বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২
আলজাজিরার প্রতিবেদন

বাংলাদেশে ‘এক কিডনির গ্রাম’

কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৪:৩১ পিএম
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৪:৪৭ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার বাইগুনি গ্রামে নিজের আধা-নির্মিত ইটের বাড়ির সামনে বসে আছেন ৪৫ বছর বয়সী সফিরুদ্দিন। পেটের ডান পাশে হালকা চাপ দিলে এখনো তীব্র ব্যথা অনুভব করেন তিনি। সেই অস্ত্রোপচারের চিহ্ন আজও শরীরে বহন করছেন সফিরুদ্দিন।

শুক্রবার (০৪ জুলাই) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এই বিশেষ রিপোর্টটি করেছেন জয়তী ঠাকুর, আমিনুল ইসলাম মিঠু ও হানান জাফর।

২০২৪ সালে পরিবারের অভাব দূর করতে এবং তিন সন্তানের জন্য একটি ঘর তৈরির আশায় সফিরুদ্দিন নিজের একটি কিডনি বিক্রি করেন ভারতের এক ব্যক্তির কাছে। বিনিময়ে তিনি পেয়েছিলেন সাড়ে তিন লাখ টাকা। তবে সেই অর্থ অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে। বাড়ির নির্মাণকাজ থেমে আছে দীর্ঘদিন ধরে। আর প্রতিদিনের শরীরের যন্ত্রণা তাকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়- সেই সিদ্ধান্ত কতটা ভয়ংকর ছিল।

বর্তমানে জয়পুরহাটের একটি হিমাগারে দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন সফিরুদ্দিন। অস্ত্রোপচারের পর দুর্বল হয়ে পড়া শরীর নিয়ে প্রতিদিনের পরিশ্রম এখন তার জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ‘আমি সব করেছি আমার স্ত্রী আর সন্তানদের জন্য।’

শুরুতে ভয় থাকলেও, দালালদের আশ্বাসে ধীরে ধীরে রাজি হয়ে যান তিনি। পাসপোর্ট, ভিসা, বিমানযাত্রা থেকে শুরু করে হাসপাতালের যাবতীয় কাগজপত্র- সবই প্রস্তুত করে দেয় দালালচক্র। যদিও সফিরুদ্দিন মেডিকেল ভিসায় ভারতে যান, হাসপাতালের কাগজপত্রে তাকে দেখানো হয় ‘রোগীর আত্মীয়’ হিসেবে। এমনকি তার জন্য জাল পরিচয়পত্র, ভুয়া জন্মনিবন্ধন ও নোটারি সনদপত্রও তৈরি করা হয়। আর যার শরীরে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, সেই ব্যক্তির পরিচয় আজও অজানা সফিরুদ্দিনের কাছে।

ভারতের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, কিডনি প্রতিস্থাপন শুধু নিকটাত্মীয়দের মধ্যেই অনুমোদিত। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন থাকলে আত্মীয় নন এমন যে কেউ কিডনি দান করতে পারেন। কিন্তু এই আইনি প্রক্রিয়াকে ফাঁকি দিয়ে দালালচক্র ভুয়া পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি করে কিডনি প্রতিস্থাপনের পথ সুগম করে। কখনো কখনো তৈরি করা হয় ভুয়া ডিএনএ রিপোর্টও।

এ বিষয়ে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অঙ্গসংগঠন ‘অর্গান ট্রান্সপ্লানটেশন টাস্কফোর্স’-এর সদস্য ড. মনিরুজ্জামান বলেন, এই প্রতারণার পদ্ধতিগুলো প্রায় একই রকম। নাম পরিবর্তন, ভুয়া নোটারি সনদ, আত্মীয় হিসেবে প্রমাণের জন্য জাল জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।

কালাই উপজেলার বাইগুনি গ্রামে সফিরুদ্দিনের গল্পটি আলাদা কিছু নয়। প্রায় ছয় হাজার মানুষের এই গ্রামে এত বেশি সংখ্যক মানুষ কিডনি বিক্রি করেছেন যে, স্থানীয়ভাবে জায়গাটি পরিচিত হয়ে উঠেছে ‘এক কিডনির গ্রাম’ নামে।

২০২৩ সালে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল গ্লোবাল হেলথ-এ প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, কালাই উপজেলায় প্রতি ৩৫ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে একজন কিডনি বিক্রি করেছেন। অধিকাংশ বিক্রেতাই ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী পুরুষ, যারা চরম দারিদ্র্যের মুখে পড়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। কেউ কেউ ঋণের চাপে, কেউবা মাদকাসক্তি কিংবা জুয়ায় আসক্তির কারণেও এ পথ বেছে নিয়েছেন।

সফিরুদ্দিন জানান, অপারেশনের পর দালালরা তার পাসপোর্ট, প্রেসক্রিপশনসহ কোনো কাগজপত্রই ফিরিয়ে দেয়নি। প্রয়োজনীয় ওষুধও জোটেনি তার। অস্ত্রোপচারের পরপরই কোনো চিকিৎসা বা পর্যবেক্ষণ ছাড়াই তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অনেক সময় দালালরা বিক্রেতাদের কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো প্রমাণ রাখে না- যাতে ভবিষ্যতে তারা চিকিৎসা দাবি কিংবা আইনি অভিযোগ তুলতে না পারেন।

এই অঙ্গগুলো মূলত বিক্রি হয় ভারতের ধনী কিডনি রোগীদের কাছে- যারা বৈধ প্রক্রিয়ায় প্রতিস্থাপনের দীর্ঘ অপেক্ষা এড়িয়ে দ্রুত সমাধান খুঁজে নিতে চান। ভারতে ২০২৩ সালে মাত্র ১৩ হাজার ৬০০টি কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে, অথচ প্রতি বছর দেশটিতে প্রায় দুই লাখ মানুষ চূড়ান্ত পর্যায়ের কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। এই চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধানই গোপন বাজার এবং দালালচক্রকে আরও সক্রিয় করে তুলেছে।

ব্র্যাকের অভিবাসন প্রোগ্রামের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান বলেন, ‘কিছু মানুষ জানাশোনা সত্ত্বেও কিডনি বিক্রি করেন, তবে অনেকেই প্রতারিত হন।’

অনেক সময় কিডনি বিক্রির অর্থও পুরোপুরি হাতে পান না বিক্রেতারা। যেমন মোহাম্মদ সাজল (ছদ্মনাম), যিনি ২০২২ সালে দিল্লির ভেঙ্কটেশ্বর হাসপাতালে ১০ লাখ টাকার চুক্তিতে নিজের কিডনি বিক্রি করেন। তবে প্রতিশ্রুত অর্থের বদলে তিনি পান মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকা। প্রতারিত হয়ে হতাশ সাজল শেষ পর্যন্ত সেই দালালচক্রের সঙ্গেই জড়িয়ে পড়েন- বাংলাদেশ থেকে কিডনি বিক্রেতা খুঁজে বের করে তাদের ভারতে পাঠাতে থাকেন।

তবে টাকার ভাগাভাগি নিয়ে দালালদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে কিছুদিন পর তিনি চক্রটি থেকে সরে আসেন। এখন ঢাকায় রাইড শেয়ারিং ড্রাইভার হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। কিন্তু অতীতের সেই প্রতারণা ও অনুশোচনার অভিজ্ঞতা আজও তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।

অন্যদিকে, যেসব হাসপাতাল এই অবৈধ কিডনি প্রতিস্থাপনের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এখনো ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কোনো সমন্বিত তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবস্থা নেই। এমনটা জানিয়েছেন ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনসুলার বিভাগের মহাপরিচালক শাহ মুহাম্মদ তানভির মনসুর। তার মতে, অনেক সময় ভারতের হাসপাতালগুলো দায় এড়িয়ে এমন যুক্তি দেখায় যে, তারা প্রাপ্ত কাগজপত্র যাচাই করেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

তবে ড. মনিরুজ্জামান বলেন, ভারতের অনেক হাসপাতালই জেনে-বুঝেই জাল কাগজ গ্রহণ করে। কারণ ‘অধিক কিডনি প্রতিস্থাপন মানে অধিক আয়’। ভারতের হাসপাতালগুলো বছরে কয়েক হাজার বিদেশি রোগীকে চিকিৎসা দেয়, যা দেশটির ৭.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মেডিকেল ট্যুরিজম শিল্পের অংশ।

২০১৯ সালে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিডনি পাচার চক্র নিয়ে তদন্ত শুরু করলে কিছু চিকিৎসক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০২৪ সালে দিল্লিতে গ্রেপ্তার হন ড. বিজয়া রাজাকুমারি- যিনি ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে অন্তত ১৫ বাংলাদেশির কিডনি প্রতিস্থাপন করেছিলেন। তবে, এসব তদন্ত ও আইনি পদক্ষেপ ছিল বিচ্ছিন্ন ও খণ্ডিত। ফলে পুরো ব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত কোনো পরিবর্তন আসেনি। দালালচক্র ও অসাধু হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে সমন্বিত, কঠোর ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপের অভাবে এই অবৈধ বাণিজ্য এখনো অব্যাহত রয়েছে।

দালাল মিজানুর রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী, একটি কিডনি প্রতিস্থাপনে মোট খরচ পড়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। কিন্তু কিডনি বিক্রেতারা এর মধ্যে মাত্র ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা হাতে পান। বাকি অর্থ ভাগ হয়ে যায় দালাল, ভুয়া কাগজপত্র তৈরিতে জড়িত কর্মকর্তারা, কিছু অসাধু চিকিৎসক এবং হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে।

তিনি জানান, অনেক সময় সরাসরি কিডনি বিক্রির কথা না বলে ‘ভালো কাজের’ প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে এই চক্রে ফাঁসানো হয়। কেউ কেউ কাজের সন্ধানে ভারতে গিয়ে অপারেশনের শিকার হন, এরপর আর কোনো সহায়তা না পেয়ে সেখানেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকেন।

ভারতের কিডনি ওয়ারিয়র্স ফাউন্ডেশনের প্রধান বাসুন্ধরা রঘুবংশ বলেন, আইন থাকলেও বাস্তবে এটি একটি কালোবাজারে পরিণত হয়েছে। যেহেতু কিডনির চাহিদা অব্যাহত রয়েছে, সেহেতু এই ব্যবসাও থেমে নেই। তিনি মনে করেন, অঙ্গ দানের সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা সম্ভব না হলে, একটি সুশৃঙ্খল ও মানবিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। যেখানে কিডনি বিক্রেতাদের জন্য বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য পরীক্ষা, অস্ত্রোপচারের পর দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা সুবিধা এবং আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

বাইগুনি গ্রামে সফিরুদ্দিন এখনো অর্ধনির্মিত বাড়ির বারান্দায় বসে ভাবেন, কবে তার সেই স্বপ্নের ঘর পূর্ণ হবে। তিনি ভেবেছিলেন, এই পথ হয়তো পরিবারের জন্য একটুখানি স্বস্তি বয়ে আনবে। কিন্তু আজ তিনি একাকী, অসুস্থ এক পিতা, যার পাশে থাকার কেউ নেই। কণ্ঠে শুধু একটাই তিক্ততা- ‘তারা আমার কিডনি নিয়েছে, আর আমাকে ফেলে চলে গেছে।’

মন্তব্য করুন

‘কার্টফেল ক্যোনিগ’ জার্মানির আলুর কিংবদন্তি
জার্মানির খাদ্যসংস্কৃতির অন্যতম প্রধান চরিত্র ‘কার্টফেল’, সহজ ভাষায় আমরা যাকে আলু বলেই চিনে থাকি। কিন্তু এই সাধারণ আলুর পেছনে লুকিয়ে আছে এক মজার ইতিহাস আর কিছু জনপ্রিয় কল্পকাহিনী, যা আজও জার্মানদের মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায়। আলুর ‘রাজা’ ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেট অনেকেই মনে করেন, প্রুশিয়ার রাজা ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেটই জার্মানিতে প্রথম আলু এনেছিলেন। কাহিনি বলে, তিনি আলুর বাগান পাহারা দিয়ে সাধারণ মানুষকে উসকে দেন আলু ‘চুরি’ করতে। যাতে তারা আলুর গুরুত্ব বুঝতে পারে। তাই তাকে বলা হয় ‘কার্টফেল ক্যোনিগ’ বা আলুর রাজা। কিন্তু ইতিহাসবিদেরা এই গল্পকে মিথ্যে বলে আখ্যায়িত করেন। ইতিহাস বলে, রাজা ফ্রেডেরিক নিজেই কখনো আলু খেতেন না, আর আলু জনপ্রিয়তা পায় তার মৃত্যুর অনেক পরে। প্রকৃতপক্ষে, আলু আসে ১৬৫০-এর দশকে, তার প্রপিতামহের সময়ে। আর আলু জার্মান জনসাধারণের মুখে ঘর করে নেয় ১৮১৫ সালে, নেপোলিয়নিক যুদ্ধের পর। যদিও ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেটের গল্প সঠিক না, তবুও সে কাহিনি জার্মানরা এখনও মানে। আজও প্রুশিয়ার প্রাসাদের পাশে আলু আর কাগজের মুকুট রাখা হয়, আর দোকানে পাওয়া যায় নানা আলু সম্পর্কিত উপহারসামগ্রী। এটি ইতিহাসের সঙ্গেই জার্মান সংস্কৃতির এক চমৎকার মিলনস্থান। বহু আগে থেকেই জার্মানির রান্নায় আলু কোনো সাধারণ সবজি নয়, বরং একটি প্রধান খাদ্যের অংশ। সালাদ থেকে শুরু করে কেক, ডাম্পলিং থেকে প্যানকেক- প্রায় সবখানেই আলুর ব্যবহার। অনেক পরিবারের নানি-দাদি থেকে শুরু করে আজকের প্রজন্ম পর্যন্ত আলুর রেসিপি প্রজন্মান্তরে চলে এসেছে। জার্মানিতে আলু দিয়ে বানানো মিষ্টি কেকও খুবই জনপ্রিয়। আলু আর গাজরের সংমিশ্রণে তৈরি এই কেকটি শুধু সুস্বাদু না বরং তার সঙ্গে জার্মানির ঐতিহ্যেরও অংশ।  ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেট হয়তো বাস্তবে আলুর রাজা ছিলেন না, তবে তার নামের সঙ্গে গাঁথা আলুর গল্প ও ভালোবাসা আজও জার্মানদের হৃদয়ে গেঁথে আছে। ইতিহাসের অনেক গল্পই কল্পকথা, তবে দৈনন্দিন জার্মান জীবনে আলুর স্থান সত্যিই অমোঘ। তাই আজও কার্টফেল ক্যোনিগের গল্প শুনলে একটু হাসি থেমে যায়, আর আলুর প্রতি শ্রদ্ধা আরও বেড়ে যায় জার্মানদের । 
‘কার্টফেল ক্যোনিগ’ জার্মানির আলুর কিংবদন্তি
ব্রিকসের দেশগুলোর ওপর আরও ১০ শতাংশ শুল্কের হুমকি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রিকস জোটের সহযোগীদের ওপর নতুন করে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। সোমবার (৭ জুলাই) এ ঘোষণা দেন তিনি। খবর শাফাক নিউজের। ট্রাম্প বলেন, ব্রিকসের ‘অ্যান্টি-আমেরিকান’ নীতিগুলোর সমর্থনে থাকা কোনো দেশের জন্য কোনো ছাড় থাকবে না। তবে তিনি সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেননি, কোন নীতিগুলোর কারণে এ সিদ্ধান্ত। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরিওতে অনুষ্ঠিত ব্রিকসের বার্ষিক সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণার পর এ মন্তব্য আসে। সম্মেলনে ব্রিকস সদস্যরা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) কেন্দ্রিক, নিয়মভিত্তিক, স্বচ্ছ ও বৈষম্যহীন বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থার প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। ওয়াশিংটনে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেনসেন্টও নিশ্চিত করেছেন, আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হবে। তবে নির্দিষ্ট দেশগুলো যদি তার আগেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছায়, তাহলে এ শুল্ক এড়ানো যাবে। এর আগে গত এপ্রিলেই ট্রাম্প ১০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছিলেন। যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রাখছে তাদের বিরুদ্ধে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে সে সময় আলোচনার সুযোগ রেখে চূড়ান্ত সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ জুলাই। নতুন এ শুল্ক নীতি ব্রিকস জোটভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্কে নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ব্রিকসের সদস্য দেশগুলো হলো ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
ব্রিকসের দেশগুলোর ওপর আরও ১০ শতাংশ শুল্কের হুমকি
মেটার একজন এআই প্রকৌশলীর এত আয়!
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) আজকের প্রযুক্তিনির্ভর দুনিয়ায় উদ্ভাবনের মূল শক্তিতে পরিণত হয়েছে। স্মার্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট চালানো, পছন্দের কনটেন্ট সাজিয়ে দেওয়া, কিংবা ভার্চুয়াল দুনিয়ায় বাস্তব অভিজ্ঞতা তৈরি করা—সব কিছুর পেছনেই আছে এআই। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠছে নতুনভাবে। আর এই পরিবর্তনকে সবচেয়ে জোরেশোরে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মেটা। আগে যার নাম ছিল ফেসবুক, সেই মেটা এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেটাভার্সে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। তাদের লক্ষ্য— যেভাবে আমরা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করি, কাজ করি এবং বিনোদন উপভোগ করি, তা সম্পূর্ণ বদলে দেওয়া। এই প্রযুক্তিগুলো শুধু ভবিষ্যৎ নয়; বরং বিশ্বব্যাপী আমাদের জীবনের অংশ হয়ে উঠছে এখনই।  টেক জগতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম মেটা। এখানে কাজ করে বিশ্বের সেরা এআই প্রকৌশলী দল। শুধু বিশ্বের পরিবর্তন করার প্রযুক্তি তৈরি করেন না, তারা পান দারুণ বেতন-ভাতাও, যা শুনলে অনেকেরই চোখ কপালে উঠবে। মেটার এআই প্রকৌশলীরা মূলত কাজ করেন ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং, কম্পিউটার ভিশন ও আধুনিক ডিপ লার্নিং মডেলের মতো জটিল ক্ষেত্রে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা তৈরি করেন কন্টেন্ট রিকমেন্ডেশন, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও অন্যান্য সেবা, যা কোটি কোটি মানুষের দৈনন্দিন জীবন প্রভাবিত করে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এইচ-১বি ভিসা সংক্রান্ত নথি থেকে জানা গেছে, মেটার একজন শীর্ষ এআই গবেষণা প্রকৌশলী বছরে ৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার পর্যন্ত বেসিক বেতন পান। শুধু তাই নয়, বিশেষ করে এআই ও প্রযুক্তি গবেষণাভিত্তিক পদে কর্মরত সিনিয়রদের মেটা বড় অঙ্কের স্টক গ্রান্টও দিয়ে থাকে, যা তাদের মোট উপার্জনকে আরও বাড়িয়ে তোলে।  বেসিক বেতনে মেটার এআই প্রকৌশলীরা পেতে পারেন বছরে ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। তবে, বোনাস ও শেয়ার অপশন যোগ করলে এই আয় বেড়ে যায় অনেকগুণ। এন্ট্রি-লেভেলের প্রকৌশলীদের মোট আয় দাঁড়াতে পারে বছরে ১ রাখ ৮০ হাজার ডলারের বেশি। মাঝারি অভিজ্ঞতার প্রকৌশলী বছরে পেতে পারেন ১ লাখ ৬০ হাজার থেকে ২ লাখ ২০ হাজার ডলার বেতন, আর মোট আয় বোনাস ও স্টক অপশনসহ হতে পারে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলারেরও ওপরে। সিনিয়র এআই প্রকৌশলী এবং গবেষকরা মেটায় উপার্জন করেন ৩ লাখ ডলারেরও বেশি, যেখানে বোনাস ও স্টক গ্রান্টগুলো মূল আয়কে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। মেটার এই বেতন কাঠামো শুধু বেসিক বেতনের ওপর নির্ভর করে না; বরং কোম্পানির সঙ্গে প্রকৌশলীদের দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক নিশ্চিত করতে স্টক অপশন ও আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়। এতে প্রকৌশলীরা মেটার ব্যবসায়িক সাফল্যের সঙ্গে যুক্ত থাকেন এবং কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধির সুফল পান। বেতনের পাশাপাশি মেটা এআই প্রকৌশলীদের দেয় এমন এক পরিবেশ যেখানে তারা নতুন গবেষণা ও প্রযুক্তির বাস্তব প্রয়োগ একসাথে করতে পারেন। সেরা মেধাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে এআই প্রকৌশলীরা তৈরি করেন ভবিষ্যতের প্রযুক্তি, যা বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবনযাত্রা বদলে দিচ্ছে। সারসংক্ষেপে, মেটায় এআই প্রকৌশলী হওয়া মানে টেক ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সেরা আর্থিক সুবিধা পাওয়া। শুরু থেকে সিনিয়র স্তর পর্যন্ত মেটার বেতন ও সুযোগ-সুবিধা প্রমাণ করে, তারা শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিভাকে আকৃষ্ট ও ধরে রাখার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। তাই যখনই বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বা এআই নিয়ে ভাববেন, মনে রাখবেন মেটার এআই প্রকৌশলীদের আয় অনেকটাই আপনার ধারণার বাইরে। 
মেটার একজন এআই প্রকৌশলীর এত আয়!
শুধু মানুষ নয়, পশুপাখিও চিন্তা করে যুক্তি দিয়ে
আমরা অনেক সময়ই মানুষকে ‘যুক্তিবাদী প্রাণী’ হিসেবে ব্যাখ্যা করে থাকি। কিন্তু নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন এক তথ্য, যা প্রচলিত এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে নিঃসন্দেহে। গবেষকরা বলছেন-  শুধু মানুষই নয়, পশুপাখিরাও যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে পারে। যুক্তি দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া, সমস্যা সমাধান করা এবং পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আচরণ পরিবর্তনের সক্ষমতা রয়েছে অনেক প্রাণীর মধ্যেই। সম্প্রতি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন একটি প্রাণীবিজ্ঞান গবেষণা দল পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর উপর একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা পরিচালনা করে। তাদের গবেষণায় দেখা যায়, কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে পশুপাখিরা এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা কেবল 'ইনস্টিংক্ট' বা সহজাত প্রবৃত্তির কারণে নয়, বরং চিন্তাভাবনা ও পূর্ব অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে নেওয়া হয়েছে। যেমন, ইউরোপীয় শিকারি পাখি ‘নিউ ক্যালেডোনিয়ান কাক’ নিয়ে করা পরীক্ষায় দেখা যায়, তারা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে খাদ্য সংগ্রহে সক্ষম। এমনকি তারা কোনো সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন উপায় যাচাই করে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি বেছে নেয়। এটা সরাসরি ‘কারণ ও ফলাফল’ বোঝার সক্ষমতাকে নির্দেশ করে। ‘যুক্তিবোধ’ কেবল মানুষের সম্পত্তি নয় গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়, যুক্তিবোধ বা ‘লজিক্যাল থিংকিং’ এখন আর কেবল মানুষের একচেটিয়া সম্পদ বলে বিবেচিত হতে পারে না। শিম্পাঞ্জি, ডলফিন, এমনকি কিছু মাছও পরিস্থিতি বুঝে ভিন্ন আচরণ করে। যেমন, অস্ট্রেলিয়ার একদল গবেষক দেখিয়েছেন যে অক্টোপাস নিজের আশ্রয় গঠনের জন্য নারকেলের খোলস সংগ্রহ করে রাখে এবং সেটা ভবিষ্যতে ব্যবহার করে। এটি পরিকল্পিত চিন্তার এক নিদর্শন। মস্তিষ্কের গঠন ও বুদ্ধিমত্তা গবেষকদের মতে, প্রাণীদের যুক্তি দিয়ে চিন্তা করার পেছনে মূল কারণ তাদের মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট গঠন ও নিউরোনের জটিল যোগাযোগ ব্যবস্থা। যদিও মানুষের মস্তিষ্ক বড় এবং জটিল, তবে অনেক পাখির (যেমন কাক বা তোতা পাখি) নিউরাল কাঠামো অত্যন্ত উন্নত এবং তারা মানুষের মতোই কিছু কিছু চিন্তা করতে পারে। ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি এই গবেষণা পশুপাখির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ও আচরণে একটি মৌলিক পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে। যদি পশুপাখিরাও যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে পারে, তবে তাদের প্রতি সহানুভূতি ও অধিকারের চিন্তাও নতুনভাবে ভাবতে হবে। পশু অধিকার, পশুপ্রেম ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়গুলো আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এই গবেষণা আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায় প্রাণীজগৎ সম্পর্কে আমাদের উপলব্ধি কত সীমাবদ্ধ ছিল। যুক্তি, চিন্তা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা শুধু মানুষের নয়, প্রকৃতির আরও অনেক সৃষ্টির মধ্যেও বিদ্যমান। পশুপাখির বুদ্ধিমত্তা ও যুক্তিবোধকে সম্মান করেই আমাদের ভবিষ্যতের বিজ্ঞান, নীতিনির্ধারণ ও মানবিক আচরণ গড়ে তোলা উচিত। সূত্র : জার্নাল অব কম্পারেটিভ সাইকোলজি (২০২৫) 
শুধু মানুষ নয়, পশুপাখিও চিন্তা করে যুক্তি দিয়ে
গবেষণা জানাচ্ছে ‘কুল’ মানুষের  ৬টি বৈশিষ্ট্য
গবেষণা জানাচ্ছে ‘কুল’ মানুষের ৬টি বৈশিষ্ট্য
অঙ্কে এগিয়ে ছেলেরা, মেয়েরা কেন পিছিয়ে?
অঙ্কে এগিয়ে ছেলেরা, মেয়েরা কেন পিছিয়ে?
দীর্ঘ জীবন ও তারুণ্যের রহস্য জানালেন ১০২ বছর বয়সী চিকিৎসক
দীর্ঘ জীবন ও তারুণ্যের রহস্য জানালেন ১০২ বছর বয়সী চিকিৎসক
অস্ট্রেলিয়ায় ইহুদিদের উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ
অস্ট্রেলিয়ায় ইহুদিদের উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ