বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২

খসড়া টেলিকম নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে

অংশীজনের আপত্তি
জাকির হোসেন লিটন
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর -০০০১, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৯:৫৫ এএম
খসড়া টেলিকম নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে

দেশের টেলিযোগাযোগ খাতের লাইসেন্স কাঠামোর পুনর্বিন্যাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের করা খসড়া নীতিমালা ঘিরে বিতর্ক এখন তুঙ্গে। এ নীতিমালা নিয়ে অংশীজনের আপত্তির পর দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে এই ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলে এ বিতর্কের পালে আরও হাওয়া লাগে। টেলিযোগাযোগ খাতের অংশীজনের মতে, কোনোরকম আলোচনা না করেই এ নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এ নীতিমালার বাস্তবায়ন হলে দেশীয় উদ্যোক্তারা সংকটে পড়বেন, লাভবান হবেন টেলিকম অপারেটরসহ বিদেশি উদ্যোক্তারা।

বিএনপিও তাদের এ মতের সঙ্গে সহমত পোষণ করে সরকারকে প্রস্তাবিত এ নীতিমালা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে সরকারের দিক থেকে বলা হচ্ছে, গ্রাহকের ভয়েস কল ও ডাটার খরচ কমানোর জন্যই নতুন নীতিমালা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিগত সরকারের আমলে যারা এ ব্যবসায় সুবিধা নিয়েছেন, তারাই এর বিরোধিতা করছে বলেও অভিযোগ সরকারের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, টেলিযোগাযোগ খাতের লাইসেন্স কাঠামোর পুনর্বিন্যাসের জন্য সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উদ্যোগে গত এপ্রিলে ‘টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং রিফর্ম পলিসি-২০২৫’ শীর্ষক খসড়া নীতিমালাটি করা হয়। এটি প্রকাশের পরপরই অংশীজনদের পক্ষ থেকে তার উদ্দেশ্য ও বাস্তবায়ন নিয়ে আপত্তি ওঠে। এমন প্রেক্ষাপটে খসড়া পর্যালোচনা করে মতামত দিতে গত ১৯ জুন প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে একটি কমিটি গঠন করে দেয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। তবে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে মতামত দিতে যেসব কর্মকর্তাকে নিয়ে ১১ সদস্যের এ কমিটি গঠিত হয়, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রশাসন)। অন্য ১০ সদস্যের মধ্যে রয়েছেন বিভাগের যুগ্ম সচিব (টেলিকম), টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিটিআরসির মহাপরিচালক (সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস), বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও ক্রয়), বিটিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (নেটওয়ার্ক প্ল্যানিং), বিটিআরসির একজন উপপরিচালক এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একজন উপসচিব/সিনিয়র সহকারী সচিব।

টেলিকম বিশেষজ্ঞদের মতে, জটিল ও কারিগরিবিষয়ক এ নীতিমালা পর্যালোচনায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রশাসন শাখার একজন কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এ কমিটিতে অপারেটরসহ সংশ্লিষ্ট কোনো অংশীজনকেই রাখা হয়নি, যা দৃশ্যত একপক্ষীয় হিসেবে চিহ্নিত হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই কমিটিতে শুধু বিটিসিএল, টেলিটক, সাবমেরিন কেবল কোম্পানির মতো রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির কর্মকর্তাদের সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। অথচ রাষ্ট্রায়ত্ত এসব কোম্পানির রাজস্ব ভাগাভাগির বিপুল অঙ্কের টাকা বকেয়া রয়েছে বিটিআরসির কাছেই। বিটিসিএলের টেলিযোগাযোগ খাতের প্রায় সব ধরনের লাইসেন্স রয়েছে; কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কোনো ক্ষেত্রেই ব্যবসায়িক সফলতা পায়নি। বিটিআরসির নীতিমালা লঙ্ঘন করে একাধিক প্রকল্প হাতে নেওয়ারও নজির রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের। একই সঙ্গে টেলিযোগাযোগ খাতের প্রকল্প নিয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির অভিযোগও বিটিসিএলের বিরুদ্ধেই। টেলিটক দেশে একেবারেই রুগণ মোবাইল ফোন অপারেটর। এই অপারেটরের কাছে অন্য তিনটি অপারেটরের তুলনায় অনেক বেশি বেতার তরঙ্গ, ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সক্ষমতা এবং জনবল থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি কখনই বাজারে প্রতিযোগিতায় আসতে পারেনি।

অন্যদিকে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে বার বার আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের পাইকারি বাজারে একচেটিয়া প্রভাব থাকলেও দীর্ঘ সময় ধরে নানা অনিয়মের কারণে কোম্পানিটি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী লাভের মুখ দেখেনি কখনই, বরং কাগজ-কলমে দেখানো লাভের হিসাবে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে বার বার। এসব ব্যর্থ ও অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা একটি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় নীতিমালা তৈরির কমিটিতে থেকে কি অবদান রাখবেন, সেটা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেয়।

কী আছে খসড়ায়: টেলিকম খাতের লাইসেন্স কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে এ খসড়ায়। এক্ষেত্রে সেলুলার মোবাইল সার্ভিস ও ফিক্সড টেলিকম সার্ভিসের জন্য পৃথক একটি অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার (এএনএসপি) লাইসেন্স দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এএনএসপিগুলো গ্রাহক পর্যায়েও সেবা দেওয়ার জন্য দায়বদ্ধ থাকবে। জাতীয় পর্যায়ে অবকাঠামো ও ট্রান্সমিশন সেবা যেমন ফাইবার, টাওয়ার ও নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশন পরিচালনার জন্য ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড কানেক্টিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (এনআইসিএসপি) লাইসেন্স দেওয়া হবে। আন্তর্জাতিক ভয়েস, ইন্টারনেট ও ডাটা সংযোগের জন্য নিতে হবে ইন্টারন্যাশনাল কানেক্টিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (আইসিএসপি) লাইসেন্স। স্যাটেলাইট, নন-টেরিস্ট্রিয়াল নেটওয়ার্কস (এনটিএন) ও হাই-অলটিটিউড প্ল্যাটফর্মস (এইচএপি) ভিত্তিক সেবার জন্য নন-টেরিস্ট্রিয়াল নেটওয়ার্কস অ্যান্ড সার্ভিস প্রোভাইডার (এনটিএনএসপি) লাইসেন্স নিতে হবে। তাছাড়া এসএমএস এগ্রিগেটর, ওটিটি ইত্যাদি সেবার জন্য টেলিকম এনাবলড সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে হবে। নতুন এ নীতিমালা কার্যকর হওয়ার পর আইজিডব্লিউ, আইআইজি, আইসিএক্স, এনআইএক্স, এমএনপি লাইসেন্সগুলো ধীরে ধীরে বাতিল হয়ে যাবে। তবে এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবসা করতে হলে ২০২৭ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নতুন কাঠামো অনুসারে লাইসেন্স নিতে হবে।

প্রস্তাবিত এ নীতিমালায় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশি মালিকানার সীমাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে এএনএসপি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ বিদেশি মালিকানা থাকতে পারবে। এনআইসিএসপি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫৫ শতাংশ বিদেশি মালিকানার সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে তা ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। আইসিএসপি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বিদেশি মালিকানার সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ। নতুন এ নীতিমালায় মোবাইল ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক অপারেটর (এমভিএনও) চালুর কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি এসএমপি (সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার) প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করতে না পারে সেজন্য এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের ওপর বিশেষ নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া ব্যয় কমানো ও সেবার পরিধি বাড়াতে অবকাঠামো ভাগাভাগি করা হয়েছে বাধ্যতামূলক। এ নীতিমালা অনুসারে সাইবার নিরাপত্তা আইন, জাতীয় তথ্য আইন ও ডাটা সুরক্ষা নীতিমালা মেনে চলতে হবে। আইনি অনুমোদনের ভিত্তিতে আড়ি পাতার সুযোগ রাখার কথাও বলা হয়েছে এতে। শুধু শহরে সেবা চালুর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে গ্রাম ও অনুন্নত এলাকায়ও সেবা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ভর্তুকি, ছাড় ও বিশেষ তহবিলের সুবিধা পাওয়া যাবে।

পর্যায়ক্রমে নতুন এ নীতিমালা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। প্রথমে এটি কার্যকরের পর প্রয়োজনীয় বিধিমালা সংশোধন হবে। এরপর দ্বিতীয় পর্যায়ে শুরু হবে নতুন লাইসেন্স ইস্যু। সবশেষে ২০২৭ সালের ৩০ জুনের মধ্যে পুরোনো সব লাইসেন্স বাতিল হয়ে নতুন লাইসেন্স কার্যকর হবে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন এ নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে দেশে আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানকারী ২৩টি আইজিডব্লিউ এবং আন্তঃঅপারেটর সেবাদানকারী ২৪টি আইসিএক্স প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হয়ে যাবে। অথচ আইসিএক্স অপারেটররা তাদের আয়ের অর্ধেকই সরকারকে দেয়। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সরকার রাজস্বও পায়। নতুন নীতিমালা অনুসারে এটি স্থানান্তরিত হয়ে চলে যাবে মোবাইল অপারেটরদের কাছে, যার সিংহভাগ মালিকানাই বিদেশিদের হাতে। এতে সরকার রাজস্ববঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাবে স্থানীয় এ প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসাও। কর্মহীন হয়ে পড়বে কয়েক লাখ লোক।

এর আগে টেলিকম পলিসির খসড়া প্রকাশ হওয়ার পরই এ বিষয়ে নিজেদের উদ্বেগ জানায় অ্যাসোসিয়েশন অব আইসিএক্স অপারেটরস অব বাংলাদেশ। সংগঠনটির মতে, এ নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে হাজার হাজার পরিবারের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে, যা দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী টেলিকম খাতের নিয়ন্ত্রণ মূলত বিদেশি বড় কোম্পানিগুলোর হাতে চলে যাবে।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আইন অনুযায়ী এ ধরনের নীতিমালা তৈরির দায়িত্ব বিটিআরসির। বিটিআরসি সেটা করেছে। এখন এ খাতের অংশীজন এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে এ নীতিমালা পরিমার্জন করে চূড়ান্ত করার কথা। তবে সংশোধিত টেলিযোগাযোগ আইন অনুযায়ী ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে অনুমোদনের কথা রয়েছে। এ অবস্থায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ যেভাবে পর্যালোচনা কমিটি গঠন করেছে সে কমিটি কোনোভাবেই এ ধরনের কারিগরি নীতিমালার ক্ষেত্রে মতামত দেওয়ার জন্য উপযুক্ত নয়।’

সাবেক এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এই কমিটিতে এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে আছেন, যেসব প্রতিষ্ঠান বারবার নীতিমালা লঙ্ঘনের জন্য খোদ বিটিআরসি কর্তৃক অভিযুক্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে যথাযথ সুপারিশ আশা করা যায় না।’

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম কালবেলাকে বলেন, ‘ঘন ঘন নীতিমালার পরিবর্তন আমাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে। আমরা যারা ফিক্সড টেলিকম অপারেটর রয়েছি, তারা সবাই স্থানীয় উদ্যোক্তা এবং এর ৯৫ শতাংশই আবার ছোট উদ্যোক্তা। এনটিটিএন অপারেটরদের নতুন নীতিমালায় এনআইসিএসপি বলা হচ্ছে। তাদের নামে-বেনামে ফিক্সড টেলিকম অপারেটরের লাইসেন্স রয়েছে। তাদের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে যে, ফিক্সড টেলিকম অপারেটর চাইলে লাস্ট মাইলে চলে যেতে পারবে। যেহেতু তাদের নামে-বেনামে অন্যান্য লাইসেন্স রয়েছে, সেহেতু তাকে এটা বলার মানে হলো যে, লাস্ট মাইলে ফাইবার অপটিকস আবার চলে যাবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য কোনো সুরক্ষা থাকছে না।’

এদিকে টেলিকম খাতের খসড়া নীতিমালা নিয়ে আইএসপিএবি এবং আইসিএক্স-এর সঙ্গে সহমত পোষণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে বিএনপি। রাজনীতির বাইরে এসে টেলিকমের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘টেলিকম খাতের পলিসি নির্ধারণে সরকার তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।’

খসড়া নীতিমালাটি বিশ্লেষণ করে কিছু গুরুতর সমস্যা পাওয়া গেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘টেলিকম খাতে সমতাভিত্তিক ও টেকসই উন্নয়নে বাধা হতে পারে এ নীতিমালা। এটা ছোট ও মাঝারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে। আমরা সরকারকে আহ্বান জানাই, এ গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা যেন পূর্ণাঙ্গ আর্থিক ও সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণ এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে অংশগ্রহণমূলক আলোচনার পর চূড়ান্ত করা হয়।’

খসড়া নীতিমালার সম্ভাব্য সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের দিক তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একাধিক সেবা খাতে মালিকানা রাখার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে বড় মোবাইল অপারেটররা একাধিক খাতে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এতে প্রতিযোগিতা কমে যাবে এবং ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে পড়বে।’ বিএনপির এমন বক্তব্যের পর খসড়া এ টেলিকম নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক আরও তুঙ্গে উঠেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো এ ধরনের বিষয়ে মতামত দিচ্ছে, এটিকে স্বাগত জানাই। আমরা বিদেশি বিনিয়োগ উন্মুক্ত করার পাশাপাশি স্থানীয় বিনিয়োগকারীদেরও সুরক্ষা দিতে চাইছি। যেসব ব্যবসায়ী বিগত সময়ে কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কয়েকশ কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছেন, তাদের আমরা নতুন লাইসেন্স রেজিমে চাই না। তবে তাদের লাইসেন্স কেড়ে নেওয়া হবে না। যে সময় পর্যন্ত তারা লাইসেন্স পেয়েছিলেন সেটি শেষ হলে তখন তাদের নতুন বিনিয়োগ ও লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করতে হবে।’

মন্তব্য করুন

তারেক রহমান / আওয়ামী লীগের দমনপীড়ন ছিল ইয়াজিদের মতো
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া নিষ্ঠুর আওয়ামী নেতাদের পৈশাচিক দমনপীড়ন ছিল ইয়াজিদ বাহিনীর সমতুল্য। গত ১৬ বছরে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার সব ভাঁওতাবাজির নির্বাচন, মানুষের ভোটাধিকার হরণ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, সন্ত্রাস, হানাহানি ও দেশের টাকা বিদেশে পাচারসহ এক অবর্ণনীয় শোষণ ও জুলুমের রাজত্ব কায়েম করেছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায়ে সাজা দিয়ে কারারুদ্ধ রাখা এবং তাকে সুচিকিৎসা বঞ্চিত করে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছিল। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে গতকাল শনিবার এক বাণীতে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। বিএনপির শীর্ষ এই নেতা আরও বলেন, আজও ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার ঘনিষ্ঠজনের আত্মদানের চেতনায় দেশে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। আর কোনোভাবেই যাতে নির্দয় অত্যাচারীর অভ্যুদয় না ঘটে সেজন্য ইমাম বাহিনীর যুদ্ধ আমাদের সবসময় প্রতিরোধের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করবে। আমি শহীদ হজরত ইমাম হোসেন (রা.), তার শহীদ পরিবার ও সঙ্গীদের শাহাদাতের স্মরণে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং রুহের মাগফিরাত কামনা করি। বিবৃতিতে আশুরার তাৎপর্য তুলে ধরে তারেক বলেন, ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্য অত্যন্ত ঘটনাবহুল ও স্মরণীয় একটি দিন ১০ মহররম। বিশ্বের ইতিহাসে এ দিনটিতে অসংখ্য ঘটনা সংঘটিত হয়। তাই এ দিনটির মহিমা অসীম। এক বিয়োগান্তক বিষাদময় ঘটনার স্মৃতিবিজড়িত এইদিন, যা পবিত্র আশুরা হিসেবে পালন করা হয়। অন্যায় অবিচার জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এ দিনে কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতবরণ করেছিলেন। এই দিন শোক, শ্রদ্ধা ও আত্মত্যাগের দিন। জাগতিক অন্যায় ও দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং ইমাম হোসাইন (রা.)-এর আত্মত্যাগ বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ার মুসলমান ও বিশ্ববাসীর জন্য এক মহিমান্বিত অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। ইমাম হোসাইনের কষ্ট ও শাহাদাত এবং ইসলাম বাঁচিয়ে রাখার জন্য তিনি যে আত্মত্যাগ করেছিলেন, তা দুনিয়ায় এক বিশাল প্রেরণার উৎসস্থল হিসেবে বিবেচিত হয়। অন্যদিকে সৃষ্টিকর্তা কেন্দ্রিক ন্যায়বিচার, তাকওয়া, ত্যাগ ও মানবিক মর্যাদার মর্মবাণী প্রকাশিত হয়। তারেক রহমান আরও বলেন, হজরত হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত অন্যায়, অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক নজিরবিহীন আদর্শিক সংগ্রামের উদাহরণ। ক্ষমতার প্রতি নিবিড় নিবিষ্ট মোহে আচ্ছন্ন থেকে যারা ইনসাফ ও মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করেছিল তাদের বিরুদ্ধেই ইমাম বাহিনী যুদ্ধে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিল। কারবালায় ইমাম বাহিনীর শাহাদাতবরণ সর্বকালে দেশে দেশে অত্যাচারীর কবল থেকে মুক্ত হতে নিপীড়িত মজলুম মানুষকে উদ্দীপ্ত করে আসছে।
আওয়ামী লীগের দমনপীড়ন ছিল ইয়াজিদের মতো
গাজায় কি আবারও ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এর আগে বেশ কয়েকবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও ইসরায়েল ও হামাস দুই পক্ষই নিজেদের দাবির প্রতি অনড় অবস্থানে ছিল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধ শুরুর প্রথম থেকেই হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েল সংঘাত শেষে যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক চাপের মুখে সে লক্ষ্য থেকে তাকে কিছুটা সরে আসতে হচ্ছে। অন্যদিকে, গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য হামাস আলোচনা করার সদিচ্ছা সব সময় দেখালেও ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উত্থাপনের পর ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে ইসরায়েল। শুরুতে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে স্পষ্ট মন্তব্য না করলেও এবার অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে হামাসও। চির অস্থিতিশীল ভূখণ্ডটিতে চলতি মাসেই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং ইসরায়েলের যুদ্ধবিষয়ক লক্ষ্য পরিবর্তিত হওয়ায় এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের ইতিহাস বিবেচনা করলে প্রশ্ন জাগে, এবারও কি একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হবে কি না। দুই দেশের মধ্যে সংকটের শুরু ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের পার্টিশন পরিকল্পনার মাধ্যমে। এরপর ১৯৪৮ সালে নিজেদের স্বাধীন দেশ বলে ইসরায়েল ঘোষণা দিলে মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম আরব যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এক বছর পর ১৯৪৯ সালে একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তির মাধ্যমে এ যুদ্ধের অবসান ঘটে। কিন্তু ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের সহিংসতা থামেনি। ১৯৬৭ সালে গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীর দখলে নেয় ইসরায়েল। এ ঘটনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ জরুরিভিত্তিতে একটি শান্তি প্রস্তাব পাস করলে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হয়। এরপর ১৯৭৯ সালে ইয়োম কিপুর যুদ্ধ ও ১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদা সংগঠিত হলে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আরব দেশগুলো আর ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা হয়। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি মেলেনি। বিশেষত ১৯৯১ সালের অক্টোবরে স্পেনের মাদ্রিদে শুরু হওয়া শান্তি আলোচনা দুই বছরেও কোনো সমাধান তৈরি করতে পারেনি। অবশেষে ১৯৯৩ সালে অসলো শান্তিচুক্তির মাধ্যমে গাজা উপত্যকার কিছু অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় ইসরায়েল। অসলো শান্তিচুক্তির পর ১৯৯৪ সালের মে মাসে গাজা-জেরিকো সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয় এবং এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনে পুলিশ বাহিনী ও আইনি কাঠামো গঠনে ইসরায়েল সহযোগিতা করার আশ্বাস দেয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন আলোচনা হয়েছে। ২০২৩ সালে শুরু হওয়া হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৯ বার যুদ্ধবিরতি আলোচনা হয়েছে। গাজায় দুবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও তা ক্ষণস্থায়ী ছিল। এবারের যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত এ যুদ্ধবিরতির বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি। এর আগের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের মতো এবারও যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে আট ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। অন্যদিকে, ইসরায়েলে কারাবন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেবে ইসরায়েল। তবে কতজনকে মুক্তি দেওয়া হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। হামাস দাবি জানিয়েছে, এবার বন্দিবিনিময়ের সময় কোনো প্রোপাগান্ডা যেন না ছড়াতে পারে, সেজন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। এ ছাড়া গাজায় জাতিসংঘ পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে শুরু করার শর্তও দিয়েছে হামাস। গতকাল শনিবার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী ও দলের সঙ্গে পরামর্শ শেষে গতকাল শনিবার হামাস গাজায় যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার কথা জানিয়েছে। টেলিগ্রামে পোস্ট করা একটি বিবৃতিতে হামাস বলেছে, তারা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে একটি ইতিবাচক জবাব জমা দিয়েছে এবং যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার নতুন পর্বে তাৎক্ষণিকভাবে অংশ নিতে পুরোপুরি প্রস্তুত আছে। সংস্থাটি চুক্তির সামগ্রিক কাঠামো মেনে নিলেও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের অনুরোধ জানিয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি বিষয়ক আলোচনা ভেস্তে গেলে আবার হামলা শুরু করা যাবে না—এমন নিশ্চয়তা যুক্তরাষ্ট্রকে দিতে হবে। অর্থাৎ এখনো পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারেনি হামাস। এদিকে সংস্থাটির সাড়া পাওয়ায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। গত ২৪ জুন কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকেই গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জোরদার হতে শুরু করে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সিএনএনকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতির মাধ্যমেই হামাস-ইসরায়েল আলোচনার পথ সুগম হয়েছে। এ ছাড়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সহিংসতার জন্য নেতানিয়াহুর ওপরও আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে শুরু করেছে। চলতি বছর মার্চে গাজায় অবরোধ দেওয়ার পর বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ত্রাণ সরবরাহ শুরু করে ইসরায়েল। কিন্তু ত্রাণ সংস্থাটি যেন ফিলিস্তিনিদের জন্য মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে ১৩০টিরও বেশি দাতব্য সংস্থা এই সংস্থার কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। গতকাল শনিবারও ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৪৭ জন ত্রাণপ্রত্যাশী নিহত হন। অন্যদিকে, ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও চাপের মুখে নেতানিয়াহু। নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থি সরকার গাজায় সহিংসতার পক্ষে। কিন্তু দেশটির বিরোধী দলের নেতা ইয়াইর লাপিদ জানিয়েছেন, জিম্মি মুক্তি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য তিনি জোট সরকার গড়তেও আগ্রহী। এমনকি ইসরায়েলের অসংখ্য জরিপেও যুদ্ধ বন্ধ করে হলেও জিম্মি মুক্তির বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। এসব চাপের মুখেই গত সপ্তাহে অনেককে চমকে দিয়ে নেতানিয়াহু জিম্মি মুক্তির বিষয়টিকে তার প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তার এই ঘোষণা জিম্মিদের পরিবারের কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছে। চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীও কূটনৈতিক পন্থায় সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, হামাসের যোদ্ধা নিয়মিত অভিযানে অনেক কমে গেছে। তাই গাজায় কৌশলগত পদ্ধতি প্রয়োগ করে কোনো লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না। অর্থাৎ আলোচনার উপযুক্ত মঞ্চ তৈরি হয়েছে। যদি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দাবিতে আলোচনা ভেস্তে না যায়, তাহলে আগামী সপ্তাহেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হতে পারে।
গাজায় কি আবারও ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি
আজ পবিত্র আশুরা শোক ও ত্যাগের মহিমাময় দিন
আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। মুসলিম বিশ্বে এক শোকাবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। আরবিতে ‘আশারা’ অর্থ দশ। সেখান থেকেই মহররমের ১০ তারিখকে ‘আশুরা’ বলা হয়। সৃষ্টির শুরু থেকে নানা ঐতিহাসিক ঘটনার কারণে হিজরি মহররম মাসের দশম দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনে আল্লাহ তায়ালা হজরত মুসা (আ.) ও তার অনুসারীদের ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন এবং ফেরাউনকে নীল নদে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এই দিনেই আল্লাহ আরশ, কুরসি, লওহ, কলম, আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। হজরত আদম (আ.)-কে এই দিনেই সৃষ্টি করা হয় এবং শয়তানের প্ররোচনায় ভুল করার পর তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয় এবং পরে আল্লাহর প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়। এ ছাড়া হজরত নূহ (আ.)-এর মহাপ্লাবনের পর নৌকা এই দিনেই নোঙর করে। হজরত ইব্রাহিম (আ.) শত বিধিনিষেধের মধ্যে এই দিনেই জন্মগ্রহণ করেন। এই দিনেই কারবালার প্রান্তরে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার সঙ্গীরা শাহাদাত বরণ করেন, যা বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের কাছে শোক ও ত্যাগের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরাও আজ নামাজ, রোজা, ইবাদত বন্দেগি, দান-খয়রাত ও জিকির-আসকারের মাধ্যমে দিনটি অতিবাহিত করবেন। শিয়া সম্প্রদায় রাজধানীতে তাজিয়া মিছিল বের করবে। দিনটি উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ সারা দেশে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল হবে। আজ সরকারি ছুটির দিন। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা তার বাণীতে বলেন, পবিত্র আশুরা জুলুম ও অবিচারের বিপরীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মানবজাতিকে শক্তি ও সাহস জোগায়। তিনি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন। তারেক রহমান তার বাণীতে বলেন, ‘ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার ঘনিষ্ঠজনদের আত্মদানের চেতনায় দেশে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে, কোনোভাবেই যাতে নির্দয় অত্যাচারীর অভ্যুদয় না ঘটে, সেজন্য ইমাম বাহিনীর যুদ্ধ আমাদের সব সময় প্রতিরোধের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করবে। আমি শহীদ হজরত ইমাম হোসাইন (রা.), তার শহীদ পরিবার ও সঙ্গীদের শাহাদাতের স্মরণে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং রুহের মাগফিরাত কামনা করি।’ বায়তুল মোকাররমে বিশেষ দোয়া মাহফিল: পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আজ বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ‘পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। মদিনাতুল উলুম মডেল ইনস্টিটিউট মহিলা কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা মো. মুজির উদ্দিন আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এবং দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ এতে সভাপতিত্ব করবেন। এ ছাড়া সারা দেশে মসজিদগুলোতে আশুরার তাৎপর্য ও মহিমা নিয়ে বিশেষ দোয়া করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাজিয়া মিছিল ও নিরাপত্তা পুলিশের নির্দেশনা: প্রতি বছরের মতো এবারও শিয়া সম্প্রদায় রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসেনী দালান থেকে তাজিয়া মিছিল বের করবে। এ নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) থেকে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি বহন এবং আতশবাজি ও পটকা ফোটানো সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানানো হয় গণবিজ্ঞপ্তিতে। ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মো. সরওয়ার জানান, পুরান ঢাকার হোসেনী দালান, ইমামবাড়া, বড় কাটরা, মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্প, শিয়া মসজিদ, বিবিকা রওজা, মিরপুর পল্লবী বিহারী ক্যাম্পসহ পবিত্র আশুরা পালিত হয়—এমন সব স্থানে পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ইমামবাড়াগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে এবং যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটগুলো প্রস্তুত থাকবে। তাজিয়া মিছিল চলাকালে যানজট এড়াতে বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
আজ পবিত্র আশুরা শোক ও ত্যাগের মহিমাময় দিন
মুরাদনগরের ৩ খুনে নেতৃত্বে ছিলেন চেয়ারম্যান-মেম্বার
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ ও বাচ্চু মেম্বারের নেতৃত্বে লোকজন বাড়ি ঘেরাও করে। এরপর নির্মমভাবে পেটানো হয় মা রোকসনা আক্তার রুবিকে। মাকে বাঁচাতে এসেছিলেন মেয়ে তাসফিয়া আক্তার জোনাকি, রুমা আক্তার ও ছেলে রাসেল মিয়া। তাদেরও নির্মমভাবে পেটানো হয়। তারা লুটিয়ে পড়লেও মন গলেনি হামলাকারীদের। একপর্যায়ে লোকজন তাদের এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এতে মৃত্যু হয় মা ও দুই সন্তানের। আরেক সন্তান রুমা হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লার মুরাদনগরের আকুবপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামে মব সৃষ্টি করে তিনজনকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় উঠে এসেছে নৃশংসতার তথ্য। গত শুক্রবার রাতে নিহত রুবির আরেক মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে বাঙ্গরা বাজার থানায় এ মামলা করেন। এতে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৬ জনকে আসামি করা হয়। চাঞ্চল্যকর ওই ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে। এর মধ্যে গতকাল ভোরে এজাহারভুক্ত বাবুল মিয়া (৫০) ও ছবির মিয়াকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। তাদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরা ঢাকায় আত্মগোপনে থাকা আরও ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেন। বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’ এদিকে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে কড়ইবাড়ি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, মুরাদনগর-নবীনগর সড়কের কড়ইবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রুবির বাড়ির পাশে একটি ওষুধের দোকান থেকে স্থানীয় এক শিক্ষকের মোবাইল ফোন চুরি হয়। অভিযোগ ওঠে, বোরহান উদ্দিন ওরফে মারুফ নামের এক তরুণ ওই ফোনটি চুরি করেছে। ওই তরুণ রুবির মেয়ে জোনাকির স্বামী মনির হোসেনের সঙ্গে মাদকের কারবার করে। মোবাইল ফোন চুরির ঘটনায় মঙ্গলবার স্থানীয় আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার বাচ্চু মিয়া ও স্থানীয় বাছির উদ্দিনের নেতৃত্ব মারুফকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিতে যান রুবি। সেখানে বাচ্চু-বাছিরসহ অন্যদের সঙ্গে রুবি ও তার পক্ষের লোকজনের বাগবিতণ্ডা এবং একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। ওই ঘটনাকে ঘিরে পরদিন বুধবারও দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এসব নিয়ে দুপক্ষে উত্তেজনা চলছিল। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার সকালে কড়ইবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রুবির বাড়িতে লোকজন নিয়ে যান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া। তখনো তাদের সঙ্গে রুবি ও তার মেয়েদের বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের লোকজন মিলে হামলা শুরু করে। ঘটনাস্থলেই রুবি তার ছেলে রাসেল ও মেয়ে জোনাকির মৃত্যু হয়। শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে তিনজনের মরদেহ বুঝে নেন নিহত জোনাকি আক্তারের স্বামী মনির হোসেন। ওইদিন সন্ধ্যায় গ্রাম পুলিশের সহায়তায় তিনটি কবর খোঁড়া হয়। গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়ায় জানাজায়ও ইমামসহ ৮ থেকে ৯ জন উপস্থিত ছিলেন। পরে রাতেই দাফন শেষ হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আবু তাহের ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, ‘সুরতহাল প্রতিবেদনে রোকসানা আক্তার রুবি ও ছেলে রাসেলের মাথা বেশি থেঁতলানো ছিল। মেয়ে রুমা আক্তারসহ তিনজনের মাথা ও শরীরেই কোপ ও লাঠির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’ গ্রেপ্তার অন্য ছয়জন হলো ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বাচ্চু মিয়া, রবিউল আওয়াল, আতিকুর রহমান (৪২), মো. বায়েজ মাস্টার (৪৩), দুলাল (৪৫) ও আকাশ (২৪)। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল ও একটি টর্চ লাইট উদ্ধার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘মূলত একটি মোবাইল ফোন চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।’
মুরাদনগরের ৩ খুনে নেতৃত্বে ছিলেন চেয়ারম্যান-মেম্বার
শ্রীলঙ্কার ‘মিরপুর’ জয় মিরাজদের
শ্রীলঙ্কার ‘মিরপুর’ জয় মিরাজদের
খরচে ষোলোআনা ফল শূন্য
খরচে ষোলোআনা ফল শূন্য
বিশেষ সহকারী
দুদককে থামিয়ে দিতে বিশেষ সহকারীর চিঠি
গাজা ধ্বংসে ইসরায়েলের নতুন কূটকৌশল
গাজা ধ্বংসে ইসরায়েলের নতুন কূটকৌশল