শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

গাজায় ক্ষুধা ‘দুর্ভিক্ষ’ নয়, বরং পরিকল্পিত যুদ্ধকৌশল

ফুয়াদ আবু সাইফ, ফিলিস্তিনি গবেষক ও পরিবেশকৃষি বিশেষজ্ঞ
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫, ০৪:৪৪ পিএম
ত্রাণ সংস্থার দেওয়া খাবার সংগ্রহ করছে গাজাবাসী। ছবি : সংগৃহীত
ত্রাণ সংস্থার দেওয়া খাবার সংগ্রহ করছে গাজাবাসী। ছবি : সংগৃহীত

গাজা উপত্যকায় চলমান মানবিক বিপর্যয়কে সাধারণ দুর্ভিক্ষ বা যুদ্ধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে না দেখে এটিকে একটি সুপরিকল্পিত যুদ্ধকৌশল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ফিলিস্তিনি গবেষক ও পরিবেশকৃষি বিশেষজ্ঞ ফুয়াদ আবু সাইফ। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ফিলিস্তিনিদের খাদ্য ও জীবনধারণের উপকরণকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে ইসরায়েল একটি কাঠামোগত গণহত্যার পথে আগাচ্ছে।

এক নিবন্ধে তিনি বলেন, গাজায় এখন যে দুর্ভিক্ষ চলছে, তা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ব্যর্থ রাষ্ট্রের ফল নয়। এটি একটি চলমান অপরাধ এবং এটি বিশ্বের সামনেই সংঘটিত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বরাত দিয়ে আবু সাইফ জানান, গাজার ৯৫ শতাংশের বেশি কৃষিজমি ইতিমধ্যেই ধ্বংস হয়েছে অথবা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে খাদ্য উৎপাদনের স্বনির্ভরতা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। তার দাবি, এটি কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, বরং এটি একটি জাতির স্বাধীনভাবে বাঁচার সক্ষমতাকে নষ্ট করার প্রচেষ্টা।

গবেষকের ভাষায়, ইসরায়েল এখন আর শুধু সামরিক হামলায় সীমাবদ্ধ নেই। বরং খাদ্য, পানি ও কৃষিজ উৎপাদনের উপায়গুলোকে টার্গেট করে গাজাবাসীর জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলছে ইসরায়েল। তিনি বলেন, শস্য সরবরাহ বন্ধ, পানি পরিকাঠামোয় হামলা, কৃষক ও জেলেদের ওপর আগ্রাসন- এসবই একটি বৃহৎ কৌশলের অংশ। আর এর উদ্দেশ্য ফিলিস্তিনিদের সমাজ ও অর্থনীতিকে ভেঙে ফেলা।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা নিয়েও তার লেখায় প্রশ্ন তুলেন তিনি। তার অভিযোগ, আন্তর্জাতিক মহলের নির্লিপ্ততা ও অস্পষ্ট কূটনৈতিক বিবৃতির ফলে ক্ষুধাকে একটি বৈধ যুদ্ধকৌশল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

ফুয়াদ আবু সাইফ বলেন, ‘যখন খাদ্যপণ্য- যেমন ময়দা, শিশু খাদ্য বা বোতলজাত পানি সরবরাহকে রাজনৈতিক দরকষাকষির অংশ করা হয়, তখন তা ‍আর শুধুমাত্র মানবিক সংকট থাকে না। তখন সেটি হয়ে ওঠে নির্দয় রাজনৈতিক শর্ত চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যম মাত্র।

ক্ষুধাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত হবে ‘নিয়েলেনি গ্লোবাল ফোরাম’-এর তৃতীয় সম্মেলন। এতে বিশ্বজুড়ে কৃষক, জেলে ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের নেতারা অংশ নেবেন। সাইফের দাবি, ‘আমরা চাই এমন একটি বিশ্ব গড়ে তুলতে, যেখানে খাদ্য কখনোই যুদ্ধের হাতিয়ার হবে না।’

আবু সাইফ বলেন, ‘ইতিহাস গাজার ঘটনা মনে রাখবে। মনে রাখবে, কারা মুখ খুলেছিল আর কারা চুপ ছিল। বিচার হয়তো বিলম্বিত হবে, কিন্তু বিচার হবেই।’

সূত্র: ‍আলজাজিরা

মন্তব্য করুন

এরই মধ্যে ‘মধ্যপ্রাচ্যকে বদলে দিয়েছে ইসরায়েল’
এরই মধ্যে ‘মধ্যপ্রাচ্যকে বদলে দিয়েছে ইসরায়েল’
গাজা থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা
গাজা থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা
নেতানিয়াহুর ওপর খেপলেন ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী
নেতানিয়াহুর ওপর খেপলেন ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী
রকেটচালিত গ্রেনেড দিয়ে লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা
রকেটচালিত গ্রেনেড দিয়ে লোহিত সাগরে জাহাজে হামলা