একটা প্রচ্ছন্ন হুমকি দিলেন। এ ধরনের কার্যক্রম দুদকের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের শামিল।’

জানতে চাইলে দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মইদুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কেউই দুদকে এ ধরনের চিঠি দিতে পারেন না। এ ধরনের চিঠি দেওয়া উচিত নয়। এতে দুদক বিব্রত হয়। দুদকের নিজস্ব আইন ও বিধিবিধান রয়েছে। দুদক সেগুলো অনুযায়ী কাজ করে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি করলে দুদক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এটাই হওয়া উচিত। এ ধরনের চিঠিতে অনেক সময় অ্যামব্যারাসিং পরিস্থিতি তৈরি হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুদক তো প্রকল্প চালিয়ে নিতে বলতে পারে না। আর প্রকল্প চালিয়েই বা নেবে কীভাবে, সেই প্রকল্পের অনুমোদনই যদি আইনসংগত না হয়?’

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ব্যাখ্যা: জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব কালবেলাকে বলেন, ‘আমি আমাদের দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে চিঠি দিয়েছি। এটা নিয়ে কথা বলতে আমি দুদকেও গিয়েছি। দুদকে আমি আমার টিম নিয়ে গিয়েছি। এটার ব্যাকগ্রাউন্ডটা হচ্ছে এ প্রকল্পটা অনেক আগে থেকে হচ্ছে। যে ইক্যুইপমেন্ট কেনার কথা, সেই ইক্যুইপমেন্ট বাংলাদেশে সামিট এবং ফাইভার এট হোমের আছে। তবে অভিযোগ আছে, চায়নিজ দুটি ভেন্ডর জেডটিই এবং হুয়াওয়ে নিজেদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারে এখানে আনফেয়ারনেস (অসামঞ্জস্যপূর্ণ কাজ) করেছে। এটা আমি অনেক আগে একটা লেটার (চিঠি) দিয়েছি। সেই লেটারের মধ্যে বিস্তারিত বলেছি।’

চিঠি দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘চিঠিটা আমি এ কারণে দিয়েছি যে, প্রথমত প্রকল্পটা যদি না করে, তাহলে আমাদের ২৯০ কোটি টাকার যে ই-রিভার্সেবল এলসি; যে টাকাটা পেমেন্ট হয়ে গেছে। এটা আমরা দায়িত্বে আসার আগে, আমি এবং নাহিদ ইসলাম দায়িত্বে আসার আগেই সেই টাকা পেমেন্ট হয়ে গেছে। সেটা মার যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের দুটা প্রভাবশালী কোম্পানি চাচ্ছে না বিটিসিএল ট্রান্সমিশন ব্যবসায় থাকুক। তারা সরকারি কোম্পানিকে ভবিষ্যতের ক্যাপাসিটি এক্সপানশন (সক্ষমতার বিস্তৃতি) থেকে সরিয়ে দিতে চায়। এখন যে ইক্যুইপমেন্ট দিচ্ছে সেই ইক্যুইপমেন্টে কোনো সমস্যা নেই। এটা বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রীত। তাই আমি দুদক চেয়ারম্যানকে লিখেছি, যেহেতু আমার টাকা চলে গেছে এবং এখন আমি যদি রি-টেন্ডার করি তাহলে ২৯০ কোটি টাকা চলে যাচ্ছে, এ ছাড়া একই দিকে ৬০০ কোটি টাকার বেশি লাগবে ন্যূনতম। তাহলে দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্রের ৯০০ কোটি টাকা চলে যাচ্ছে। সে জন্য আমি দুদক চেয়ারম্যানকে বলেছি, স্যার আপনি আমাকে এ কাজটা করতে দেন। উনি বলেছেন, “আপনি এনশিওর করবেন রাইট ইক্যুইপমেন্ট দেশে আসছে”। সেজন্য আমি বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলেছি, আপনারা এ খাতের যারা বিশেষজ্ঞ তাদের দিয়ে একটা কমিটি করেন। যাতে যেই প্রমিস ইক্যুইপমেন্টটা (দরপত্র অনুযায়ী যা দেওয়ার কথা) আছে সেই প্রমিস ইক্যুইপমেন্টটা দেশে আসে।’

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আরও বলেন, ‘আমি অর্থ ছাড় করিনি। আমি এবং নাহিদ ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার অনেক আগেই রাষ্ট্রের অর্থ গচ্চা গেছে। এখন দুদক যদি মনে করে এ টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হয়েছে, দুদক অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শাস্তি দিতে পারে। আর একটা কথা আছে— আমরা সন্দেহ করি কিছু লোক, বেসরকারি যে মাফিয়ারা আছে, তারা প্রভাবিত হয়ে এ কাজটা বন্ধ করে দিতে চায়। কারণ এখানে দুটা বিশেষ কোম্পানি চায় না যে বিটিসিএল ট্রান্সমিশন ব্যবসায় থাকুক।’

যা বলছে টিআইবি: ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান কালবেলাকে বলেন, ‘প্রশ্ন হচ্ছে প্রকল্প এগিয়ে নেওয়ার যৌক্তিকতা নির্ধারণে যথাযথভাবে কস্ট-বেনিফিট ও ঝুঁকি বিশ্লেষণ করা হয়েছে কি না। বিশেষ করে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ নির্ভর পর্যালোচনা যদি না হয়ে থাকে, তবে তা হবে প্রকারান্তরে দুর্নীতি সহায়ক ও সুরক্ষামূলক। হুয়াওয়ে নিঃসন্দেহে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিশাল গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানি, তবে একই সঙ্গে এ কোম্পানি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। এলসির অর্থ লোকসানের যুক্তিতে প্রকল্প এগিয়ে নিলে রাষ্ট্রের আরও বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তের কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া বা তদন্ত প্রক্রিয়া প্রভাবিত করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সিদ্ধান্ত যা-ই হোক, কোনো প্রকারেই তা যেন দুর্নীতির তদন্তকে প্রভাবিত না করে এবং তদন্তাধীন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পে সংশ্লিষ্টতার সহায়ক না হয়।’

মন্তব্য করুন

তারেক রহমান / আওয়ামী লীগের দমনপীড়ন ছিল ইয়াজিদের মতো
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া নিষ্ঠুর আওয়ামী নেতাদের পৈশাচিক দমনপীড়ন ছিল ইয়াজিদ বাহিনীর সমতুল্য। গত ১৬ বছরে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার সব ভাঁওতাবাজির নির্বাচন, মানুষের ভোটাধিকার হরণ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, সন্ত্রাস, হানাহানি ও দেশের টাকা বিদেশে পাচারসহ এক অবর্ণনীয় শোষণ ও জুলুমের রাজত্ব কায়েম করেছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায়ে সাজা দিয়ে কারারুদ্ধ রাখা এবং তাকে সুচিকিৎসা বঞ্চিত করে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছিল। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে গতকাল শনিবার এক বাণীতে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। বিএনপির শীর্ষ এই নেতা আরও বলেন, আজও ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার ঘনিষ্ঠজনের আত্মদানের চেতনায় দেশে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। আর কোনোভাবেই যাতে নির্দয় অত্যাচারীর অভ্যুদয় না ঘটে সেজন্য ইমাম বাহিনীর যুদ্ধ আমাদের সবসময় প্রতিরোধের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করবে। আমি শহীদ হজরত ইমাম হোসেন (রা.), তার শহীদ পরিবার ও সঙ্গীদের শাহাদাতের স্মরণে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং রুহের মাগফিরাত কামনা করি। বিবৃতিতে আশুরার তাৎপর্য তুলে ধরে তারেক বলেন, ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্য অত্যন্ত ঘটনাবহুল ও স্মরণীয় একটি দিন ১০ মহররম। বিশ্বের ইতিহাসে এ দিনটিতে অসংখ্য ঘটনা সংঘটিত হয়। তাই এ দিনটির মহিমা অসীম। এক বিয়োগান্তক বিষাদময় ঘটনার স্মৃতিবিজড়িত এইদিন, যা পবিত্র আশুরা হিসেবে পালন করা হয়। অন্যায় অবিচার জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এ দিনে কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতবরণ করেছিলেন। এই দিন শোক, শ্রদ্ধা ও আত্মত্যাগের দিন। জাগতিক অন্যায় ও দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং ইমাম হোসাইন (রা.)-এর আত্মত্যাগ বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ার মুসলমান ও বিশ্ববাসীর জন্য এক মহিমান্বিত অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। ইমাম হোসাইনের কষ্ট ও শাহাদাত এবং ইসলাম বাঁচিয়ে রাখার জন্য তিনি যে আত্মত্যাগ করেছিলেন, তা দুনিয়ায় এক বিশাল প্রেরণার উৎসস্থল হিসেবে বিবেচিত হয়। অন্যদিকে সৃষ্টিকর্তা কেন্দ্রিক ন্যায়বিচার, তাকওয়া, ত্যাগ ও মানবিক মর্যাদার মর্মবাণী প্রকাশিত হয়। তারেক রহমান আরও বলেন, হজরত হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত অন্যায়, অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক নজিরবিহীন আদর্শিক সংগ্রামের উদাহরণ। ক্ষমতার প্রতি নিবিড় নিবিষ্ট মোহে আচ্ছন্ন থেকে যারা ইনসাফ ও মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করেছিল তাদের বিরুদ্ধেই ইমাম বাহিনী যুদ্ধে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিল। কারবালায় ইমাম বাহিনীর শাহাদাতবরণ সর্বকালে দেশে দেশে অত্যাচারীর কবল থেকে মুক্ত হতে নিপীড়িত মজলুম মানুষকে উদ্দীপ্ত করে আসছে।
আওয়ামী লীগের দমনপীড়ন ছিল ইয়াজিদের মতো
গাজায় কি আবারও ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এর আগে বেশ কয়েকবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও ইসরায়েল ও হামাস দুই পক্ষই নিজেদের দাবির প্রতি অনড় অবস্থানে ছিল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধ শুরুর প্রথম থেকেই হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েল সংঘাত শেষে যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক চাপের মুখে সে লক্ষ্য থেকে তাকে কিছুটা সরে আসতে হচ্ছে। অন্যদিকে, গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য হামাস আলোচনা করার সদিচ্ছা সব সময় দেখালেও ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উত্থাপনের পর ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে ইসরায়েল। শুরুতে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে স্পষ্ট মন্তব্য না করলেও এবার অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে হামাসও। চির অস্থিতিশীল ভূখণ্ডটিতে চলতি মাসেই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং ইসরায়েলের যুদ্ধবিষয়ক লক্ষ্য পরিবর্তিত হওয়ায় এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের ইতিহাস বিবেচনা করলে প্রশ্ন জাগে, এবারও কি একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হবে কি না। দুই দেশের মধ্যে সংকটের শুরু ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের পার্টিশন পরিকল্পনার মাধ্যমে। এরপর ১৯৪৮ সালে নিজেদের স্বাধীন দেশ বলে ইসরায়েল ঘোষণা দিলে মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম আরব যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এক বছর পর ১৯৪৯ সালে একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তির মাধ্যমে এ যুদ্ধের অবসান ঘটে। কিন্তু ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের সহিংসতা থামেনি। ১৯৬৭ সালে গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীর দখলে নেয় ইসরায়েল। এ ঘটনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ জরুরিভিত্তিতে একটি শান্তি প্রস্তাব পাস করলে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হয়। এরপর ১৯৭৯ সালে ইয়োম কিপুর যুদ্ধ ও ১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদা সংগঠিত হলে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আরব দেশগুলো আর ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা হয়। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি মেলেনি। বিশেষত ১৯৯১ সালের অক্টোবরে স্পেনের মাদ্রিদে শুরু হওয়া শান্তি আলোচনা দুই বছরেও কোনো সমাধান তৈরি করতে পারেনি। অবশেষে ১৯৯৩ সালে অসলো শান্তিচুক্তির মাধ্যমে গাজা উপত্যকার কিছু অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় ইসরায়েল। অসলো শান্তিচুক্তির পর ১৯৯৪ সালের মে মাসে গাজা-জেরিকো সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয় এবং এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনে পুলিশ বাহিনী ও আইনি কাঠামো গঠনে ইসরায়েল সহযোগিতা করার আশ্বাস দেয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন আলোচনা হয়েছে। ২০২৩ সালে শুরু হওয়া হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৯ বার যুদ্ধবিরতি আলোচনা হয়েছে। গাজায় দুবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও তা ক্ষণস্থায়ী ছিল। এবারের যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত এ যুদ্ধবিরতির বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি। এর আগের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের মতো এবারও যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে আট ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। অন্যদিকে, ইসরায়েলে কারাবন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেবে ইসরায়েল। তবে কতজনকে মুক্তি দেওয়া হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। হামাস দাবি জানিয়েছে, এবার বন্দিবিনিময়ের সময় কোনো প্রোপাগান্ডা যেন না ছড়াতে পারে, সেজন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। এ ছাড়া গাজায় জাতিসংঘ পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে শুরু করার শর্তও দিয়েছে হামাস। গতকাল শনিবার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী ও দলের সঙ্গে পরামর্শ শেষে গতকাল শনিবার হামাস গাজায় যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার কথা জানিয়েছে। টেলিগ্রামে পোস্ট করা একটি বিবৃতিতে হামাস বলেছে, তারা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে একটি ইতিবাচক জবাব জমা দিয়েছে এবং যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার নতুন পর্বে তাৎক্ষণিকভাবে অংশ নিতে পুরোপুরি প্রস্তুত আছে। সংস্থাটি চুক্তির সামগ্রিক কাঠামো মেনে নিলেও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের অনুরোধ জানিয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি বিষয়ক আলোচনা ভেস্তে গেলে আবার হামলা শুরু করা যাবে না—এমন নিশ্চয়তা যুক্তরাষ্ট্রকে দিতে হবে। অর্থাৎ এখনো পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারেনি হামাস। এদিকে সংস্থাটির সাড়া পাওয়ায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। গত ২৪ জুন কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকেই গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জোরদার হতে শুরু করে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সিএনএনকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতির মাধ্যমেই হামাস-ইসরায়েল আলোচনার পথ সুগম হয়েছে। এ ছাড়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সহিংসতার জন্য নেতানিয়াহুর ওপরও আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে শুরু করেছে। চলতি বছর মার্চে গাজায় অবরোধ দেওয়ার পর বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ত্রাণ সরবরাহ শুরু করে ইসরায়েল। কিন্তু ত্রাণ সংস্থাটি যেন ফিলিস্তিনিদের জন্য মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে ১৩০টিরও বেশি দাতব্য সংস্থা এই সংস্থার কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। গতকাল শনিবারও ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৪৭ জন ত্রাণপ্রত্যাশী নিহত হন। অন্যদিকে, ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও চাপের মুখে নেতানিয়াহু। নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থি সরকার গাজায় সহিংসতার পক্ষে। কিন্তু দেশটির বিরোধী দলের নেতা ইয়াইর লাপিদ জানিয়েছেন, জিম্মি মুক্তি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য তিনি জোট সরকার গড়তেও আগ্রহী। এমনকি ইসরায়েলের অসংখ্য জরিপেও যুদ্ধ বন্ধ করে হলেও জিম্মি মুক্তির বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। এসব চাপের মুখেই গত সপ্তাহে অনেককে চমকে দিয়ে নেতানিয়াহু জিম্মি মুক্তির বিষয়টিকে তার প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তার এই ঘোষণা জিম্মিদের পরিবারের কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছে। চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীও কূটনৈতিক পন্থায় সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, হামাসের যোদ্ধা নিয়মিত অভিযানে অনেক কমে গেছে। তাই গাজায় কৌশলগত পদ্ধতি প্রয়োগ করে কোনো লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না। অর্থাৎ আলোচনার উপযুক্ত মঞ্চ তৈরি হয়েছে। যদি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দাবিতে আলোচনা ভেস্তে না যায়, তাহলে আগামী সপ্তাহেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হতে পারে।
গাজায় কি আবারও ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি
আজ পবিত্র আশুরা শোক ও ত্যাগের মহিমাময় দিন
আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। মুসলিম বিশ্বে এক শোকাবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। আরবিতে ‘আশারা’ অর্থ দশ। সেখান থেকেই মহররমের ১০ তারিখকে ‘আশুরা’ বলা হয়। সৃষ্টির শুরু থেকে নানা ঐতিহাসিক ঘটনার কারণে হিজরি মহররম মাসের দশম দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনে আল্লাহ তায়ালা হজরত মুসা (আ.) ও তার অনুসারীদের ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন এবং ফেরাউনকে নীল নদে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এই দিনেই আল্লাহ আরশ, কুরসি, লওহ, কলম, আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। হজরত আদম (আ.)-কে এই দিনেই সৃষ্টি করা হয় এবং শয়তানের প্ররোচনায় ভুল করার পর তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয় এবং পরে আল্লাহর প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়। এ ছাড়া হজরত নূহ (আ.)-এর মহাপ্লাবনের পর নৌকা এই দিনেই নোঙর করে। হজরত ইব্রাহিম (আ.) শত বিধিনিষেধের মধ্যে এই দিনেই জন্মগ্রহণ করেন। এই দিনেই কারবালার প্রান্তরে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার সঙ্গীরা শাহাদাত বরণ করেন, যা বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের কাছে শোক ও ত্যাগের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরাও আজ নামাজ, রোজা, ইবাদত বন্দেগি, দান-খয়রাত ও জিকির-আসকারের মাধ্যমে দিনটি অতিবাহিত করবেন। শিয়া সম্প্রদায় রাজধানীতে তাজিয়া মিছিল বের করবে। দিনটি উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ সারা দেশে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল হবে। আজ সরকারি ছুটির দিন। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা তার বাণীতে বলেন, পবিত্র আশুরা জুলুম ও অবিচারের বিপরীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মানবজাতিকে শক্তি ও সাহস জোগায়। তিনি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন। তারেক রহমান তার বাণীতে বলেন, ‘ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার ঘনিষ্ঠজনদের আত্মদানের চেতনায় দেশে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে, কোনোভাবেই যাতে নির্দয় অত্যাচারীর অভ্যুদয় না ঘটে, সেজন্য ইমাম বাহিনীর যুদ্ধ আমাদের সব সময় প্রতিরোধের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করবে। আমি শহীদ হজরত ইমাম হোসাইন (রা.), তার শহীদ পরিবার ও সঙ্গীদের শাহাদাতের স্মরণে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং রুহের মাগফিরাত কামনা করি।’ বায়তুল মোকাররমে বিশেষ দোয়া মাহফিল: পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আজ বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ‘পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। মদিনাতুল উলুম মডেল ইনস্টিটিউট মহিলা কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা মো. মুজির উদ্দিন আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এবং দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ এতে সভাপতিত্ব করবেন। এ ছাড়া সারা দেশে মসজিদগুলোতে আশুরার তাৎপর্য ও মহিমা নিয়ে বিশেষ দোয়া করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাজিয়া মিছিল ও নিরাপত্তা পুলিশের নির্দেশনা: প্রতি বছরের মতো এবারও শিয়া সম্প্রদায় রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসেনী দালান থেকে তাজিয়া মিছিল বের করবে। এ নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) থেকে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি বহন এবং আতশবাজি ও পটকা ফোটানো সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানানো হয় গণবিজ্ঞপ্তিতে। ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মো. সরওয়ার জানান, পুরান ঢাকার হোসেনী দালান, ইমামবাড়া, বড় কাটরা, মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্প, শিয়া মসজিদ, বিবিকা রওজা, মিরপুর পল্লবী বিহারী ক্যাম্পসহ পবিত্র আশুরা পালিত হয়—এমন সব স্থানে পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ইমামবাড়াগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে এবং যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটগুলো প্রস্তুত থাকবে। তাজিয়া মিছিল চলাকালে যানজট এড়াতে বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
আজ পবিত্র আশুরা শোক ও ত্যাগের মহিমাময় দিন
মুরাদনগরের ৩ খুনে নেতৃত্বে ছিলেন চেয়ারম্যান-মেম্বার
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ ও বাচ্চু মেম্বারের নেতৃত্বে লোকজন বাড়ি ঘেরাও করে। এরপর নির্মমভাবে পেটানো হয় মা রোকসনা আক্তার রুবিকে। মাকে বাঁচাতে এসেছিলেন মেয়ে তাসফিয়া আক্তার জোনাকি, রুমা আক্তার ও ছেলে রাসেল মিয়া। তাদেরও নির্মমভাবে পেটানো হয়। তারা লুটিয়ে পড়লেও মন গলেনি হামলাকারীদের। একপর্যায়ে লোকজন তাদের এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এতে মৃত্যু হয় মা ও দুই সন্তানের। আরেক সন্তান রুমা হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লার মুরাদনগরের আকুবপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামে মব সৃষ্টি করে তিনজনকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় উঠে এসেছে নৃশংসতার তথ্য। গত শুক্রবার রাতে নিহত রুবির আরেক মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে বাঙ্গরা বাজার থানায় এ মামলা করেন। এতে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৬ জনকে আসামি করা হয়। চাঞ্চল্যকর ওই ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে। এর মধ্যে গতকাল ভোরে এজাহারভুক্ত বাবুল মিয়া (৫০) ও ছবির মিয়াকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। তাদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরা ঢাকায় আত্মগোপনে থাকা আরও ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেন। বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’ এদিকে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে কড়ইবাড়ি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, মুরাদনগর-নবীনগর সড়কের কড়ইবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রুবির বাড়ির পাশে একটি ওষুধের দোকান থেকে স্থানীয় এক শিক্ষকের মোবাইল ফোন চুরি হয়। অভিযোগ ওঠে, বোরহান উদ্দিন ওরফে মারুফ নামের এক তরুণ ওই ফোনটি চুরি করেছে। ওই তরুণ রুবির মেয়ে জোনাকির স্বামী মনির হোসেনের সঙ্গে মাদকের কারবার করে। মোবাইল ফোন চুরির ঘটনায় মঙ্গলবার স্থানীয় আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার বাচ্চু মিয়া ও স্থানীয় বাছির উদ্দিনের নেতৃত্ব মারুফকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিতে যান রুবি। সেখানে বাচ্চু-বাছিরসহ অন্যদের সঙ্গে রুবি ও তার পক্ষের লোকজনের বাগবিতণ্ডা এবং একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। ওই ঘটনাকে ঘিরে পরদিন বুধবারও দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এসব নিয়ে দুপক্ষে উত্তেজনা চলছিল। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার সকালে কড়ইবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রুবির বাড়িতে লোকজন নিয়ে যান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া। তখনো তাদের সঙ্গে রুবি ও তার মেয়েদের বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের লোকজন মিলে হামলা শুরু করে। ঘটনাস্থলেই রুবি তার ছেলে রাসেল ও মেয়ে জোনাকির মৃত্যু হয়। শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে তিনজনের মরদেহ বুঝে নেন নিহত জোনাকি আক্তারের স্বামী মনির হোসেন। ওইদিন সন্ধ্যায় গ্রাম পুলিশের সহায়তায় তিনটি কবর খোঁড়া হয়। গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়ায় জানাজায়ও ইমামসহ ৮ থেকে ৯ জন উপস্থিত ছিলেন। পরে রাতেই দাফন শেষ হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আবু তাহের ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, ‘সুরতহাল প্রতিবেদনে রোকসানা আক্তার রুবি ও ছেলে রাসেলের মাথা বেশি থেঁতলানো ছিল। মেয়ে রুমা আক্তারসহ তিনজনের মাথা ও শরীরেই কোপ ও লাঠির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’ গ্রেপ্তার অন্য ছয়জন হলো ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বাচ্চু মিয়া, রবিউল আওয়াল, আতিকুর রহমান (৪২), মো. বায়েজ মাস্টার (৪৩), দুলাল (৪৫) ও আকাশ (২৪)। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল ও একটি টর্চ লাইট উদ্ধার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘মূলত একটি মোবাইল ফোন চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।’
মুরাদনগরের ৩ খুনে নেতৃত্বে ছিলেন চেয়ারম্যান-মেম্বার
শ্রীলঙ্কার ‘মিরপুর’ জয় মিরাজদের
শ্রীলঙ্কার ‘মিরপুর’ জয় মিরাজদের
খরচে ষোলোআনা ফল শূন্য
খরচে ষোলোআনা ফল শূন্য
গাজা ধ্বংসে ইসরায়েলের নতুন কূটকৌশল
গাজা ধ্বংসে ইসরায়েলের নতুন কূটকৌশল
খসড়া টেলিকম নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে
খসড়া টেলিকম নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে