বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২

মুরাদনগরে গোয়েন্দা ব্যর্থতাকেই বড় করে দেখছেন সবাই

তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা
মাসুক আলতাফ চৌধুরী, কুমিল্লা
প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর -০০০১, ১২:০০ এএম
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৫, ০৭:১২ এএম
মুরাদনগরে গোয়েন্দা ব্যর্থতাকেই বড় করে দেখছেন সবাই

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কড়ইবাড়ি ট্র্যাজেডির বড় কারণ পুলিশের গোয়েন্দা ব্যর্থতা—এমনটিই মনে করছেন সবাই। মোবাইল চুরির ঘটনায় দুদিন ধরে হামলা-মারধর এবং উত্তেজনার পরও আগে থেকে পুলিশ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। এলাকাবাসী জানান, পরিবারটি মাদক কারবারি, ৪০ বছর ধরে এমন ব্যবসা করে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই মিথ্যা মামলা করে, ভয়ভীতি দেখায়। পুলিশের প্রশ্রয় ছাড়া এমনটি সম্ভব নয়।

মুরাদপুরের আকবরপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামে মাদক কেনাবেচার অভিযোগ এনে গ্রামবাসী মিলে বৃহস্পতিবার সকালে পরিকল্পিকভাবে একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করে। নিহতরা হলেন কড়ইবাড়ি গ্রামের জুয়েল মিয়ার স্ত্রী রোকসানা আক্তার রুবি (৫৫), তার ছেলে রাসেল মিয়া (২৮), মেয়ে জোনাকি আক্তার (২৩)। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত রুবির আরেক মেয়ে রুমা আক্তারের চিকিৎসা চলছে। তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা মেডিকেলে তিনজনের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। পরে সন্ধ্যার পর স্থানীয় সামাজিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়। এর আগে গ্রামে কোনো মানুষ না থাকায় বাঙ্গুরা থানা-পুলিশের সহায়তায় গ্রাম পুলিশ তিনজনের খবর খোঁড়েন।

আকবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ আলম একই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘পুলিশের বিরুদ্ধে কথা বলা যায় না। আমরা রাজনীতি করি, সব জেনে-বুঝেও কিছু বলতে পারছি না।’

স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন, গত মঙ্গলবার মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটল। রোকসানা আক্তার রুবির পরিবার বাচ্চু মেম্বার, শিক্ষক রুহুল আমীন ও তার ছেলেকে উল্টো দুই দফা মারধর করল। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ ফুঁসে উঠল, অথচ পুলিশ কিছুই টের পেল না। বুধবার এ ঘটনা নিয়ে বাজারে তিন রাস্তায় মাথায় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ সবাই একত্রিত হলেন। তারা সিদ্ধান্ত নিলেন পরদিন সকালে তাদের বাড়ি গিয়ে হামলা করা হবে, পরিবারটিকে উচ্ছেদ করা হবে। তারপরও পুলিশ নীরব ছিল। কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এসবই পুলিশের গোয়েন্দা ব্যর্থতা। বুধবার একত্রিত হওয়ার পর পুলিশ প্রস্তুত থাকলে বৃহস্পতিবার সকালে গণপিটুনির ঘটনা না-ও ঘটতে পারত।

সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সাবেক সভাপতি শাহ মো. আলমগীর খান বলেন, ‘মাদক কারবারির সঙ্গে পুলিশের একটা সখ্য থাকেই। পুলিশের প্রশ্রয় পেয়েই পরিবারটি এলাকায় এমন ভয়ানক হয়ে উঠেছে বলে মনে হয়। আর পুলিশ আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে মব থামাতে পারত। এতে হত্যাকাণ্ডের হাত থেকে হয় তো রক্ষা পেত পরিবারটি।’

এ বিষয়ে পুলিশের কেউ কোনো কথা বলতে নারাজ। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক (ডিআইও) মামুনুর রশীদ কালবেলাকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারি না। এটা আমার এখতিয়ার নয়।’ তবে পুলিশের গোয়েন্দা ব্যর্থতা রয়েছে—এমনটি মনে করেন না এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

স্থানীয় বাসিন্দা ফয়সাল বলেন, ‘রুবির পরিবার ৪০ বছর ধরে মাদক কেনাবেচায় জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে বহু মামলা। কিন্তু এভাবে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

এদিকে কড়ইবাড়ি গ্রাম এখন আতঙ্কের নগরী। গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে পুরো গ্রাম। অধিকাংশ বাড়িঘরে তালা ঝুলছে। গ্রামের রাস্তাঘাট ফাঁকা। নারী-শিশুদের চোখে-মুখে আতঙ্ক। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় দুই জনপ্রতিনিধি ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ ও সদস্য বাচ্চু মিয়া। তারাও ঘটনার পর থেকে পলাতক। তবে গতকাল মোবাইল ফোনে চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। কালবেলাসহ স্থানীয় চারজন সাংবাদিক তার সঙ্গে কথা বলেন। শিমুল বিল্লাহ বলেন, ‘আমরা নিজেরাই হামলার শিকার হয়ে এলাকা ছাড়ি। পরে গ্রামের লোকজন উত্তেজিত হয়ে ঘটনা ঘটিয়েছে। এ হামলার সঙ্গে আমি জড়িত নই।’

তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ইঙ্গিত করে নিহত রুবির আত্মীয় হানিফ মিয়া বলেন, ‘যারা মারল তারা সাধারণ লোক না। তারা চেয়ারে বসা লোকদের দেখেই সাহস পেয়েছে। ওরা (চেয়ারম্যান-মেম্বার) চুপ করে না থাকলে এমন হতো না।’

নিহত রাসেলের স্ত্রী মীম আক্তার বলেন, ‘বাড়ির সামনে ৮০ থেকে ৯০ জন লোক লাঠিসোটা নিয়ে আসে। প্রথমে তারা বাড়িতে ইট ছোড়ে, পরে ঢুকে পড়ে। আমার শাশুড়িকে প্রথমে মারতে মারতে উঠানে ফেলে রাখে। পাশের ঘর থেকে আমার দুই ননদ বের হলে তাদেরও পেটানো হয়। আমার বাপের বাড়ি ছিল আমার স্বামী রাসেল। হামলার ঘটনা জানতে পেরে মোটরসাইকেলে করে সে বাড়ির দিকে আসে। তাকেও গেটের সামনে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হামলা ও হত্যার নেতৃত্ব দিয়েছেন এলাকার বাছির নামে এক ব্যক্তি।’

স্থানীয় আরেক ব্যক্তি জানান, চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ আর মেম্বার বাচ্চু সামনে ছিলেন। কেউ কাউকে থামাননি। বরং লোকে বলেছে, ‘চেয়ারম্যান সাহেব আছেন, কিছু হবে না’। তারপর শুরু হয় পিটুনি।

এদিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুরে তিনজনের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ হয়। পরে বিকেলে পুলিশ পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে। পুলিশ বলছে, নির্মম ঘটনার শিকার পরিবারটির অন্য সদস্যদের ঘটনার পর থেকে খোঁজা হচ্ছিল। পরে বিকেলে নিহত রুবির মেয়ের জামাই মনির হোসেন হাসপাতাল থেকে তিনজনের মরদেহ বুঝে নেন। কালবেলাকে এসব তথ্য জানান বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই অভিযান চলছে। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ রয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।

পুলিশ সুপার নজির আহমেদ খান বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। তদন্ত চলছে। জড়িত কেউ ছাড় পাবে না। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নিহতদের পরিবার এখনো মামলা করেনি কেন, সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা পরিবারকে সময় দিচ্ছি। চাই না তাদের ওপর কোনো চাপ তৈরি হোক। তারা মরদেহ বুঝে নিয়েছে। দাফন শেষেই মামলা করবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবারের পুত্রবধূ নিহত রাসেলের স্ত্রী মীম আক্তার এলাকায় আছেন। বড় মেয়ে এবং নিহত রোকসানা আক্তার রুবির স্বামী জুয়েল মিয়া বৃহস্পতিবার ঘটনার পর সারাদিন গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন। নিহত জোনাকি আক্তারের স্বামী মনির হোসেনও লোকচক্ষুর আড়ালে আছেন। পুলিশ তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালায়। গতকাল সকালে পরিস্থিতি বুঝে তারাও যোগাযোগ করেন।

হামলায় আহত রুবির আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৫) সংকটাপন্ন অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (কুমেক) চিকিৎসাধীন।

ঘটনাটি ন্যক্কারজনক আখ্যা দিয়ে ব্লাস্ট কুমিল্লার আইনজীবী শামীমা জাহান কালবেলাকে বলেন, ‘মেনে নিলাম তারা অত্যাচারী, মামলাবাজ ও মাদক কারবারি, তাই বলে মোবাইল চুরি বা এমন ঘটনা কেন্দ্র করে মব সৃষ্টি করে কাউকে পিটিয়ে মেরে ফেলা যায় না। যারা ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। মাদক কারবারি বলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা থেকে পার পাওয়া যাবে না।’

মন্তব্য করুন

তারেক রহমান / আওয়ামী লীগের দমনপীড়ন ছিল ইয়াজিদের মতো
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া নিষ্ঠুর আওয়ামী নেতাদের পৈশাচিক দমনপীড়ন ছিল ইয়াজিদ বাহিনীর সমতুল্য। গত ১৬ বছরে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার সব ভাঁওতাবাজির নির্বাচন, মানুষের ভোটাধিকার হরণ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, সন্ত্রাস, হানাহানি ও দেশের টাকা বিদেশে পাচারসহ এক অবর্ণনীয় শোষণ ও জুলুমের রাজত্ব কায়েম করেছিল। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় ফরমায়েশি রায়ে সাজা দিয়ে কারারুদ্ধ রাখা এবং তাকে সুচিকিৎসা বঞ্চিত করে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছিল। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে গতকাল শনিবার এক বাণীতে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। বিএনপির শীর্ষ এই নেতা আরও বলেন, আজও ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার ঘনিষ্ঠজনের আত্মদানের চেতনায় দেশে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। আর কোনোভাবেই যাতে নির্দয় অত্যাচারীর অভ্যুদয় না ঘটে সেজন্য ইমাম বাহিনীর যুদ্ধ আমাদের সবসময় প্রতিরোধের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করবে। আমি শহীদ হজরত ইমাম হোসেন (রা.), তার শহীদ পরিবার ও সঙ্গীদের শাহাদাতের স্মরণে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং রুহের মাগফিরাত কামনা করি। বিবৃতিতে আশুরার তাৎপর্য তুলে ধরে তারেক বলেন, ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্য অত্যন্ত ঘটনাবহুল ও স্মরণীয় একটি দিন ১০ মহররম। বিশ্বের ইতিহাসে এ দিনটিতে অসংখ্য ঘটনা সংঘটিত হয়। তাই এ দিনটির মহিমা অসীম। এক বিয়োগান্তক বিষাদময় ঘটনার স্মৃতিবিজড়িত এইদিন, যা পবিত্র আশুরা হিসেবে পালন করা হয়। অন্যায় অবিচার জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এ দিনে কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতবরণ করেছিলেন। এই দিন শোক, শ্রদ্ধা ও আত্মত্যাগের দিন। জাগতিক অন্যায় ও দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং ইমাম হোসাইন (রা.)-এর আত্মত্যাগ বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ার মুসলমান ও বিশ্ববাসীর জন্য এক মহিমান্বিত অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। ইমাম হোসাইনের কষ্ট ও শাহাদাত এবং ইসলাম বাঁচিয়ে রাখার জন্য তিনি যে আত্মত্যাগ করেছিলেন, তা দুনিয়ায় এক বিশাল প্রেরণার উৎসস্থল হিসেবে বিবেচিত হয়। অন্যদিকে সৃষ্টিকর্তা কেন্দ্রিক ন্যায়বিচার, তাকওয়া, ত্যাগ ও মানবিক মর্যাদার মর্মবাণী প্রকাশিত হয়। তারেক রহমান আরও বলেন, হজরত হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত অন্যায়, অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক নজিরবিহীন আদর্শিক সংগ্রামের উদাহরণ। ক্ষমতার প্রতি নিবিড় নিবিষ্ট মোহে আচ্ছন্ন থেকে যারা ইনসাফ ও মানবতাকে ভূলুণ্ঠিত করেছিল তাদের বিরুদ্ধেই ইমাম বাহিনী যুদ্ধে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিল। কারবালায় ইমাম বাহিনীর শাহাদাতবরণ সর্বকালে দেশে দেশে অত্যাচারীর কবল থেকে মুক্ত হতে নিপীড়িত মজলুম মানুষকে উদ্দীপ্ত করে আসছে।
আওয়ামী লীগের দমনপীড়ন ছিল ইয়াজিদের মতো
গাজায় কি আবারও ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এর আগে বেশ কয়েকবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও ইসরায়েল ও হামাস দুই পক্ষই নিজেদের দাবির প্রতি অনড় অবস্থানে ছিল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধ শুরুর প্রথম থেকেই হামাসকে নির্মূল করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েল সংঘাত শেষে যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক চাপের মুখে সে লক্ষ্য থেকে তাকে কিছুটা সরে আসতে হচ্ছে। অন্যদিকে, গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য হামাস আলোচনা করার সদিচ্ছা সব সময় দেখালেও ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উত্থাপনের পর ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে ইসরায়েল। শুরুতে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে স্পষ্ট মন্তব্য না করলেও এবার অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে হামাসও। চির অস্থিতিশীল ভূখণ্ডটিতে চলতি মাসেই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপ এবং ইসরায়েলের যুদ্ধবিষয়ক লক্ষ্য পরিবর্তিত হওয়ায় এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের ইতিহাস বিবেচনা করলে প্রশ্ন জাগে, এবারও কি একটি ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হবে কি না। দুই দেশের মধ্যে সংকটের শুরু ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের পার্টিশন পরিকল্পনার মাধ্যমে। এরপর ১৯৪৮ সালে নিজেদের স্বাধীন দেশ বলে ইসরায়েল ঘোষণা দিলে মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম আরব যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এক বছর পর ১৯৪৯ সালে একটি অস্ত্রবিরতি চুক্তির মাধ্যমে এ যুদ্ধের অবসান ঘটে। কিন্তু ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের সহিংসতা থামেনি। ১৯৬৭ সালে গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীর দখলে নেয় ইসরায়েল। এ ঘটনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ জরুরিভিত্তিতে একটি শান্তি প্রস্তাব পাস করলে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হয়। এরপর ১৯৭৯ সালে ইয়োম কিপুর যুদ্ধ ও ১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদা সংগঠিত হলে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আরব দেশগুলো আর ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা হয়। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি মেলেনি। বিশেষত ১৯৯১ সালের অক্টোবরে স্পেনের মাদ্রিদে শুরু হওয়া শান্তি আলোচনা দুই বছরেও কোনো সমাধান তৈরি করতে পারেনি। অবশেষে ১৯৯৩ সালে অসলো শান্তিচুক্তির মাধ্যমে গাজা উপত্যকার কিছু অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় ইসরায়েল। অসলো শান্তিচুক্তির পর ১৯৯৪ সালের মে মাসে গাজা-জেরিকো সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয় এবং এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনে পুলিশ বাহিনী ও আইনি কাঠামো গঠনে ইসরায়েল সহযোগিতা করার আশ্বাস দেয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে ফিলিস্তিনের অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন আলোচনা হয়েছে। ২০২৩ সালে শুরু হওয়া হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৯ বার যুদ্ধবিরতি আলোচনা হয়েছে। গাজায় দুবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও তা ক্ষণস্থায়ী ছিল। এবারের যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত এ যুদ্ধবিরতির বিস্তারিত এখনো জানা যায়নি। এর আগের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের মতো এবারও যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে আট ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। অন্যদিকে, ইসরায়েলে কারাবন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেবে ইসরায়েল। তবে কতজনকে মুক্তি দেওয়া হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। হামাস দাবি জানিয়েছে, এবার বন্দিবিনিময়ের সময় কোনো প্রোপাগান্ডা যেন না ছড়াতে পারে, সেজন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। এ ছাড়া গাজায় জাতিসংঘ পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে শুরু করার শর্তও দিয়েছে হামাস। গতকাল শনিবার ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী ও দলের সঙ্গে পরামর্শ শেষে গতকাল শনিবার হামাস গাজায় যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার কথা জানিয়েছে। টেলিগ্রামে পোস্ট করা একটি বিবৃতিতে হামাস বলেছে, তারা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে একটি ইতিবাচক জবাব জমা দিয়েছে এবং যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার নতুন পর্বে তাৎক্ষণিকভাবে অংশ নিতে পুরোপুরি প্রস্তুত আছে। সংস্থাটি চুক্তির সামগ্রিক কাঠামো মেনে নিলেও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের অনুরোধ জানিয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হলো, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি বিষয়ক আলোচনা ভেস্তে গেলে আবার হামলা শুরু করা যাবে না—এমন নিশ্চয়তা যুক্তরাষ্ট্রকে দিতে হবে। অর্থাৎ এখনো পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারেনি হামাস। এদিকে সংস্থাটির সাড়া পাওয়ায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। গত ২৪ জুন কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকেই গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জোরদার হতে শুরু করে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সিএনএনকে জানিয়েছেন, ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতির মাধ্যমেই হামাস-ইসরায়েল আলোচনার পথ সুগম হয়েছে। এ ছাড়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সহিংসতার জন্য নেতানিয়াহুর ওপরও আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে শুরু করেছে। চলতি বছর মার্চে গাজায় অবরোধ দেওয়ার পর বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ত্রাণ সরবরাহ শুরু করে ইসরায়েল। কিন্তু ত্রাণ সংস্থাটি যেন ফিলিস্তিনিদের জন্য মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে ১৩০টিরও বেশি দাতব্য সংস্থা এই সংস্থার কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। গতকাল শনিবারও ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৪৭ জন ত্রাণপ্রত্যাশী নিহত হন। অন্যদিকে, ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও চাপের মুখে নেতানিয়াহু। নেতানিয়াহুর কট্টর ডানপন্থি সরকার গাজায় সহিংসতার পক্ষে। কিন্তু দেশটির বিরোধী দলের নেতা ইয়াইর লাপিদ জানিয়েছেন, জিম্মি মুক্তি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য তিনি জোট সরকার গড়তেও আগ্রহী। এমনকি ইসরায়েলের অসংখ্য জরিপেও যুদ্ধ বন্ধ করে হলেও জিম্মি মুক্তির বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। এসব চাপের মুখেই গত সপ্তাহে অনেককে চমকে দিয়ে নেতানিয়াহু জিম্মি মুক্তির বিষয়টিকে তার প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তার এই ঘোষণা জিম্মিদের পরিবারের কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছে। চলতি সপ্তাহে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীও কূটনৈতিক পন্থায় সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা সিএনএনকে জানিয়েছেন, হামাসের যোদ্ধা নিয়মিত অভিযানে অনেক কমে গেছে। তাই গাজায় কৌশলগত পদ্ধতি প্রয়োগ করে কোনো লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না। অর্থাৎ আলোচনার উপযুক্ত মঞ্চ তৈরি হয়েছে। যদি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দাবিতে আলোচনা ভেস্তে না যায়, তাহলে আগামী সপ্তাহেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হতে পারে।
গাজায় কি আবারও ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি
আজ পবিত্র আশুরা শোক ও ত্যাগের মহিমাময় দিন
আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। মুসলিম বিশ্বে এক শোকাবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। আরবিতে ‘আশারা’ অর্থ দশ। সেখান থেকেই মহররমের ১০ তারিখকে ‘আশুরা’ বলা হয়। সৃষ্টির শুরু থেকে নানা ঐতিহাসিক ঘটনার কারণে হিজরি মহররম মাসের দশম দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনে আল্লাহ তায়ালা হজরত মুসা (আ.) ও তার অনুসারীদের ফেরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন এবং ফেরাউনকে নীল নদে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এই দিনেই আল্লাহ আরশ, কুরসি, লওহ, কলম, আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। হজরত আদম (আ.)-কে এই দিনেই সৃষ্টি করা হয় এবং শয়তানের প্ররোচনায় ভুল করার পর তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয় এবং পরে আল্লাহর প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়। এ ছাড়া হজরত নূহ (আ.)-এর মহাপ্লাবনের পর নৌকা এই দিনেই নোঙর করে। হজরত ইব্রাহিম (আ.) শত বিধিনিষেধের মধ্যে এই দিনেই জন্মগ্রহণ করেন। এই দিনেই কারবালার প্রান্তরে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার সঙ্গীরা শাহাদাত বরণ করেন, যা বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের কাছে শোক ও ত্যাগের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরাও আজ নামাজ, রোজা, ইবাদত বন্দেগি, দান-খয়রাত ও জিকির-আসকারের মাধ্যমে দিনটি অতিবাহিত করবেন। শিয়া সম্প্রদায় রাজধানীতে তাজিয়া মিছিল বের করবে। দিনটি উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ সারা দেশে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল হবে। আজ সরকারি ছুটির দিন। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণী দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা তার বাণীতে বলেন, পবিত্র আশুরা জুলুম ও অবিচারের বিপরীতে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মানবজাতিকে শক্তি ও সাহস জোগায়। তিনি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও অব্যাহত অগ্রগতি কামনা করেন। অন্যদিকে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন। তারেক রহমান তার বাণীতে বলেন, ‘ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার ঘনিষ্ঠজনদের আত্মদানের চেতনায় দেশে ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে, কোনোভাবেই যাতে নির্দয় অত্যাচারীর অভ্যুদয় না ঘটে, সেজন্য ইমাম বাহিনীর যুদ্ধ আমাদের সব সময় প্রতিরোধের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ করবে। আমি শহীদ হজরত ইমাম হোসাইন (রা.), তার শহীদ পরিবার ও সঙ্গীদের শাহাদাতের স্মরণে তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং রুহের মাগফিরাত কামনা করি।’ বায়তুল মোকাররমে বিশেষ দোয়া মাহফিল: পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আজ বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ‘পবিত্র আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। মদিনাতুল উলুম মডেল ইনস্টিটিউট মহিলা কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা মো. মুজির উদ্দিন আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন এবং দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ এতে সভাপতিত্ব করবেন। এ ছাড়া সারা দেশে মসজিদগুলোতে আশুরার তাৎপর্য ও মহিমা নিয়ে বিশেষ দোয়া করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাজিয়া মিছিল ও নিরাপত্তা পুলিশের নির্দেশনা: প্রতি বছরের মতো এবারও শিয়া সম্প্রদায় রাজধানীর পুরান ঢাকার হোসেনী দালান থেকে তাজিয়া মিছিল বের করবে। এ নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) থেকে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি বহন এবং আতশবাজি ও পটকা ফোটানো সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানানো হয় গণবিজ্ঞপ্তিতে। ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মো. সরওয়ার জানান, পুরান ঢাকার হোসেনী দালান, ইমামবাড়া, বড় কাটরা, মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্প, শিয়া মসজিদ, বিবিকা রওজা, মিরপুর পল্লবী বিহারী ক্যাম্পসহ পবিত্র আশুরা পালিত হয়—এমন সব স্থানে পর্যাপ্ত পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ইমামবাড়াগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে এবং যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটগুলো প্রস্তুত থাকবে। তাজিয়া মিছিল চলাকালে যানজট এড়াতে বিকল্প রাস্তা ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
আজ পবিত্র আশুরা শোক ও ত্যাগের মহিমাময় দিন
মুরাদনগরের ৩ খুনে নেতৃত্বে ছিলেন চেয়ারম্যান-মেম্বার
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ ও বাচ্চু মেম্বারের নেতৃত্বে লোকজন বাড়ি ঘেরাও করে। এরপর নির্মমভাবে পেটানো হয় মা রোকসনা আক্তার রুবিকে। মাকে বাঁচাতে এসেছিলেন মেয়ে তাসফিয়া আক্তার জোনাকি, রুমা আক্তার ও ছেলে রাসেল মিয়া। তাদেরও নির্মমভাবে পেটানো হয়। তারা লুটিয়ে পড়লেও মন গলেনি হামলাকারীদের। একপর্যায়ে লোকজন তাদের এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এতে মৃত্যু হয় মা ও দুই সন্তানের। আরেক সন্তান রুমা হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। গত বৃহস্পতিবার কুমিল্লার মুরাদনগরের আকুবপুর ইউনিয়নের কড়ইবাড়ি গ্রামে মব সৃষ্টি করে তিনজনকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় উঠে এসেছে নৃশংসতার তথ্য। গত শুক্রবার রাতে নিহত রুবির আরেক মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে বাঙ্গরা বাজার থানায় এ মামলা করেন। এতে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২০ থেকে ২৬ জনকে আসামি করা হয়। চাঞ্চল্যকর ওই ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিয়েছে। এর মধ্যে গতকাল ভোরে এজাহারভুক্ত বাবুল মিয়া (৫০) ও ছবির মিয়াকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। তাদের থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরা ঢাকায় আত্মগোপনে থাকা আরও ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেন। বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’ এদিকে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে কড়ইবাড়ি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, মুরাদনগর-নবীনগর সড়কের কড়ইবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রুবির বাড়ির পাশে একটি ওষুধের দোকান থেকে স্থানীয় এক শিক্ষকের মোবাইল ফোন চুরি হয়। অভিযোগ ওঠে, বোরহান উদ্দিন ওরফে মারুফ নামের এক তরুণ ওই ফোনটি চুরি করেছে। ওই তরুণ রুবির মেয়ে জোনাকির স্বামী মনির হোসেনের সঙ্গে মাদকের কারবার করে। মোবাইল ফোন চুরির ঘটনায় মঙ্গলবার স্থানীয় আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার বাচ্চু মিয়া ও স্থানীয় বাছির উদ্দিনের নেতৃত্ব মারুফকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিতে যান রুবি। সেখানে বাচ্চু-বাছিরসহ অন্যদের সঙ্গে রুবি ও তার পক্ষের লোকজনের বাগবিতণ্ডা এবং একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। ওই ঘটনাকে ঘিরে পরদিন বুধবারও দুপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এসব নিয়ে দুপক্ষে উত্তেজনা চলছিল। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার সকালে কড়ইবাড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রুবির বাড়িতে লোকজন নিয়ে যান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া। তখনো তাদের সঙ্গে রুবি ও তার মেয়েদের বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের লোকজন মিলে হামলা শুরু করে। ঘটনাস্থলেই রুবি তার ছেলে রাসেল ও মেয়ে জোনাকির মৃত্যু হয়। শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে তিনজনের মরদেহ বুঝে নেন নিহত জোনাকি আক্তারের স্বামী মনির হোসেন। ওইদিন সন্ধ্যায় গ্রাম পুলিশের সহায়তায় তিনটি কবর খোঁড়া হয়। গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়ায় জানাজায়ও ইমামসহ ৮ থেকে ৯ জন উপস্থিত ছিলেন। পরে রাতেই দাফন শেষ হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক আবু তাহের ভূঁইয়া কালবেলাকে বলেন, ‘সুরতহাল প্রতিবেদনে রোকসানা আক্তার রুবি ও ছেলে রাসেলের মাথা বেশি থেঁতলানো ছিল। মেয়ে রুমা আক্তারসহ তিনজনের মাথা ও শরীরেই কোপ ও লাঠির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’ গ্রেপ্তার অন্য ছয়জন হলো ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বাচ্চু মিয়া, রবিউল আওয়াল, আতিকুর রহমান (৪২), মো. বায়েজ মাস্টার (৪৩), দুলাল (৪৫) ও আকাশ (২৪)। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল ও একটি টর্চ লাইট উদ্ধার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘মূলত একটি মোবাইল ফোন চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।’
মুরাদনগরের ৩ খুনে নেতৃত্বে ছিলেন চেয়ারম্যান-মেম্বার
শ্রীলঙ্কার ‘মিরপুর’ জয় মিরাজদের
শ্রীলঙ্কার ‘মিরপুর’ জয় মিরাজদের
খরচে ষোলোআনা ফল শূন্য
খরচে ষোলোআনা ফল শূন্য
বিশেষ সহকারী
দুদককে থামিয়ে দিতে বিশেষ সহকারীর চিঠি
গাজা ধ্বংসে ইসরায়েলের নতুন কূটকৌশল
গাজা ধ্বংসে ইসরায়েলের নতুন কূটকৌশল